সাইবার জালিয়াতির ফাঁদে এ বার রাঁচির গাড়িমালিকরা
সাইবার-অপরাধীর দৌরাত্ম্য মেট্রো নগরীর চৌহদ্দি ছাড়িয়ে মাঝারি ও ছোট শহরগুলিতেও। সাইবার-জালিয়াতির ফাঁদে এ বার রাঁচি। একটি আন্তঃরাজ্য চক্রের কৌশলে ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট ফাঁকা হয়ে গিয়েছে অন্তত জনা পঞ্চাশ ব্যক্তির। বিনামূল্যে কার ওয়াশ ও দেশের যে-কোনও জায়গায় সস্তায় গাড়ি সার্ভিসিংয়ের টোপ দিয়ে পেট্রোল পাম্পে তেল ভরতে আসা গাড়ি মালিকদের নিশানা করেই ছক কষা হয় জালিয়াতির। কলকাতা ও বেঙ্গালুরুর এটিএম থেকে ঝটপট ওই ‘শিকার’দের টাকা সরানো হয়েছে।
সম্প্রতি এই জালিয়াতির অভিযোগ পুলিশের সামনে এলেও এখনও পর্যন্ত তারা কার্যত অন্ধকারে। সাইবার বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নিয়ে লক্ষ্যভেদের চেষ্টা চলছে। তদন্তে পুলিশের অগ্রগতি বলতে চারজনকে গ্রেফতার। তবে তারা নেহাতই চুনোপুঁটি।
ঠিক কী ভাবে ফাঁদ পাতে জালিয়াতরা? পুলিশ সূত্রের খবর, সম্প্রতি রাঁচির আরগোড়া, জগন্নাথপুর বা এইচইসি-র মতো কয়েকটি এলাকায় পেট্রোল পাম্পগুলির পাশে ঝকঝকে সপ্রতিভ তরুণ-তরুণীদের বসিয়ে কাউন্টার খোলা হয়েছিল। তেল ভরতে আসা গাড়ি-মালিকদের বিনীত ভাবে তাঁরা বলছিলেন, একটি বিশেষ ক্লাবের সদস্য হতে। মাত্র ৩০ টাকা দিয়ে সদস্য হলেই এ দেশের যে কোনও জায়গায় ২৫ শতাংশ ছাড়ে গাড়ি সার্ভিসিংয়ের সুযোগ মিলবে। আর হাতে-হাতে মিলবে একটি কারওয়াশও। পুলিশ জেনেছে, ‘শিকার’দের স্পষ্ট বলা হয়, ওই ৩০ টাকাও ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে দিতে হবে। আর কার্ডরিডার গোছের একটি যন্ত্রে কার্ড ঘষার সঙ্গে-সঙ্গে কার্ডমালিককে নিজের পাসওয়ার্ডটাও ‘এন্টার’ করাতে হবে।
এই পাসওয়ার্ড দেওয়ার মধ্যেই যে লুকিয়ে আছে জালিয়াতির ব্রহ্মাস্ত্র, ‘শিকার’দের বেশির ভাগই তা টের পাননি। তদন্তে পুলিশ জেনেছে, ‘পাসওয়ার্ড’ দেওয়ার সূত্রেই গ্রাহকদের কার্ডের ‘ম্যাগনেটিক স্ট্রিপে’ নথিভুক্ত তথ্য পুরোপুরি হাতিয়ে নিয়ে জালিয়াতেরা সেই কার্ডটির একটি যমজ বা ক্লোন তৈরি করে ফেলেছে। আর ওই যমজ কার্ডের সাহায্যেই রাঁচি থেকে দূরের কোনও শহরে এটিএম থেকে ‘শিকার’-এর টাকা সরানো হয়
ঝাড়খণ্ড পুলিশের ভূমিকাতেও এখন রাঁচিবাসী ক্ষুব্ধ। অনেকেরই বক্তব্য, প্রকাশ্যে দিনের পর দিন ধরে ‘বিশেষ অফার’-এর নামে বেশ কয়েকটি কাউন্টার খুলে নাগরিকদের টোপ দেওয়া হলেও পুলিশ এ ব্যাপারে নির্বিকার ছিল। তদন্তকারীরা এখন জানতে পারছেন, ১ জুন থেকে এই ‘কারওয়াশ’ বিলির টোপ চালু করলেও ১৬ জুন পর্যন্ত জালিয়াতরা ওই কার্ডগুলি ব্যবহার করেনি। ততদিন বহু গ্রাহকের কার্ডের যমজ জন্মে গেলেও ওই সময়টা চুপচাপ থেকে জালিয়াতরা বিশ্বাস অর্জন করছিল মনে করছে পুলিশ। ১৬ জুনের পরে মোবাইলে এসএমএসে গ্রাহকদের অ্যাকাউন্ট থেকে রহস্যময় ভাবে মোটা টাকা সরানোর বার্তা আসতে থাকে। রাঁচির এসএসপি প্রবীণকুমার সিংহ আজ বলেন, “কেউ ডেবিট কার্ডের পাসওয়ার্ড চাইল, আর গ্রাহকেরা সঙ্গে-সঙ্গে তা দিয়ে দিলেন এটা চরম বোকামি। সাইবার-জালিয়াতি ঠেকাতে এই ধরনের ফাঁদের বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত।” তিনি স্বীকার করেন, এই সাইবার-জালিয়াতির বিপদের বিষয়ে সচেতনতার প্রসারে এখনও খামতি রয়েছে।
পুলিশ এখনও পর্যন্ত চার জনকে গ্রেফতার করেছে। ধৃতেরা হল শিবচন্দ্র ঝা, কানহাইয়া ঝা, নবীন ঝা ও অনিল ঝা। তবে এরা নিছকই ‘কমিশন’-এর আশায় রাঁচিতে ‘কারওয়াশ’ বিক্রির কাউন্টার খুলে বসেছিল বলে পুলিশকে জানিয়েছে। জালিয়াতির বিষয়ে তেমন কিছু জানত না। এক পুলিশকর্তা বলেন, “ওই চারজনকে জেরা করে জানা যাচ্ছে চক্রের ডালপালা মহারাষ্ট্র থেকে ছড়িয়েছ্।ে অভয় সিংহ ও মুকেশ সিংহ নামে দুই চাঁই এদের সঙ্গে যোগাযোগ করে।” আপাতত দেশের বিভিন্ন শহরের এটিএম থেকে ক্লোজড সার্কিট টিভি-র ফুটেজ জোগাড় করে জালিয়াতদের টাকা সরানোর ছবির সাহায্যে তদন্ত চালাতে চায় পুলিশ।
ঝাড়খণ্ড পুলিশকে সহায়তাকারী ‘এথিক্যাল হ্যাকার’দের সাহায্যে তদন্ত এগোচ্ছে।
Previous Story Desh Next Story


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.