৭ জেলায় জনসংখ্যার থেকে রেশন কার্ড বেশি ৩৬ লক্ষ
রাজ্যের সাতটি জেলায় জনসংখ্যার তুলনায় রেশন কার্ডের সংখ্যা বেশি! এ বছর ১ এপ্রিল যে জনগণনা হয়েছে, তাতেই এই তথ্য উঠে এসেছে। এই সাত জেলায় জনসংখ্যার তুলনায় রেশন কার্ড বেশি ৩৬ লক্ষ! মনে করা হচ্ছে, এগুলি সবই ভুয়ো রেশন কার্ড। ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অধীনে পশ্চিমবঙ্গের জনগণনা অধিকর্তা দীপক ঘোষের রিপোর্টে এই তথ্য রয়েছে।
যে সাতটি জেলায় জনসংখ্যার তুলনায় রেশন কার্ডের সংখ্যা বেশি সেগুলি হল বর্ধমান, হুগলি, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, দার্জিলিং, হাওড়া এবং কলকাতা। ঘটনাচক্রে, এই সব ক’টি জেলাতেই জেলা পরিষদ বামেদের দখলে। কেবল তাই নয়, ২০০৯-এর লোকসভা ভোটে বামেদের বিপর্যয় ঘটলেও এর মধ্যে চারটি জেলাতে তাদের ফল ভাল হয়েছিল। বস্তুত, হাওড়া পুরসভা এখনও বামেদের দখলে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই ভুয়ো রেশন কার্ড উদ্ধারে তৎপর হয়েছেন। খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক সল্টলেকে রেশন অফিসে হানা দিয়ে একাধিক ভুয়ো কার্ড উদ্ধার করেন। সামগ্রিক ভাবে রাজ্যের জনসংখ্যার তুলনায় রেশন কার্ডের সংখ্যা ২ লক্ষ ৪০ হাজার কম। কিন্তু জনগণনার হিসাবে দেখা যাচ্ছে, সাতটি জেলায় ৩৬ লক্ষ বেশি রেশন কার্ড রয়েছে। অন্যদিকে, ১১ টি জেলায় জনসংখ্যার তুলনায় রেশন কার্ডের সংখ্যা কম। অর্থাৎ বহু মানুষের রেশন কার্ড নেই। সে কারণেই সামগ্রিক ভাবে জনসংখ্যার তুলনায় রেশন কার্ডের সংখ্যা কম হয়েছে। রাজ্যের মোট জনসংখ্যা ৯ কোটি ১৩ লক্ষ ৪৭ হাজার। আর রেশন কার্ড আছে ৯ কোটি ১১ লক্ষ ৭ হাজার।
এই ২৬ লক্ষ ভুয়ো রেশন কার্ডের সব দায় বিগত বাম সরকারের উপরে চাপিয়েছেন বর্তমান খাদ্যমন্ত্রী। জ্যোতিপ্রিয় বলেন, “আলিমুদ্দিনের নির্দেশে নির্বাচনে আগে বিভিন্ন জেলায় সিপিএম লক্ষ লক্ষ ভুয়ো রেশন কার্ড বার করেছিল। ভেবেছিল অন্য বারের মত এ বারও রেশন কার্ড দেখিয়ে ভোট দেওয়া যাবে! কিন্তু নির্বাচন কমিশন সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্র (এপিক) নিয়ে ভোট দেওয়া বাধ্যতামূলক করায় এ সব রেশন কার্ড কোনও কাজে লাগেনি!” খাদ্যমন্ত্রী জানান, এই ভুয়ো কার্ড বাতিল করতেই মুখ্যমন্ত্রী নতুন রেশন কার্ড তৈরির উপর জোর দিচ্ছেন। খাদ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘‘এখনও যাঁদের কাছে ভুয়ো রেশন কার্ড আছে, তা ফেরত দেওয়ার জন্য শীঘ্রই সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেওয়া হবে। তারপরেও যাঁরা ভুয়ো কার্ড ফেরত দেবেন না, ধরা পড়লে তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
