|
|
|
|
শিল্প না হলে চাষ, দাবি জমিহারা কমিটির |
শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল • রঘুনাথপুর |
জমি অধিগ্রহণের চার বছর পরেও ‘প্রত্যাশিত’ গতিতে কাজ শুরু হয়নি, এই অভিযোগ তুলে রঘুনাথপুরে জল বালাজি শিল্পগোষ্ঠীর প্রস্তাবিত ইস্পাত প্রকল্পে কর্মসংস্থানের দাবি তুলল স্থানীয় জমিহারাদের কমিটি। তাদের বক্তব্য, হয় প্রকল্পে এলাকার জমিহারাদের কাজের ব্যবস্থা করা হোক। অথবা ওই জমিতে তাঁদের চাষ করতে দেওয়া হোক। এই দাবিতে কমিটির পক্ষে বৃহস্পতিবার রঘুনাথপুরের মহকুমাশাসককে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। মহকুমাশাসক আবিদ হোসেন বলেন, “জমিহারা কমিটির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। ওদের প্রস্তাব অনুযায়ী, শিল্পগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের নিয়ে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয়েছে।”
রঘুনাথপুর ১ ব্লকের নতুনডি পঞ্চায়েত এলাকায় সুসংহত ইস্পাত প্রকল্প গড়ছে জয় বালাজি শিল্পগোষ্ঠী। ১৬ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে পর্যায়ক্রমে সেখানে ইস্পাত, বিদ্যুৎ, সিমেন্ট কারখানা গড়ে তোলার কথা। জমির প্রয়োজন ৩৮০০ একর। কিন্তু, জমির দাম ও অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া নিয়ে জমি মালিকদের ‘আন্দোলনের’ ফলে অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া আশানুরূপ গতি পায়নি। প্রশাসন সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই প্রায় ১২৫০ একর জমি অধিগ্রহণ করে দেওয়া হয়েছে ওই শিল্পগোষ্ঠীকে।
এ দিন ‘নতুনডি অঞ্চল জমিহারা কমিটি’ মহকুমাশাসকের কাছে দাবি করেছে, মূল প্রকল্পের কাজ দ্রুত শুরু করুক জয় বালাজি গোষ্ঠী। তা না হলে অধিগৃহীত এলাকায় বাসিন্দাদের চাষ করতে দেওয়া হোক। নতুনডি পঞ্চায়েতের যে ১১টি মৌজার উপরে প্রকল্প গড়ে ওঠার কথা, সেগুলির বড় অংশের মালিক, খেতমজুর, বর্গাদার, পাট্টাদারেরা রয়েছেন এই জমিহারা কমিটিতে। যে জমি এখনও পর্যন্ত অধিগৃহীত (১২৫০ একর) হয়েছে, তার মালিকদের অধিকাংশই ইতিমধ্যে জমির দাম বাবদ চেক নিয়েছেন। কমিটির মূল ক্ষোভ প্রকল্পে কাজ না পাওয়া ঘিরে। কমিটির তরফে ত্রিলোক মাজি, দিলীপ মিত্র, মনোজ মিত্র, কিরীটী মাজিরা বলেন, “চার বছর আগে জমি নেওয়া হয়েছে, অথচ এখনও প্রকল্পে কাজ পাননি এলাকার জমিহারারা। এতদিন আমরা চাষ করতাম। কিন্তু সম্প্রতি ওই শিল্পগোষ্ঠী জমি ভরাটের কাজ শুরু করায় এখন চাষ করতেও সমস্যায় পড়েছেন এলাকার জমিহারারা।”
বস্তুত, এই কাজের দাবিতেই এক মাস আগে এলাকার হুড়রা গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে বিবাদ বেধেছিল শিল্পগোষ্ঠীর স্থানীয় কর্মীদের। তার পর থেকে প্রকল্পের কাজ বন্ধ রয়েছে। রঘুনাথপুরের তৃণমূল বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরি বলেন, “জমি ফেলে রাখলে স্বাভাবিক ভাবেই কাজ পাবেন না স্থানীয় জমিহারারা। আর চাষের মরসুমে ফাঁকা পড়ে থাকা জমিতে চাষের দাবি তাঁরা করতেই পারেন।” মহকুমাশাসকেরও কথায়, “যে পরিমাণ জমি দেওয়া হয়েছে, তাতে মূল প্রকল্পের কাজ শুরু করতেই পারে শিল্পগোষ্ঠী। আমরা তাদের কাজ শুরু করতে বলব।”
অন্য দিকে, একলপ্তে জমি না পাওয়ার জন্যই কাজ শুরু করা যায়নি বলে দাবি করেছেন শিল্পগোষ্ঠীর তরফে প্রকল্পের ডেপুটি ম্যানেজার উজ্জ্বল গুরু। তিনি বলেন, “আমরা জমি পেয়েছি পর্যায়ক্রমে। ফলে কাজ শুরু করতে অসুবিধা হয়েছে। তার উপর যে ১২৫০ একর জমি মিলেছে, তার মধ্যে ১৩০ একর ডিভিসি-কে দেওয়া হয়েছে রেললাইনের জন্য। বাকি জমিতে মূল প্রকল্পের কাজ শুরু করার বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে।” উজ্জ্বলবাবুর অভিযোগ, সরকারি স্তরে জমি অধিগ্রহণ নিয়ে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে যে পরিমাণ জমি চার বছরে তাঁদের পাওয়া উচিত ছিল, তা তাঁরা পাননি। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “কিছু জমি নিয়ে মালিকদের মধ্যে শরিকি বিবাদ আছে। এ ছাড়াও নানা সমস্যা রয়েছে। ফলে একলপ্তে জমি দিতে কিছুটা সময় লাগবে।”
|
|
|
|
|
|