|
|
|
|
রাজ্যসভার ভোট নিয়ে বেনজির সঙ্কটে বামেরা |
সন্দীপন চক্রবর্তী • কলকাতা |
রাজ্যসভার আসন্ন নির্বাচন বেজায় সঙ্কটে ফেলে দিয়েছে বামফ্রন্টকে! সঙ্কটের মূল কারণ প্রত্যাশিত ভাবেই পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা ভোটে নজিরবিহীন বিপর্যয়।
আগামী জুলাইয়ে এ রাজ্য থেকে রাজ্যসভার ছ’টি আসনে নির্বাচন। তার মধ্যে বামেদের দখলে ছিল চারটি। কিন্তু বিধানসভায় এখন বামেদের যা শক্তি, তাতে মাত্র এক জনকে রাজ্যসভায় পাঠাতে পারবে তারা। এক ধাক্কায় রাজ্যসভায় ২২ থেকে কমে যাবে তিন জন প্রতিনিধি। শুধু সংখ্যা কমে যাওয়াই নয়। এ যাত্রায় রাজ্যসভার বিদায়ী সাংসদদের সঙ্গে এমন আনুষঙ্গিক বিষয় জড়িত যে, কোন তিন জনকে বাদ দেওয়া হবে, তা নিয়ে বিপাকে বামফ্রন্ট। প্রসঙ্গত, আগামী বছর এ রাজ্য থেকে ফের চার জন বাম সাংসদের মেয়াদ শেষ হবে।
আসন্ন রাজ্যসভা ভোটে সাংসদ নির্বাচনের জন্য ন্যূনতম ৪২ জন বিধায়কের ‘প্রথম পছন্দের’ ভোট লাগবে। সিপিএমের বিধায়ক-সংখ্যা এই মুহূর্তে ৩৯। শরিকদের সমর্থন নিয়ে তবেই তারা রাজ্যসভায় সাংসদ পাঠাতে পারবে। যে চার জনের মেয়াদ ফুরোচ্ছে, তাঁদের এক জন আরএসপি-র বর্ষীয়ান নেতা অবনী রায়। বর্তমান পরিস্থিতিতে আরএসপি রাজ্যসভায় আসন চেয়ে সিপিএম-কে ‘অস্বস্তি’তে ফেলতে চায় না। তবে তাদের সমস্যা অন্যত্র। আবার সিপিএমের পলিটব্যুরোর তিন সদস্য সীতারাম ইয়েচুরি, বৃন্দা কারাট এবং মহম্মদ আমিনের মেয়াদ ফুরনোয় দলে সমস্যা দেখা দিয়েছে। তার মধ্যে সঙ্কট ঘনীভূত সর্বভারতীয় স্তরের দুই ‘গুরুত্বপূণর্’ নেতা-নেত্রী ইয়েচুরি ও বৃন্দাকে নিয়ে। |
|
ইয়েচুরি এখন রাজ্যসভায় সিপিএমের দলনেতা এবং টু-জি স্পেকট্রাম-কাণ্ডে গঠিত যৌথ সংসদীয় কমিটির সদস্য। সেই পরিস্থিতির বিচারে দলের একাংশের মতে, তাঁরই ফের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এই অংশের বক্তব্য, দলের তিন বিদায়ী সাংসদের মধ্যে সংসদীয় ভূমিকায় সব চেয়ে বেশি দায়িত্ব এখন ইয়েচুরিই পালন করেন। তিনি পরিবহণ, পর্যটন ও সংস্কৃতি বিষয়ক স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান, আরও চারটি সংসদীয় কমিটির সদস্য। ফলে তাঁকে বাদ দেওয়া ‘অসুবিধাজনক’। ইয়েচুরিকে রাখলে বাদ যেতে হয় বৃন্দাকে। দলের অন্য অংশের আবার বক্তব্য, সিপিএমে উল্লেখযোগ্য মহিলা মুখের আকালে একমাত্র ভরসা বৃন্দা! পলিটব্যুরোর একমাত্র মহিলা সদস্যও তিনি। খোদ সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাটের ঘরণীই মহিলা সংরক্ষণ বিল নিয়ে সিপিএমের তরফে প্রধান যোদ্ধা। সংসদে মহিলাদের ক্ষমতায়ন এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ সংক্রান্ত এমন দু’টি স্থায়ী কমিটির সদস্য, যা সিপিএমের কাছে রাজনৈতিক দিক থেকে ‘তাৎপর্যপূর্ণ’। উপরন্তু তিনি কলকাতার ভোটার। দলের এই অংশের মতে, ইয়েচুরি পশ্চিমবঙ্গে ‘বহিরাগত’। বৃন্দা নন।
