নিঃশর্ত বন্দি মুক্তির দাবিতে সভা
রাজ্যে পালাবদলের পরেও আন্দোলনের পথেই জঙ্গলমহলের মানুষ। এ বার তাঁদের দাবি, ‘মিথ্যা’ মামলায় জেলবন্দি সমস্ত রাজনৈতিক বন্দির নিঃশর্ত মুক্তি। বৃহস্পতিবার এই দাবিতেই মেদিনীপুর শহরে একটি সভা হল। গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতি-র (এপিডিআর) আহ্বানে আয়োজিত এই সভায় যোগ দেন লালগড় মঞ্চ, সন্ত্রাস-দুর্নীতি ও সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন-বিরোধী মঞ্চ, মেদিনীপুর সুরক্ষা সমিতির কর্মী-সমর্থকেরা। উপস্থিত ছিলেন জনগণের কমিটির এক সময়ের সম্পাদক মনোজ মাহাতো, কমিটির জেলবন্দি নেতা ছত্রধর মাহাতোর স্ত্রী নিয়তিদেবীও। তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ক্ষমতায় এসে তাঁরা রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দেবেন। এখনও সেই প্রতিশ্রুতি কেন কার্যকর হল না, এ দিনের সভা থেকে সেই প্রশ্ন তোলা হয়। পাশাপাশি, জঙ্গলমহলে স্থায়ী উন্নয়ন ও শান্তির জন্য আলোচনার পক্ষেই সওয়াল করা হয়।
নতুন সরকার রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তির বিষয়টি বিবেচনার জন্য ইতিম্যধেই একটি ‘রিভিউ কমিটি’ তৈরি করেছে। এই কমিটিতে কেন জঙ্গলমহলের আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধি নেই, এ প্রশ্ন তুলেছেন এপিডিআরের সাধারণ সম্পাদক দেবপ্রসাদ রায়চৌধুরী। সেই সঙ্গে মামলা বিচার না-করে রাজবন্দিদের ‘নিঃশর্ত’ মুক্তির দাবিও জানিয়েছেন।
মেদিনীপুরে মিছিলে সামিল জঙ্গলমহলের পড়ুয়ারাও। নিজস্ব চিত্র।
ঝাড়গ্রাম, লালগড়, গোয়ালতোড়, শালবনি-সহ জঙ্গলমহলের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ বৃহস্পতিবারের সভায় যোগ দেন। মাওবাদী সন্দেহে এক সময়ে যাঁদের ধরা হয়েছিল, পরে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন, এমন অনেকেও সভায় যোগ দেন। গোয়ালতোড়ের চেঁচুড়িয়া গ্রামের ভীমচন্দ্র মাসান্তকে বছর খানেক আগে গ্রেফতার করেছিল যৌথ বাহিনী। পরে জামিনে জেল থেকে বেরোন। ভীমচন্দ্রের বক্তব্য, “সিপিএম-বিরোধী আন্দোলন করেছি বলেই আমার নামে মিথ্যে মামলা সাজানো হয়েছে। এখনও সেই মামলা ঝুলছে। আমার মতো জঙ্গলমহলের বহু মানুষের নামেই এমন মামলা রয়েছে।” তাঁর আশা, “নতুন সরকার ক্ষমতায় এসেছে। মিথ্যে মামলা এ বার প্রত্যাহার করে নেওয়া উচিত। সেই অপেক্ষাতেই রয়েছি।”
একই বক্তব্য মাওবাদী সন্দেহে কয়েক মাস আগে মেদিনীপুরে তৃণমূলের ত্রাণশিবির থেকে ধৃত অসীম মাহাতোর মা মল্লিকাদেবীরও। এ দিনের সভায় এসে মল্লিকাদেবী বলেন, “আমার ছেলে নির্দোষ। মিথ্যে মামলায় যাঁরা জেলে রয়েছেন, দিদি (মমতা) নিশ্চয়ই তাঁদের মুক্তি দেওয়ার ব্যাপারে পদক্ষেপ করবেন।” সভা শুরুর আগে এ দিন একটি মিছিল শহর পরিক্রমা করে। মিছিলে উপস্থিতি ছিল বেশ ভালই। জনগণের কমিটির ছাত্র সংগঠন ‘ছাত্র সমাজে’র প্রতিনিধিরাও স্কুলের পোশাকেই মিছিলে হাঁটেন। দীর্ঘ মিছিলের জেরে শহরে যানজটও দেখা দেয়। সার দিয়ে বাস, লরি দাঁড়িয়ে পড়ে। পরে অবশ্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। সভাস্থলে এক প্রেস বিবৃতিও বিলি করা হয়। বিবৃতিতে নাম রয়েছে জ্ঞানেশ্বরী-কাণ্ডে অভিযুক্ত হয়ে জেলবন্দি হীরালাল মাহাতোর। তাঁর দাবি, “জ্ঞানেশ্বরীর ঘটনায় আমরা যুক্ত নই। নির্দোষ। সিপিএম এবং পুলিশ প্রশাসনের ষড়যন্ত্রের শিকার। আমরা মুক্তি চাই।”
সভা থেকে যৌথ বাহিনী প্রত্যাহারেরও দাবি ওঠে। উদ্যোক্তাদের বক্তব্য, “জঙ্গলমহলে নতুন করে কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রশিক্ষণ ক্যাম্প করা হবে বলে শোনা যাচ্ছে। আমরা এর বিরোধিতা করব। সেই সঙ্গে এখনকার বাহিনীকে প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলনও চলবে।” আগ্রাসন-বিরোধী মঞ্চের ব্যানারে জঙ্গলমহলে নতুন করে আন্দোলন শুরু হবে বলে এ দিনই ঘোষণা করেন মনোজ। তাঁর কথায়, “আমরা গণতান্ত্রিক পথেই আন্দোলন করব।” প্রসঙ্গত, এ দিনের সভায় উত্থাপিত দাবিগুলি নিয়েই রাজ্যের বিভিন্ন সংশোধনাগারে রাজনৈতিক বন্দিরা অনশন করেছেন।
Previous Story Medinipur Next Story


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.