প্রত্যাশিত ভাবেই তাদের বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ অস্বীকার করেছে সিপিএম। বিধানসভার বিরোধী দলনেতা সিপিএমের সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, “এ সব বানানো গল্প! পরিবারের সদস্যদের মৃত্যুর পর বহু মানুষ রেশন দফতরে কার্ড ফেরত দেন না। এ ছাড়া, বৈবাহিক বা কর্মসূত্রে স্থানান্তরিত হলেও পুরনো এলাকাতে রেশন কার্ড রেখে দেন। সেই কারণেই কিছু জেলায় জনসংখ্যার তুলনায় রেশন কার্ডের সংখ্যা বেশি।” তবে ভুয়ো রেশন কার্ডের সমস্যা যে রয়েছে, তা স্বীকার করে সূর্যবাবু বলেন, “আমাদের সরকারের সময়েও নানা ভাবে ভুয়ো রেশন কার্ডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ভুয়ো রেশন কার্ড বন্ধ করতে সিদ্ধান্ত হয়েছিল রেশন কার্ডে এপিক নম্বর থাকবে। সে ব্যবস্থা কিছু এলাকায় চালু হলেও সর্বত্র চালু করা সম্ভব হয়নি।”
২০০৬-এর জানুয়ারিতে সিপিএমের তৎকালীন রাজ্য সম্পাদক অনিল বিশ্বাস আলিমুদ্দিনে সাংবাদিক বৈঠক করে অভিযোগ করেছিলেন, রাজ্যে জনসংখ্যার তুলনায় রেশন কার্ডের সংখ্যা বেশি। তিনি অভিযোগের আঙুল তুলেছিলেন খাদ্য দফতরের দায়িত্বে থাকা শরিক ফরওয়ার্ড ব্লকের দিকে। তাঁর অভিযোগে রাজনৈতিক মহলে সাড়া পড়ে গিয়েছিল। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ভুয়ো রেশন কার্ড উদ্ধার ও বাতিলের নির্দেশ দিয়ে নতুন কার্ড দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন। তারপরেও আরও পাঁচ বছর মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বুদ্ধবাবু। কিন্তু রেশন কার্ড সংক্রান্ত দুর্নীতি যে অবাধে চলেছে, জনগণনার রিপোর্টেই তা পরিষ্কার।
এই পরিস্থিতিতে ‘অল ইন্ডিয়া ফেয়ার-প্রাইস শপ ডিলার্স ফেডারেশনে’র সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বিশ্বম্ভর বসু বর্তমান খাদ্যমন্ত্রীর পাশে দাঁড়াতে চেয়েছেন। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, “আমরা চাই ভুয়ো রেশন কার্ডের বিরুদ্ধে মন্ত্রী কড়া ব্যবস্থা নিন। আমরাও ব্যবস্থা নিচ্ছি। ডিলারদের বলা হচ্ছে, ভুয়ো কার্ডের সন্ধান পেলে ব্যবস্থা নিতে। সেই কার্ড জমা দিতে।” বিশ্বম্ভরবাবুর কথায়, “আমরা চাই সকলের জন্য স্বচ্ছ, দুর্নীতিমুক্ত খাদ্য ও রেশন ব্যবস্থা।” নিজের জেলা উত্তর ২৪ পরগনার উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, “জেলায় জনসংখ্যার তুলনায় ৬ লক্ষ ৭৭ হাজার রেশন কার্ড কম।”
সব চেয়ে বেশি ভুয়ো রেশন কার্ড রয়েছে কলকাতায়। সর্বশেষ জনগণনা অনুযায়ী কলকাতার জনসংখ্যা ৪৪ লক্ষ ৮৮ হাজার। আর রেশন কার্ড রয়েছে ৫৮ লক্ষ ৪০ হাজার! অর্থাৎ কলকাতাতেই ভুয়ো রেশন কার্ডের সংখ্যা ১৩ লক্ষ ৫৩ হাজার। এ ছাড়া, বর্ধমান জেলায় জনসংখ্যার তুলনায় ৫ লক্ষ ৫ হাজার রেশন কার্ড বেশি। অন্য জেলার ভুয়ো রেশন কার্ডের হিসাব এই রকম হুগলি ৪ লক্ষ ৩৪ হাজার, জলপাইগুড়ি ২ লক্ষ ৭১ হাজার, হাওড়া ১ লক্ষ ৯৩ হাজার, কোচবিহার ২ লক্ষ ৪৪ হাজার, দার্জিলিং ৫ লক্ষ ৭৪ হাজার এবং হাওড়া ১ লক্ষ ৯৩ হাজার।
কত দ্রুত নতুন সরকার এখন এই ভুয়ো কার্ড উদ্ধারে ব্যবস্থা নেয়, এখন সেটাই দেখার।
Previous Story Rajya Next Story


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.