|
|
|
|
কংগ্রেস-আইএনটিইউসি
|
মমতাকে ‘সহযোগিতা’, আক্রমণও একই দিনে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে সরকার পরিচালনায় তাঁকে ‘পূর্ণ সহযোগিতা’র আশ্বাস দিয়ে এলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য। একই দিনে ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার কেড়ে নেওয়া এবং দফতর ‘দখলদারি’র রাজনীতির জন্য তৃণমূলের বিরুদ্ধে সরব হলেন কংগ্রেসেরই শ্রমিক সংগঠন আইএনটিইউসি-র রাজ্য সম্পাদক রমেন পাণ্ডে। ঘটনাচক্রে, প্রদীপবাবুই শ্রমিক সংগঠনের রাজ্য সভাপতি। জোটসঙ্গী কংগ্রেসের প্রদেশ কমিটি এবং শ্রমিক সংগঠনের প্রধান যখন মুখ্যমন্ত্রীকে ‘সহযোগিতা’র কথা বলছেন, তখন একই সংগঠনের আর এক রাজ্য নেতা বাম শ্রমিক সংগঠনগুলির সঙ্গে একমঞ্চে ভিন্ন কথা বললেন কী করে, তা নিয়ে ‘বিস্ময়’ সৃষ্টি হয়েছে জোট-শিবিরে!
প্রদেশ সভাপতি হওয়ার পর বৃহস্পতিবারই প্রথম মুখ্যমন্ত্রী মমতার সঙ্গে দেখা করলেন প্রদীপবাবু। মহাকরণে এ দিন সন্ধ্যায় আধ ঘণ্টার ‘সৌজন্য সাক্ষাতে’র শেষে প্রদীপবাবু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী যথেষ্ট পরিশ্রম করছেন। উনি খুব ব্যস্ত। আমিও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হওয়ার পরে এই ক’দিন ওঁর সঙ্গে দেখা করার সময় পাইনি। তাই দেখা করে গেলাম।” তবে বিরোধী শিবির সূত্রের খবর, ওই সাক্ষাতে প্রদীপবাবু মমতার কাছে দু’টি আর্জি জানিয়েছেন। সরকারের বিভিন্ন স্তরে কংগ্রেস মনোভাবাপন্ন কিন্তু অরাজনৈতিক অথচ যোগ্য ব্যক্তিদের এবং বিভিন্ন স্কুল ও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালন সমিতিতে স্থানীয় কংগ্রেস বিধায়কদের যুক্ত করা যায় কি না, তা যদি মমতা দেখেন। |
|
মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে মহাকরণে প্রদেশ সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র |
পাশাপাশি, সরকার পরিচালনায় মমতাকে ‘পূর্ণ সহযোগিতা’র ব্যাপারে প্রদেশ কংগ্রেস এবং দিল্লির নেতৃত্বউভয়েরই দায়বদ্ধতা আছে বলে প্রদীপবাবু জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, “মুখ্যমন্ত্রীকে বলেছি, আমরাও সরকারের অংশ। সরকার চালাতে আমরা সব রকম সাহায্য করব। কোথাও কোথাও হয়তো দলগত সমন্বয়ের অভাব হচ্ছে। কিন্তু সেগুলিও মিটিয়ে ফেলব।” কংগ্রেস এবং তৃণমূলের মধ্যে সমন্বয়ের জন্য কোনও কমিটি গড়া হবে কি না, জানতে চাওয়া হলে প্রদীপবাবু বলেন, “কয়েকটি প্রস্তাব আছে। সেগুলি নিয়ে প্রণব মুখোপাধ্যায় এবং দলের অন্যান্য নেতা-নেত্রীর সঙ্গে কথা বলব।” তাঁদের ‘কম গুরুত্বপূর্ণ’ দফতর দেওয়া হয়েছে মনে করে কংগ্রেসের কোনও কোনও মন্ত্রী কি অসন্তুষ্ট? প্রদীপবাবুর জবাব, “আমার এ রকম কোনও তথ্য জানা নেই।”
মহাজাতি সদনে এ দিনই বাম-অবাম নির্বিশেষে বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়নের যৌথ কনভেনশনে সিটুর রাজ্য সভাপতি শ্যামল চক্রবর্তী বলেন, “বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী বিরোধী শিবিরে থাকার সময় তেলের দাম বাড়লে বলতেন, রাজ্য সরকার কেন তাদের কর তুলে নিচ্ছে না। যদিও সেটাই রাজ্যের আয়ের একমাত্র পথ। এখন তেলের দাম বাড়ছে। আমরা দেখতে চাই, উনি মুখ্যমন্ত্রী হয়ে ওই কর তুলে নিয়ে উদাহরণ রাখেন কি না!” প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলির ডাকে ৭ জুলাই ব্যাঙ্ক ধর্মঘট এবং ৫ জুলাই থেকে লাগাতার ডাক ধর্মঘট হতে চলেছে।
ওই কনভেনশনেই আইএনটিইউসি-র রমেন বলেন, “পরিবর্তনের
নামে নৈরাজ্য চলা উচিত নয়! অত্যাচার সীমা ছাড়িয়েছে! এ রাজ্যে কংগ্রেস, যুক্তফ্রন্ট বা বামফ্রন্ট, অতীতে অনেক সরকার এসেছে। কিন্তু কখনও দেখিনি, ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার কেউ কেড়ে নিতে পারে। আইএলও-র আন্তর্জাতিক নীতি এবং দেশের সাংবিধানিক অধিকার সবাইকে দেওয়া আছে। দখলদারি বরদাস্ত করা যায় না!” রমেনের অভিযোগ, অন্য দলের ট্রেড ইউনিয়ন কার্যালয় দখল হচ্ছে, তৃণমূলের তিন জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর উপস্থিতিতে নিজাম প্যালেসে কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নের নেতারা প্রহৃত হচ্ছেন বা বালিগঞ্জের এইআই ক্লাবে তৃণমূলের ইউনিয়ন না-করলে কর্মীদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না এমন ঘটনা বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত তৈরি করছে। রমেনের এই বক্তব্য প্রদীপবাবুরা ‘অনুমোদন’ করেন কি না, সে দিকেই নজর রাখছে জোট-শিবির। |
|
|
|
|
|