|
|
|
|
দুঃস্থ হয়েও চাল মেলেনি, বিক্ষোভ গ্রামবাসীদের |
সুরজিৎ সিংহ • বাঁকুড়া |
গলদ গোড়াতেই।
চাল পাওয়ার কথা বিপিএল তালিকাভুক্তদের। অথচ গ্রামে এমন অনেক প্রকৃত গরিব রয়েছেন, যাঁদের নাম বিপিএল তালিকায় নেই। আবার অপেক্ষাকৃত অবস্থাপন্নদের নাম ঢুকে গিয়েছে তালিকায়। ‘ত্রুটিপূর্ণ’ বিপিএল তালিকার ভিত্তিতে চাল বিলি করায় প্রধান-সহ কর্মীদের গ্রাম পঞ্চায়েত কার্যালয়ে আটকে বিক্ষোভ দেখালেন গ্রামবাসীরা। শুধু তাই নয়, খবর পেয়ে বিডিও এসে যখন সরেজমিন ঘুরে দেখলেন, তখন পাকা বাড়ির মালিক বা ডেকোরেটার ব্যবসায়ীর নামও বিপিএল তালিকায় রয়েছে শুনে তাজ্জব বনে গেলেন।
বৃহস্পতিবার এই ঘটনা ঘটেছে বাঁকুড়া ১ ব্লকের কেঞ্জাকুড়া গ্রামে। বিপিএল তালিকা নিয়ে এর আগেও ভুরিভুরি অভিযোগ উঠেছে। এলাকার শিবমন্দির থেকে শুরু করে গৃহপালিত পশুর নামও ওই তালিকায় থাকার নজির মিলেছে। সম্প্রতি রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনার ‘হেল্থ কার্ড’-এর জন্য ছবি তোলার ক্ষেত্রে একই সমস্যায় পড়েছিল প্রশাসন। জেলায় জেলায় এই নিয়ে বিক্ষোভ হয়েছে। পঞ্চায়েত ও ছবি তোলার কর্মীরা গ্রামবাসীদের মারও খেয়েছেন।
|
|
বিডিওকে দুর্দশার কথা বলছেন কেঞ্জাকুড়া গ্রামের এক প্রৌঢ়। অভিজিৎ সিংহর তোলা ছবি। |
কেঞ্জাকুড়াও ব্যতিক্রম নয়। গত বছর যে-সব এলাকা খরা কবলিত ছিল, সেখানকার বিপিএল উপভোক্তাদের বিনামূল্যে মাথাপিছু ১২ কেজি (প্রাপ্তবয়স্ক) ও ৬ কেজি (অপ্রাপ্তবয়স্ক) করে চাল রেশন দোকান থেকে দেওয়া শুরু হয়েছে। বুধবার উত্তর কেঞ্জাকুড়া গ্রাম সংসদ এলাকায় সেই চাল বিলি হয়। বিপিএল তালিকা ধরে চাল বিলি হচ্ছে, অথচ গ্রামের অনেক প্রকৃত দুঃস্থের তাতে নাম না থাকায় ক্ষোভ জমে। এ দিন কেঞ্জাকুড়া পঞ্চায়েত কার্যালয় ঘেরাও করেন হাজার খানেক বাসিন্দা। মহিলারাই ছিলেন বেশি। পঞ্চায়েতের সিপিএম প্রধান জগদীশ বাউরি, স্থানীয় সিপিএম পঞ্চায়েত সদস্য গৌতম কর এবং ন’জন পঞ্চায়েত কর্মী তখন কার্যালয়ে ছিলেন। বেগতিক দেখে তাঁরা ভিতর থেকে দরজায় খিল তুলে দেন।
বেলা ১১টা থেকে চলা ঘেরাও শেষ হয় দুপুর আড়াইটেয় বাঁকুড়া ১-এর বিডিও কৌশিক সিংহ সেখানে পৌঁছনোর পর। বিপিএল তালিকায় নাম না থাকা দুঃস্থ বাসিন্দারা কী অবস্থার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন, তা দেখার জন্য গ্রামবাসীরা বিডিওকে চাপ দেন। প্রধানকে নিয়ে বিডিও ধগড়িয়া, কালিন্দীপাড়া, তাঁতিপাড়া ঘুরে দেখেন। তাঁতিপাড়ার তাঁত শিল্পী গুরুপদ লক্ষ্মণ বিডিও-র সামনে স্বীকার করেন, ‘‘বিপিএল তালিকায় আমার নাম রয়েছে। বিদ্যুতের লাইন পেয়েছি বিপিএল হিসেবেই। বুধবার খরার চালও তুলেছি।” গ্রামবাসীরাই দেখান গুরুপদবাবুর পাকা তিনটি ঘর রয়েছে। রয়েছে টিভি সেট। পরের গন্তব্য ডেকোরেটার ব্যবসায়ী মধু লক্ষ্মণের বাড়ি। তিনিও বিপিএল তালিকাভুক্ত হওয়ার সুবাদে চাল তুলেছেন বলে বাসিন্দারা বিডিও-কে জানান। তবে বাড়িতে তাঁদের কাউকে পাওয়া যায়নি।
বিডিওকে হাতের কাছে পেয়ে কার্তিক বাউরি, নেপাল কালিন্দী, দিলীপ বাউরি, রূপা বাউরিরা সক্ষোভ বলেন, “আমাদের জমি নেই। খেতমজুরি করে কোনও রকমে সংসার চলে। অথচ বিপিএল তালিকায় আমাদেরই নাম নেই। খরার বিনামূল্যের চাল যেখানে আমাদের সবচেয়ে বেশি দরকার, সেখানে চোখের সামনে দেখছি বেশ কয়েক জন অবস্থাপন্ন বিপিএল তালিকায় নাম থাকার সুযোগ নিয়ে তা তুলে নিচ্ছেন। এ কেমন বিচার?”
পরিদর্শন শেষে কৌশিকবাবু পঞ্চায়েত প্রধানকে নির্দেশ দেন, “আপাতত খরার চাল বিলি বন্ধ রাখতে হবে। সর্বদল বৈঠক ডেকে সুষ্ঠু মীমাংসা করে বিলির ব্যবস্থা করতে হবে।” পরে বিডিও বলেন, “অনেক দুঃস্থ বাসিন্দার নাম বিপিএল তালিকায় নেই বলে তাঁরা জানিয়েছেন। আবার কিছুটা ভাল অবস্থায় থাকা কয়েক জনের নাম তালিকাভুক্ত হয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।” পঞ্চায়েত প্রধানের বক্তব্য, “বিপিএল তালিকা করেছে প্রশাসন। পঞ্চায়েতের দোষ নেই। তবে প্রকৃত দুঃস্থদের অনেকের নামই বিপিএল তালিকায় নেই।”
বাঁকুড়ার মহকুমাশাসক শ্যামলকুমার মণ্ডল বলেন, “বিপিএলের জন্য বাড়ি বাড়ি সমীক্ষা হয়েছে। সেই সময় অনেকে প্রকৃত তথ্য গোপন করেছেন। বিপিএল তালিকা প্রকাশের পরেও অনেকের অভিযোগ ও আবেদনক্রমে তালিকায় সংশোধনও হয়েছে। এখন এই ধরনের অভিযোগ ওঠা ঠিক নয়।” |
|
|
|
|
|