সাবাইনা পার্কে ধোনির টিম যখন ঐতিহাসিক টেস্ট জিতছে, তখন ধোনিদের বোর্ড যেন পড়ে গিয়েছে হোল্ডিং জমানার সাবাইনা পার্ক উইকেটে!
আচমকা শশাঙ্ক মনোহর-শ্রীনিবাসনদের প্রবল অস্বস্তিতে ফেলে দেওয়া বোলারের নাম ললিত মোদী নন। মোদী বা শ্রীলঙ্কার প্রস্তাবিত টি-টোয়েন্টি লিগ আদৌ ভারতীয় বোর্ডের ঘুম কেড়ে নিচ্ছে না। মনোহরদের উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ার কারণ তাঁদের খেলতে হচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকারের বাউন্সার-বৃষ্টির বিরুদ্ধে।
কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী অজয় মাকেন যে নতুন বিলের আওতায় ক্রিকেট বোর্ডকে আনার কথা বলেছেন, সেটা একটা দিক। একইসঙ্গে পুরনো নীতি বিসর্জন দিয়ে ক্রিকেট বোর্ডের উপর প্রায় সমস্ত রকম কর এবং শুল্ক প্রয়োগ করতে শুরু করেছে সরকার। নানা সংস্থায় হঠাৎ হঠাৎ সরকারের প্রতিনিধিরা হাজির হয়ে প্রশ্ন তুলছেন। কোচির নতুন স্টেডিয়ামের কাজ যেমন স্থগিত করে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রী জয়রাম রমেশ। হায়দরাবাদ নতুন স্টেডিয়াম তৈরি করছিল। সরকার হঠাৎ বলেছে, এটা সরকারি জমি। নতুন স্টেডিয়ামের মালিকানাও তাই ক্রিকেট সংস্থা নয়, সরকারের হাতে থাকবে।
বৃহস্পতিবার বোর্ড সবথেকে বিপদে পড়েছে বিশ্বকাপ নিয়ে। ধোনিদের বিশ্বকাপ ২ এপ্রিল ওয়াংখেড়েতে কাপ জেতা মাত্র শেষ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু বোর্ডের বিশ্বকাপ এখনও চলছে। বৃহস্পতিবার মুম্বই এবং দিল্লিতে ফোন করে জানা গেল, কেন্দ্রীয় সরকার বিশ্বকাপ সংক্রান্ত নানা জিনিসের ওপর শুল্ক দাবি করেছে। তার পরিমাণ দেখা যাচ্ছে একশো কোটি টাকারও বেশি। আর বোর্ডকে গভীর উদ্বেগে ফেলে দিয়েছেন তাঁদেরই প্রাক্তন পদাধিকারীরা। শরদ পওয়ার যখন বোর্ড প্রেসিডেন্ট ছিলেন তখন আইসিসি-র সঙ্গে বিশ্বকাপ নিয়ে একটি চুক্তিতে সই করে ভারতীয় বোর্ড। সেই চুক্তিতে বলা ছিল, ভারত সরকার যদি শুল্ক ছাড় না দেয় তা হলে পুরো শুল্কটাই দেবে ভারতীয় বোর্ড। শোনা যাচ্ছে, পওয়ার জমানায় এই অদ্ভুত চুক্তি সই করে দেন সচিব নিরঞ্জন শাহ। এখন সরকার শুল্ক ছাড় দিতে চাইছে না। একশো কোটির বিশাল বোঝা এসে চেপেছে বোর্ডের উপর। ভারতীয় বোর্ড এখন ঠিক করেছে, এ নিয়ে পরবর্তী আইসিসি বৈঠকে লড়াই করবে। মনোহররা প্রশ্ন তুলবেন, এ রকম একটা অবাস্তব চুক্তি কী করে তাঁরা মানবেন? বিশ্বকাপ আইসিসি ইভেন্ট। তা হলে একশো কোটি শুধু ভারতীয় বোর্ড কেন দেবে?
মাকেনের প্রস্তাবিত নতুন বিলে আবার থাকছে ‘রাইট টু ইনফর্মেশন অ্যাক্ট’। যার অর্থ হচ্ছে, যে কোনও ক্রীড়া সংস্থা সম্পর্কে তথ্য জানার অধিকার থাকবে কেন্দ্রীয় সরকারের। এই বিল পাশ হয়ে গেলে আর পাঁচটা সর্বভারতীয় ক্রীড়া সংস্থার মতো ক্রিকেট বোর্ডকেও সরকারের কাছে দায়বদ্ধ থাকতে হবে। অর্থকরী লেনদেন থেকে কী ভাবে সংস্থা চলছে, নানা ব্যাপারে জবাবদিহি করতে হবে। শুধু তা-ই নয়, নতুন বিলের শর্ত অনুযায়ী কেন্দ্রীয় সরকারের এক জন প্রতিনিধি সমস্ত কাজকর্ম তদারকির জন্য বোর্ডের অফিসে নিয়মিত ভাবে বসবেন।
বোর্ড কর্তারা এই বিলের আওতা থেকে বেরনোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন। এমনকী প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গে কথা বলতে তাঁরা প্রতিনিধি দল পাঠান। প্রধানমন্ত্রী প্রতিনিধি দলকে বলেন, তিনি বিষয়টি দেখবেন। বোর্ড কর্তারা দ্রুতই আবিষ্কার করলেন, ক্রীড়ামন্ত্রী মাকেন বিলের আওতায় ক্রিকেট বোর্ডকে আনার কথা আরও জোরালো ভাবে বলছেন। তা থেকেই সরকারের মনোভাব বুঝে যান মনোহর-রা।
বোর্ডের এক প্রভাবশালী কর্তা এ দিন জানালেন, বিলের আওতায় তাঁরাও পড়ছেন ধরে নিয়ে এখন ‘প্ল্যান বি’ ভাবা হচ্ছে। বোর্ডের পদাধিকারী ঠিক করার জন্য যে রোটেশন প্রথা চালু হয়েছিল, সেটা তাঁরা তুলে দেবেন ভাবছেন। যাতে নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে রেখে প্রেসিডেন্ট বা সচিব নির্বাচন করা যায়। সরকারের সঙ্গে লড়াই করার দরকার হলে করা যায়। যে মনোহর-রা এক দিন ডালমিয়া জমানার অবসান ঘটানোর জন্য শরদ পওয়ারকে নিয়ে এসেছিলেন, তাঁরাই এখন সরকারি হস্তক্ষেপ ঠেকাতে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বোর্ডে প্রবেশ আটকাতে চাইছেন। আরও অভাবনীয়, মুম্বইয়ের যে বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হল তাতে ডালমিয়াকেও আমন্ত্রণ জানিয়েছিল বোর্ড। ক্রিকেটের মতো ক্রিকেট প্রশাসনও কী মহান অনিশ্চয়তায় ভর্তি! |