কিন্তু সিপিএম-কে বাছতে হবে এক জনকেই। কেরল থেকে আগামী বছর মেয়াদ ফুরোবে সিপিএমের পি আর রাজনের। কিন্তু তত দিন অপেক্ষা না-করে তামিলনাড়ুর দিকে নজর দিচ্ছে সিপিএমের একাংশ। এডিএমকে-র কে ভি রামলিঙ্গম রাজ্যসভা থেকে ইস্তফা দিয়ে জয়ললিতার মন্ত্রিসভায় চলে যাওয়ায় ওই আসনটিতে এ বারই নির্বাচন হবে। সিপিএম জয়ার জোটে থাকায় তাঁকে অনুরোধ করে দুই পলিটব্যুরো সদস্যের অন্তত এক জনের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা যায় কি না, তলে তলে তা নিয়েও খোঁজখবর চলছে। বিদায়ী সাংসদদের মধ্যে আমিনও একাধারে ‘অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য’ শ্রমিক এবং মুসলিম নেতা। তবে আমিনের বয়স হয়েছে বলে সংসদীয় রাজনীতি থেকে ‘অবসর’ নেওয়া তাঁর পক্ষে সহজতর। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের কথায়, “ইউপিএ সরকার নানা কেলেঙ্কারিতে জর্জরিত। আগামী কয়েক বছর অবস্থা বদলাবে বলে মনে হচ্ছে না। এই সময় এমন প্রতিনিধি দরকার, যিনি সংসদে এই পরিস্থিতির ফায়দা তুলতে পারবেন।”
আরএসপি-র সমস্যা, দিল্লিতে ফিরোজ শাহ রোডে অবনীবাবুর বাড়িই দলের সর্বভারতীয় কার্যালয়। অবনীবাবু সাংসদ না-থাকলে দিল্লিতে দলের কার্যালয়ই উঠে যাওয়ার উপক্রম! দলের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, “এখন বামফ্রন্ট থেকে আরও কোনও প্রতিনিধিকে রাজ্যসভায় পাঠানো সম্ভব নয়। লোকসভায় আমাদের সাংসদ মনোহর তিরকের নামে অবনীবাবুর বাংলোটি বরাদ্দ করা যায় কি না, চেষ্টা করতে হবে। ত্রিদিব চৌধুরীও থাকতেন বলে বাড়িটি আমাদের কাছে স্মৃতিবিজড়িত।”
সিপিএম সূত্রের খবর, ইয়েচুরি ও বৃন্দার মধ্যে কাউকে বাছা নেহাতই ‘স্পর্শকাতর’ হলে মহম্মদ সেলিমের নামও দলের একাংশে বিবেচিত হচ্ছে। অতীতে সেলিম রাজ্যসভা ও লোকসভা, দু’কক্ষেই সাংসদ ছিলেন। ‘সুবক্তা’ সেলিম সম্প্রতি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে জাতীয় বিষয়ে দলের তরফে বক্তব্য জানানোর দায়িত্ব পালন করছেন। দলের একাংশ আবার রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ এবং কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য, ‘কারাট-ঘনিষ্ঠ’ নীলোৎপল বসুর নাম তুলছেন। শেষ পর্যন্ত এক জনকে বাছার ‘কঠিন’ সিদ্ধান্ত নিতে হবে সিপিএম-কে! |
|
|
|
|
|