|
|
|
|
দল ও সরকারের সুর বাঁধতে আসরে সনিয়া |
প্রেমাংশু চৌধুরী • নয়াদিল্লি |
মনমোহন সিংহের নেতৃত্বাধীন সরকার ও তাঁর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস দলের মধ্যে দূরত্ব ঘোচানোর চেষ্টায় নামছেন সনিয়া গাঁধী।
লোকপাল বিল থেকে শুরু করে আন্না হাজারে বা রামদেব প্রসঙ্গে দল ও সরকারের মধ্যে বার বার বিরোধ দেখা দেওয়ায় চিন্তিত কংগ্রেস সভানেত্রী। প্রণব মুখোপাধ্যায়ের দফতরে গোয়েন্দাগিরি নিয়েও সরকারের দু’টি মন্ত্রকের সংঘাত স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, যা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীও উদ্বিগ্ন। শুধু সরকার ও দলের মধ্যেই মতপার্থক্য নয়, কংগ্রেস দলের মধ্যেও বিভিন্ন প্রসঙ্গে একাধিক স্বর শোনা যাচ্ছে। দল যা বলছে, দশ জনপথ ও রাহুল গাঁধীর ঘনিষ্ঠ দিগ্বিজয় সিংহের মতো নেতা তার উল্টো অবস্থান নিচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে দল ও সরকারের সকলকে একই সুরে বাঁধার চেষ্টায় আগামিকাল কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক ডেকেছেন সনিয়া। মার্চ মাসে ওয়ার্কিং কমিটি পুনর্গঠিত হয়। তার পরে এই প্রথম কমিটির বৈঠক বসছে।
কংগ্রেস নেতা জনার্দন দ্বিবেদী বলেছেন, “বৈঠকে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে।” তবে তার মধ্যে আলোচনার মূল বিষয়বস্তু অবশ্যই লোকপাল বিল। প্রধানমন্ত্রী বা বিচার ব্যবস্থার উচ্চপদগুলিকে লোকপালের আওতায় আনা হবে কি না, তা নিয়ে কংগ্রেস এখনও প্রকাশ্যে কোনও অবস্থান নেয়নি। সরকারের তরফে অবশ্য বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীকে কোনও ভাবেই লোকপালের আওতায় আনা সম্ভব নয়। এ নিয়ে দলের মধ্যেই আবার ভিন্ন মত রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন, প্রধানমন্ত্রী নিজেই তাঁর দফতরকে লোকপালের আওতায় নিয়ে আসার প্রস্তাব দিয়ে দৃষ্টান্ত খাড়া করতে পারেন। দুর্নীতির একাধিক অভিযোগে কোণঠাসা সরকারের ভাবমূর্তি এর ফলে অনেকটাই উজ্জ্বল হতে পারে। কংগ্রেসও এই চালে রাজনৈতিক ভাবে লাভবান হবে। লোকপাল নিয়ে আগামী ৩ জুলাই সর্বদল বৈঠক ডাকা হয়েছে। তার আগে দলীয় ও সরকারি অবস্থানকে একই বিন্দুতে নিয়ে আসার চেষ্টা হবে ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে।আন্না হাজারে ও রামদেবের মতো নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের ক্ষেত্রে সরকার কী অবস্থান নেবে, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই সরকার ও দলের মধ্যে বিবাদ তৈরি হয়েছিল। সরকারের শীর্ষ মন্ত্রীরা যে ভাবে রামদেবের সঙ্গে বৈঠক করতে বিমানবন্দরে চলে গিয়েছিলেন, দল তা থেকে দূরত্ব বজায় রেখেছিল। পরে আবার সরকারই রামদেবকে অনশন থেকে তুলতে কড়া পদক্ষেপ করে। দিগ্বিজয় সিংহ গত কাল বলেছেন, আন্না হাজারে ফের অনশনে বসলে রামদেবের মতোই কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আজ আবার তিনি নরম সুর নেওয়ার চেষ্টা করলেও, কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, দিগ্বিজয় ভুল কিছু বলেননি। আন্নাদের আর মাথায় তোলা হবে না। দলের এক শীর্ষ নেতা বলেন, “নিজেকে গাঁধীবাদী বললেই দু’দিনে কেউ গাঁধীজি হয়ে যায় না। তার জন্য অনেক আত্মত্যাগ করতে হয়। অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস, মাঝপথে চাকরি ছেড়ে দেওয়া আমলাদের নির্দেশ শুনে সরকারের কাজ চলতে পারে না। এত দিন যা হয়েছে, যথেষ্ট হয়েছে।” কংগ্রেস নেতৃত্বের একাংশ আবার মনে করেন, সনিয়া গাঁধীর নেতৃত্বাধীন জাতীয় উপদেষ্টা পরিষদে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের মতামত নিতে গিয়েই আন্না-রামদেবদের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। তবে সঙ্গত কারণেই এ নিয়ে কেউই মুখ খুলতে রাজি নন।
অর্থ মন্ত্রকে গোয়েন্দাগিরির সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে সরকারের দুই শীর্ষ মন্ত্রী, প্রণব ও চিদম্বরমের মধ্যে বিবাদ নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে। প্রণববাবু নিজে বিষয়টি ‘বোগাস’ বলে উড়িয়ে দিয়ে জানান, আইবি-র তদন্তে কিছু পাওয়া যায়নি। কংগ্রেসের অনেক নেতা আবার বলছেন, প্রণববাবু বলেছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীন আইবি কিছু পায়নি। কিন্তু তাঁর মন্ত্রকের অধীনস্থ সিবিডিটি তদন্তে কী পেয়েছিল, সে বিষয়ে কিছু জানাননি। প্রণববাবুর অফিসে গোয়েন্দাগিরি নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে আজ এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক দিগ্বিজয় সিংহ দাবি তুলেছেন, “সরকারের এ বিষয়ে অবস্থান নেওয়া উচিত এবং কে দায়ী, তার তদন্ত হওয়া উচিত।” দিগ্বিজয়ের এই বক্তব্যও কংগ্রেসের সরকারি অবস্থানের সম্পূর্ণ উল্টো। এর পরে দলের মিডিয়া সেলের চেয়ারম্যান জনার্দন দ্বিবেদী পরিস্থিতি সামলাতে বলেন, “দিগ্বিজয় বোঝাতে চেয়েছেন, তদন্ত হতেই পারে, সেটা এমন কিছু নয়। দলের অবস্থান হল, প্রণববাবুর বক্তব্যের পরে আর কিছুর প্রয়োজন থাকে না।” কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, দিগ্বিজয়ের এই দাবি অন্য দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ বিভিন্ন বিষয়ে তিনি বরাবরই চিদম্বরমের বিপরীত অবস্থান নিয়েছেন। প্রণবের অফিসে গোয়েন্দাগিরিতেও সেই চিদম্বরমের দিকেই অভিযোগের আঙুল উঠেছে।
ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে যেমন সনিয়া, মনমোহন, প্রণব, দিগ্বিজয়রা উপস্থিত থাকবেন, তেমনই কমিটির স্থায়ী আমন্ত্রিত সদস্য হিসেবে উপস্থিত থাকবেন চিদম্বরমও। সব মিলিয়ে আগামিকালের ওই বৈঠক জমজমাট হতে চলেছে বলেই মনে করা হচ্ছে। |
|
|
|
|
|