|
|
|
|
কাগজকল থেকে দূষণ, সমস্যায় বাসিন্দারা |
নুরুল আবসার • আমতা |
একটি কাগজকলের দূষণে প্রাণ ওষ্ঠাগত হচ্ছে অন্তত ১০টি পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দাদের। আমতার ভান্ডারগাছা গ্রাম পঞ্চায়েতের শেরপুর গ্রামে কাগজকলটিতে উৎপাদন শুরু হয়েছে গত জানুয়ারি মাস থেকে। কারখানার বর্জ্য মিশছে বিভিন্ন খালে। এর ফলে খালের জল ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে বলে সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন।
এই এলাকায় রয়েছে কাঁদুয়া খাল, বারীনবাবুর খাল, গুজারপুর-মহিষরেখা খাল এবং বনস্পতি খাল। খালের জলে যেমন চাষ হয়, তেমনই এই জলে বাসিন্দারা স্নান করেন। খালের মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন বহু মানুষ। কাগজকলের বর্জ্য মিশে গিয়ে প্রতিটি খালের জল দূষিত হয়ে পড়েছে বলে গ্রামবাসীদের অভিযোগ। তাঁরা জানিয়েছেন, এ বছর অনেকেই বোরো চাষ করতে পারেননি। মাছ মরে যাওয়ায় ধীবরদের জীবিকা মার খেয়েছে। স্নান করা, বাসন মাজার কাজও বন্ধ।
কাগজকল থেকে কিছুটা দূরে উলুবেড়িয়া-আমতা রাস্তার ধারে পাত্রপোলের কাছে দক্ষিণ শেরপুর গ্রামে গিয়ে পৌঁছতেই নাকে এল ঝাঁঝালো কটূ গন্ধ। এখানে রয়েছে কাঁদুয়া খাল। জলের রঙ হয়ে গিয়েছে কালো। গ্রামবাসীরা ঘাটে নেমে স্নান করতেন, বাসন মাজতেন। এলাকার বাসিন্দা প্রসন্ন পাত্র বললেন, “খালের জল ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। তাই আর কেউ ঘাটে আসেন না। ঘাটগুলি এখন পরিত্যক্ত।” প্রসন্নবাবু আরও বলেন, “গত তিন-চার মাস ধরে এই অবস্থা চলছে। এখানে বসবাস করা দুষ্কর হয়ে পড়েছে।”
এখানে ঘরে ঘরে চলে জরির কাজ। কিন্তু গত তিন-চার মাস ধরে তা-ও প্রায় বন্ধ। স্থানীয় বাসিন্দা পেশায় জরির কারিগর সমরেশ পাত্র, শঙ্কর পারো বললেন, “জরির কাজ করার পরে কাপড় আমরা বাইরে মেলে দিই। কিন্তু কিছু ক্ষণ পরে তাতে দাগ পড়ে যাচ্ছে। আমাদের সন্দেহ কাগজকলের বর্জ্য শুধুমাত্র খালের জলেই মিশছে না। তা বাতাসেও ছড়িয়ে পড়ছে। তাতেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে আমাদের মূল্যবান জরির কাজ।” পুকুরে মাছ চাষ করেও রেহাই নেই গ্রামবাসীরা। স্থানীয় বাসিন্দা মানিক বর বললেন, “খালের সঙ্গে পুকুরের সংযোগ রয়েছে। ফলে পুকুরে মাছ চাষ করলেও সেগুলি মরে যাচ্ছে।” পাশেই কমলাচক গ্রামের বাসিন্দা উত্তম কুমির হাতের ঘা দেখিয়ে বললেন, “খালের জল ব্যবহার করেই আমার হাতের এই অবস্থা।”
আমতা ১ এবং উলুবেড়িয়া ২ ব্লকের ১০টি পঞ্চায়েতের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে চারটি খাল। এগুলি পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত। ফলে প্রতিটি খালের জল দূষিত হয়ে গিয়েছে বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। কাগজকলটির মালিক অভিজিৎ ঘোষ বলেন, “আমরা এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) বসিয়েছিলাম। কিন্তু কারখানায় উৎপাদন শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেটি ভেঙে পড়ে। আমরা নতুন যন্ত্র আনাচ্ছি। ১৫ জুলাইয়ের পরে সেই সমস্যা থাকবে না।” তাঁর দাবি, “কারখানাটিতে বাণিজ্যিক ভাবে উৎপাদন চালানো হচ্ছে না। এটা পরীক্ষামূলক উৎপাদন। আমরা উৎপাদন বন্ধ করে দিতে পারি। প্রায় ৩০০ শ্রমিক এখানে কাজ করেন। এটা করলে তাঁরা বেকার হয়ে পড়বেন।” তিনি আরও জানান, ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে ইটিপি যন্ত্র বসানো হয়ে যাবে সে কথা বৈঠক করে স্থানীয় গ্রামবাসীদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আলোচনা হয়েছে পঞ্চায়েতগুলির সঙ্গেও।
গ্রামবাসীদের মধ্যে পিন্টু ভুঁইয়া, সমরেশ পাত্রেরা পাল্টা বলেন, “আমাদের সঙ্গে কোনও আলোচনা হয়নি। দূষণে অতিষ্ঠ হয়ে আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে গেলে তাঁরা আমাদের জানান খুব শীঘ্র ইটিপি যন্ত্র বসানো হবে।” পিন্টুবাবু আরও বলেন, “কারখানা বন্ধ হোক আমরাও চাই না। কিন্তু দূষণ রোধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করতেই হবে।” আমতা ১ ব্লকের খড়দহ পঞ্চায়েতের প্রধান প্রতিমা দলুই বলেন, “আমাদের পঞ্চায়েতের অন্তত ১০টি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কাছে আমরা অভিযোগ জানাতে বাধ্য হয়েছি।” রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের পক্ষে বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “আমি কারখানা কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে ডেকে পাঠাচ্ছি। বেআইনি কিছু দেখলে কারখানা বন্ধ করে দেব।”
জখম দুই যুবক। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর জখম দুই যুবককে উদ্ধার করল টহলদার পুলিশ। বৃহস্পতিবার ভোর পাঁচটা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে রিজেন্ট পার্ক থানা এলাকায়। পুলিশ জানায়, এক জনের নাম অরিত্রম মুখোপাধ্যায় (২৭) ও অন্য জন প্রীতম বসু (৩০)। অরিত্রমের বাড়ি গল্ফ ক্লাব রোডে। প্রীতমের বাড়ি কল্যাণীর গয়েশপুরে। টালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের পাশে একটি চায়ের দোকানের সামনে রক্তাক্ত অবস্থায় থাকতে দেখা যায়।
|
|
|
|
|
|