|
|
|
|
চিটফান্ডের কাছে প্রতারিত জনতা পুলিশ ফাঁড়ি পোড়াল কোন্নগরে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কোন্নগর |
চিটফান্ড সংস্থার কাছে প্রতারিত জনতার আক্রোশের শিকার হল পুলিশ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কোন্নগর ফাঁড়িতে যথেচ্ছ ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় পুলিশের একটি জিপ এবং মোটরবাইকও। ফাঁড়ির জনা পাঁচেক পুলিশকর্মী প্রতিরোধ করতে গিয়ে ব্যর্থ হন। জনতার মারে আহত হন দুই পুলিশকর্মী। এর পরে জনতা চিটফান্ড সংস্থার অফিসেও ভাঙচুর চালায়। সংস্থার এক কর্ত্রীকে বেধড়ক মারধর করা হয়। এই পরিস্থিতির মধ্যেই পুলিশ জানতে পারে, চিটফান্ড সংস্থার আর এক কর্ত্রীর স্বামী গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন। শেষে তিনটি থানা থেকে বিশাল পুলিশ বাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনে। গ্রেফতার করা হয় ৬ জনকে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত কয়েক বছর ধরে সি এস মুখার্জি রোডের বাসিন্দা মুরারী রায়ের বাড়ির একতলা ভাড়া নিয়ে ‘এন এম জি’ নামে চিটফান্ডটি চালাচ্ছিলেন ওই এলাকারই বাসিন্দা রানি মুখোপাধ্যায় এবং তাঁর বোন, উত্তর ২৪ পরগনার ঘোলার বাসিন্দা দীপালি সিংহরায়। সংস্থার প্রায় ৮ হাজার গ্রাহক রয়েছেন। প্রত্যেকে ৫০০ টাকা দিয়ে নিজেদের নাম নথিভুক্ত করেছিলেন। ওই সংস্থা গ্রাহকদের কাছে নিজেদের ‘স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা’ হিসাবে পরিচয় দিত। গ্রামাঞ্চলে সাক্ষরতা বাড়ানোর কথা বলে সদস্যদের খাতা দিয়ে বিভিন্ন তথ্য লেখার ভারও দিত। বিনিময়ে খাতাপিছু ১২১ টাকা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সংস্থাটি। কিন্তু গ্রাহকদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই তাঁরা টাকা পাচ্ছেন না। যদিও এ ব্যাপারে কেউই পুলিশের কাছে লিখিত কোনও অভিযোগ দায়ের করেননি।
গ্রাহকদের ক্ষোভ যে চরমে পৌঁছেছে, তা আঁচ করেছিলেন রানিদেবী। পুলিশ জানায়, এ দিন সন্ধ্যায় তিনি সরাসরি ফাঁড়িতে এসে জানান, প্রয়োজনে বাড়ি-জিনিসপত্র বিক্রি করে সদস্যদের টাকা ফেরত দেবেন। রানিদেবী যে ফাঁড়িতে এসেছেন, তা চাউর হয়ে যায়। তার পরেই ওই কাণ্ড। কয়েকশো মানুষ ফাঁড়িতে চড়াও হয়। রানিদেবীকে তাদের হাতে তুলে দেওয়ার দাবিও জানায় তারা। ফাঁড়ির ইনচার্জের ঘর তছনছ করা হয়। খবর পেয়ে উত্তরপাড়া থানার আইসি বাহিনী নিয়ে ফাঁড়িতে পৌঁছন। আসে দমকল। পুলিশ লাঠি চালিয়ে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে। অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে জি টি রোড। |
|
হামলার পরে কোন্নগর পুলিশ ফাঁড়ি। সামনে বিধ্বস্ত জিপ। নিজস্ব চিত্র |
এর পরেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। জনতার একটি দল চিটফান্ড সংস্থার অফিসে ভাঙচুর চালায়। তারা মুরারিবাবুর ঘরেও ভাঙচুর, লুঠপাট চালায়। রানিদেবীর বাড়ি থেকে তাঁর বোন দীপালিদেবীকে বের করে এনে মারধর করা হয়। এর পরে ওই বাড়ি ভাঙচুর করতে গিয়ে জনতা রানিদেবীর স্বামী গৌতম মুখোপাধ্যায়ের (৬০) ঝুলন্ত দেহ দেখতে পায়। তারা ফিরে এসে পুলিশের লাঠি চালানোর প্রতিবাদে কিছু ক্ষণ জি টি রোড অবরোধও করে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, স্ত্রীর বিরুদ্ধে ওই অভিযোগ এবং পরিবারের বদনামের আশঙ্কায় গোবিন্দবাবু আত্মঘাতী হন। দেহটি নামিয়ে ময়না-তদন্তে পাঠায় পুলিশ।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নয়ন আলি বলেন, “জনতা মারমুখী ছিল প্রথম থেকেই। ফাঁড়ির আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।” এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, দমকলের একটি ইঞ্জিন আগুন নেভাতে ব্যস্ত। তত ক্ষণে পুড়ে গিয়েছে ফাঁড়ির মোটরবাইক এবং জিপ। আহত দুই পুলিশকর্মীকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা পুলক ঘোষ বলেন, “বাড়ির কয়েক জন ওই চিটফান্ডের গ্রাহক হয়েছিলেন। কেউ টাকা পাননি। তাঁদের ইতিহাস, ভূগোলের যা সব লিখতে দেওয়া হত, তা অজস্র ভুলে ভরা। সদস্য জোগাড় করতে পারলে আরও টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা রাখা হয়নি।”
হুগলির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) অশেষ বিশ্বাস বলেন, “যাবতীয় ঘটনার বিস্তারিত তদন্ত শুরু হয়েছে। চিটফান্ডের দুই কর্ত্রী গ্রেফতার হয়েছেন। গণ্ডগোলে জড়িত থাকার দায়ে আরও ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের খোঁজ চলছে।” |
|
|
|
|
|