নদীর ঢেউয়ের দিকে তাকিয়ে এখনও
পুরনো ভিটেমাটি খুঁজে ফেরেন মন্টু
ঙুল তুলে বোঝানোর চেষ্টা করেন বৃদ্ধ মন্টু মণ্ডল। সামনের ভূখণ্ড জুড়ে শুধু জল আর জল। তবু তারই মধ্যে দূরের একটা জায়গায় আঙুল দিয়ে সীমারেখা টানার চেষ্টা করেন। যে জায়গাটায় এক সময় ঘর-গেরস্থালি ছিল তাঁর। এখন সেই ঘর ‘রাক্ষুসে’ গঙ্গার গ্রাসে। সে বার ঘর বেঁধেছিলেন কিছুটা এগিয়ে এসে। কিন্তু কয়েক বছরের ব্যবধানে সেটিও গেল গঙ্গার কবলে। পাঁচ-পাঁচবার গঙ্গা বেঘর করেছে মন্টুবাবুকে। তাঁর মতোই আরও অনেকেরই একই দশা। রুনু মণ্ডল, বিভূতি মণ্ডল, পিণ্টু মণ্ডল তালিকা বেড়েই চলে।
এই পরিস্থিতিতে বছরভর চিন্তায় থাকেন হুগলির বলাগড় ব্লকের জিরাটের খয়রামারি গ্রামের মানুষ। গঙ্গার ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে ঘুরতে থাকেন প্রশাসনের এ দোর থেকে সে দোরে। তবু, স্থায়ী সমাধান মেলে না। চোখের সামনেই একটু একটু করে গঙ্গার গর্ভে হারিয়ে যায় চাষের জমি, গাছগাছালি, মাথা গোঁজার জায়গা। হুগলির সাংসদ রত্না দে নাগ ভাঙনের ছবি-সহ গোটা বিষয়টি নিয়ে কাগজপত্র জমা দিয়েছেন রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে। তিনি বলেন, “ভাঙন রোধে একটা স্থায়ী সমাধান দরকার। সেই লক্ষ্যেই চেষ্টা করে যাচ্ছি।” বলাগড়ের বিডিও পুষ্পেন্দু সরকার বলেন, “সম্প্রতি যে ১৩টি ঘর ভেঙেছে, সেই পরিবারগুলোকে আমরা সামান্য সাহায্য করেছি। কিন্তু ভাঙন সমস্যার সমাধান আমাদের হাতে নেই। বিষয়টি সেচ দফতরের অধীনে।”
নিজস্ব চিত্র।
খয়রামারি এবং পাশের শ্রীপুর পঞ্চায়েতের বাবুপাড়া গ্রামের তিনটি মৌজার মধ্যে গৌরনগর কার্যত নিশ্চিহ্ন। রানিনগর মৌজাও নিশ্চিহ্ন হওয়ার মুখে। দুর্লভপুরের বেশ কিছু অংশও তলিয়ে গিয়েছে গত দু’দশকে। দিন কয়েক আগের বৃষ্টিতে বেশ কিছুটা এলাকা ধসে যায়। এই সময়ে খয়রামারির বেশ কিছু ঘর ভেঙেছে। গঙ্গার জল এড়িয়ে জেগে আছে নারকেল গাছের মাথা। বাকিটা জলের তলায়। ভাঙনের এমনই চিত্র এখানে।
সংবাদমাধ্যমের লোক দেখে ছেঁকে ধরেন গ্রামবাসীরা। মন্টুবাবু বলেন, “একটু একটু করে পুরো গ্রামটাই শেষ হয়ে যাচ্ছে। আমরা গরিব মানুষ। পরের জমিতে চাষ করে খাই। ঘর বানানোর টাকা পাব কোথা থেকে? চিন্তায় রাতে ঘুম হয় না।” বিভূতি মণ্ডল বলেন, “আমার ঘরও অনেকবার তলিয়ে গিয়েছে। এর স্থায়ী সমাধান হলেই শুধু একটা নদী এ ভাবে আমাদের বারে বারে উচ্ছেদ করতে পারতো না।” এক বৃদ্ধা বলে ওঠেন, “আমার কথাটা একটু কর্তাদের বলবেন। এ ভাবে বাঁচা যায়? সাধ্যে কুলোলে অন্যত্র চলে যেতাম। কিন্তু তা আর পারি কই!” স্থানীয় বাসিন্দা, তৃণমূল নেতা জীবন মণ্ডলের স্মৃতিতে ভাসে চাষের জমি, শ্যালো পাম্প, চার চারটে ধানকল মায় বাজার। তিনিও গঙ্গার দিকে আঙুল উঁচিয়ে বলেন, “ওইখানে আমরা ফুটবল খেলতে যেতাম। কিন্তু একটু একটু করে সব শেষ হয়ে গেল।” অনেকেই গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র সংসার পেতেছেন ভাঙনের কারণে। ব্লকের তৃণমূল নেতা তপন দাস বলেন, “এত দিন ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষ কিছুই পাননি। এ বার পঞ্চায়েতের তরফে তাঁদের সাহায্য করা হবে।”
প্রশাসন সূত্রের খবর, বলাগড় ব্লকের ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ গঙ্গার পাড় ভাঙনের কবলে। এর মধ্যে ৭ কিলোমিটারের অবস্থা ভীষণ খারাপ। খয়রামারি, বাবুপাড়ার পাশাপাশি মিলনগড়, ভবানিপুর সুখরিয়া, চাঁদরা, রুকেশপুর, সুন্দরপুর চরকৃষ্ণবাটি সহ বিভিন্ন এলাকা ভাঙন কবলিত। এর মধ্যে সুন্দরপুরের অধিকাংশ এলাকা গঙ্গাগর্ভে চলে গিয়েছে। চরকৃষ্ণবাটিতেও দ্রুতগতিতে ভাঙছে গঙ্গার পাড়। কিছু দিন আগে বাঁশের খাঁচা তৈরি করে তাতে ইট ফেলে তার দিয়ে জাল তৈরি করে গঙ্গার পাড়ে ফেলা হয়েছিল ভাঙন আটকাতে। গ্রামবাসীদের বক্তব্য, এই পদ্ধতিতে কিছুটা কাজ হয়েছে। তবে আরও ঘন করে ওই বাঁশের খাঁচা ফেলা না হলে ভাঙন পুরোপুরি আটকানো সম্ভব নয়। হুগলি সেচ বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, পরিস্থিতি মোকাবিলায় আপাতত বিশেষ ভাবে তৈরি বাঁশের খাঁচারই সাহায্য নেওয়া হবে। প্রবল ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাতেই কাজ শুরু হবে।
তবে, গ্রামবাসীরা চাইছেন স্থায়ী সমাধান। সেটা কবে হবে, কেউ বলতে পারছেন না।
Previous Story South Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.