ইভ-টিজিংয়ের প্রতিবাদ, ছুরির ঘায়ে জখম দু’জন |
নিজস্ব সংবাদদাতা • ডোমজুড় |
মোটরবাইকে চড়ে কিছু উটকো যুবক পাড়ার মেয়েদের বিরক্ত করছে দেখে চুপ করে বসে থাকতে পারেননি মানু, বাবলারা। প্রতিবাদ করেন তাঁরা। বাইক নিয়ে দু’জন চম্পট দিলেও বাকি দু’জনকে ধাওয়া করে ধরে ফেলেন। ধস্তাধস্তির সময়ে ছুরি বের করে চালিয়ে দেয় এক ইভ-টিজার। জখম অবস্থায় মানু রাম নামে এক জনকে ভর্তি করা হয়েছে হাসপাতালে। বাবলা বেরা নামে জখম আরও এক যুবককে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। জনতার মারে জখম এক ইভ-টিজারেরও চিকিৎসা চলছে হাসপাতালে।
বুধবার ঘটনাটি ঘটেছে হাওড়ার ডোমজুড় থানার উত্তর নিবড়া পঞ্চাননতলায়। মাস কয়েক আগে বারাসতে রাতের অন্ধকারে দিদি রিঙ্কুকে ইভ-টিজিংয়ের শিকার হতে দেখে প্রতিবাদ করেছিল ভাই রাজীব দাস। দুষ্কৃতীরা ছুরি চালিয়ে তাকে মেরেই ফেলে। ওই ঘটনায় দুষ্কৃতীরা সকলেই ধরা পড়েছে। ডোমজুড়ের ঘটনাতেও অভিযুক্ত দুই যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। |
|
হাসপাতালে ছুরির ঘায়ে জখম মানু। |
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, সন্ধে তখন প্রায় ৬টা। পাড়ায় বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন মানু, বাবলা-সহ কয়েক জন। তাঁরা দেখেন, চার যুবক মোটরবাইক নিয়ে ঘুরেফিরে পাড়ার মেয়েদের কটূক্তি করছে। খানিক ক্ষণ এই দৃশ্য দেখার পরে প্রতিবাদ করেন সকলে। বহিরাগত চার যুবকের সঙ্গে বচসা শুরু হয় তাঁদের। বেগতিক দেখে দু’টি বাইক নিয়ে চম্পট দেয় দু’জন। বাকি দু’জন দৌড়ে পালাতে থাকে।
পিছু ধাওয়া করেন গ্রামের লোকজন। হাসান গাজি নামে এক যুবককে জাপটে ধরে ফেলেন বছর পঁচিশের যুবক মানু। পকেট থেকে ছুরি বের করে এলোপাথাড়ি চালাতে শুরু করে হাসান। মুখে, গলায় গভীর ক্ষত হয়ে যায় মানুর। তাঁকে ডোমজুড় গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে পাঠানো হয় হাওড়া জেলা হাসপাতালে। কথা বলার মতো অবস্থায় নেই তিনি। মুখে ব্যান্ডেজ বাঁধা। এ দিকে, মানুকে ছুরির ঘা খেয়ে পড়ে যেতে দেখে হাসানকে ধরতে এগিয়ে যান বাবলা। হাতের আঙুলে ছুরির ঘা লাগে বছর তিরিশের এই যুবকের। তত ক্ষণে গ্রামের মানুষ জড়ো হয়ে গিয়েছে। হাসান ও নকিব আলি নামে দুই ইভ-টিজারকে ধরে ফেলে শুরু হয় মারধর। পরে পুলিশ এসে তাদের গ্রেফতার করে। জনতার মারে জখম হাসানকেও ভর্তি করা হয় ডোমজুড় গ্রামীণ হাসপাতালে। পুলিশ জানিয়েছে, দু’জনের বাড়ি ডোমজুড়েরই অঙ্করহাটি গ্রামে। তারা পেশায় দর্জি। হাওড়ার পুলিশ সুপার রবীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, “চার জন দু’টি বাইকে চড়ে মহিলাদের কটূক্তি করছিল। স্থানীয় মানুষ প্রতিবাদ করতে গেলে ছুরি চালিয়ে দেয় তারা। দু’জন ধরা পড়েছে।” তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছেন সুপার। |
|
মারধরে জখম এক ইভ-টিজার। |
বাবলা একটি কারখানার কর্মী। ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, “আমরা পাড়ায় বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। বছর কুড়ি-পঁচিশের চারকে ছেলে বাইক নিয়ে উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘোরাঘুরি করছিল। পথচলতি পাড়ার মেয়েদের দেখে নানা আজেবাজে কথা বলছিল। চোখের সামনে এ সব দেখে হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারিনি। কিন্তু প্রতিবাদ করতে গিয়ে এমন কাণ্ড ঘটল।” স্থানীয় বাসিন্দা সুজিত পাল বলেন, “আমরা পরে থানায় এসে ওই দু’জনের নামে ইভ-টিজিং এবং ছুরি মারার অভিযোগ দায়ের করি।” |
ছবি: হিলটন ঘোষ |
|