|
|
|
|
সিঙ্গুর-বিধিতে জমির বদলে টাকার কথাও |
রঞ্জন সেনগুপ্ত • কলকাতা |
‘সিঙ্গুর জমি পুনর্বাসন ও উন্নয়ন আইন’ নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা চলার ফাঁকেই তার অনুষঙ্গ হিসেবে বিধি কার্যকর করার কথা ঘোষণা করল রাজ্য সরকার।
বৃহস্পতিবার রাজ্যের ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের তরফে বিজ্ঞপ্তি জারি করে এই বিধি কার্যকর করার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে সেই বিধিতে সিঙ্গুরের ‘অনিচ্ছুক’ চাষিদের জমি ফেরতের পাশাপাশি ক্ষতিপূরণের সংস্থানও রাখা হয়েছে।
বিধানসভায় পাস হওয়ার পরে সিঙ্গুর বিলে রাজ্যপাল সম্মতি জানিয়েছেন গত ২০ জুন। তার পরের দিনই সিঙ্গুর আইন কার্যকর করতে সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি হয়। সেই দিন সন্ধ্যায় পরিত্যক্ত ন্যানো কারখানার গেটে নোটিস আটকে রাতেই জমির দখল নেয় রাজ্য সরকার। এ নিয়ে আদালতে মামলা করেছে টাটা গোষ্ঠী। সিঙ্গুর আইনকে ‘অসাংবিধানিক’ বলে অভিযোগ করে তা খারিজ করার দাবি জানিয়েছে তারা। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সৌমিত্র পালের এজলাসে আপাতত সেই মামলার শুনানি চলছে। এরই মাঝে ওই আইনের প্রয়োজনীয় বিধি ঘোষণা করে দিল রাজ্য। ‘সিঙ্গুর জমি পুনর্বাসন ও উন্নয়ন আইন’-এ বলা হয়েছে, সিঙ্গুরে যে সব জমিদাতা ক্ষতিপূরণের টাকা নেননি, সেই সব ‘অনিচ্ছুক’কে সমপরিমাণ জমি ফেরত দেওয়া হবে। এ দিন জারি করা বিধিতে অবশ্য বলা হয়েছে, ‘জমি এবং/অথবা ক্ষতিপূরণ’ দেওয়া হবে। ‘অনিচ্ছুক’ চাষিদের জমি ফেরত দেওয়ার কাজ দ্রুত কার্যকর করতে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করার কথা জানানো হয়েছে বিধিতে। ১৯ সদস্যের সেই কমিটির চেয়ারম্যান হবেন শিল্প ও বাণিজ্য দফতরের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। (উল্লেখ্য শিল্প দফতরই বিধানসভায় সিঙ্গুর বিল পেশ করেছিল।) কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান হবেন আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক। সদস্য-সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন হুগলির জেলাশাসক শ্রীপ্রিয়া রঙ্গরাজন। কমিটিতে সিঙ্গুর জেলা প্রশাসন ও ভূমি দফতরের প্রায় সব আধিকারিক রয়েছেন।
বিধিতে বলা হয়েছে, বিধি কার্যকর হওয়ার তিরিশ দিনের মধ্যে কমিটির কাছে যাবতীয় নথিপত্র-সহ আবেদন জানাতে হবে। সমস্ত দাবি, পাল্টা দাবি ও অভিযোগ খতিয়ে দেখে এবং শুনানির পরে অনিচ্ছুকদের জমি এবং/অথবা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়ে কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে। কমিটির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে। বিধি অনুযায়ী, সিঙ্গুরের জমিতে কর্মরত বর্গাদারদের সঙ্গে ভূমিহীন শ্রমিক এবং অনথিভুক্ত বর্গাদারদের স্বার্থরক্ষার বিষয়টিও দেখবে কমিটি।
সরকারের জারি করা এই বিধিকে কেন্দ্র করে আইনজ্ঞদের মধ্যে দু’রকম ব্যাখ্যা উঠে এসেছে। সরকার পক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য, একটি জমির একাধিক দাবিদার থাকতে পারেন। তাঁদের দাবিও ভিন্ন হতে পারে। আবার কোনও আবেদনকারীকে জমির বদলে অন্য জমি দেওয়ার প্রস্তাব করা হলে তিনি রাজি না-ও হতে পারেন। বিকল্প জমির পরিবর্তে ক্ষতিপূরণ চাইতে পারেন। এই সব দিক বিবেচনা করেই জমির বদলে সমপরিমাণ জমির পাশাপাশি ক্ষতিপূরণের কথাও বলা হয়েছে। আবার, কোনও মালিক জমি ফিরে পেলেও সেই জমিতে কর্মরত ভাগচাষি ও বর্গাদারদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সুরাহা করতেই বিধিতে ওই সংস্থানের কথা বলা হয়েছে।
কিন্তু সরকারি পক্ষের এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন আইনজীবীদের একটি অংশ। যেমন অরুণাভ ঘোষের মতে, “এতে নতুন আইনের উদ্দেশ্যই ব্যাহত হল।” আইনজীবীদের ওই অংশটি বলছেন, “বিধিতে যা বলা হয়েছে, তাতে জমি ও ক্ষতিপূরণ দুই-ই যেমন বোঝায়। তেমনই জমির বদলে ক্ষতিপূরণও বোঝানো যেতে পারে।” তাঁদের প্রশ্ন, “আইনে ‘অনিচ্ছুকদের’ সমপরিমাণ জমি ফেরত দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। ক্ষতিপূরণের কথা বলা নেই। তাই যদি হবে, তা হলে আর ‘ইচ্ছুক-অনিচ্ছুক’-এর মধ্যে পার্থক্য কোথায়?” আর এক আইনজীবীও মনে করেন, এতে দু’টোই বোঝানো যায়। অর্থাৎ, জমির সঙ্গে ক্ষতিপূরণ, অথবা জমির বদলে ক্ষতিপূরণ।
|
|
|
|
|
|