|
|
|
|
ফ ব-য় দায়িত্ব হস্তান্তর করতে চলেছেন অশোক |
সন্দীপন চক্রবর্তী • কলকাতা |
দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে দীর্ঘ ৬৩ বছরের ইনিংসে যবনিকা পড়তে চলেছে! বাম শরিক ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদকের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিতে চলেছেন প্রবীণ নেতা অশোক ঘোষ। রাজ্য সম্পাদকের দায়িত্ব হস্তান্তরের পরে দলের আর কোনও পদেই থাকতে চান না রাজ্যে বামফ্রন্ট তৈরির অন্যতম কারিগর এই অশীতিপর নেতা। দায়িত্ব ছেড়ে একই সঙ্গে ‘বার্তা’ দিতে চান বড় শরিক সিপিএমকেও। যারা নির্বাচনী বিপর্যয়ের পরে দলে নেতৃত্ব বদলের প্রশ্ন খারিজ করে দিয়েছে।
সেই ১৯৪৮ সাল থেকে টানা ফ ব-র রাজ্য কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদে থাকার পরে এ বার নেতৃত্বে নতুন মুখকে তুলে আনতে চান অশোকবাবু। ফ ব থেকে বেরিয়ে ৬ বছর আগে তৈরি হয়েছিল জনবাদী ফরওয়ার্ড ব্লক। এখন তারা আবার ফ ব-র সঙ্গে মিশে যাবে বলেই দু’দলের নেতৃত্ব নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অধুনা জনবাদী ফরওয়ার্ড ব্লকের সাধারণ সম্পাদক, ২০০৫ সালে ফ ব থেকে বহিষ্কৃত জয়ন্ত রায় পুরনো দলে ফিরে ‘গুরুদায়িত্ব’ পেতে চলেছেন বলে ফ ব সূত্রের খবর। অশোকবাবুর দায়িত্ব হস্তান্তর কী ভাবে হবে, সেই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এবং পদ্ধতিগত খুঁটিনাটি ঠিক করার জন্য ২৬ জুন, রবিবার ফ ব-র রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বিশেষ বৈঠক ডাকা হয়েছে। অশোকবাবুর অব্যাহতি নেওয়ার প্রস্তাবে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যেরা কী মনোভাব নেন, তা নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে ফ ব-সহ গোটা বাম শিবিরেই।
তার আগে ২২ জুন ফ ব-র ৭২তম প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠান জনবাদী ফরওয়ার্ড ব্লকের সঙ্গে যৌথ ভাবে পালন করা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, প্রতিষ্ঠা দিবসের কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠানে মহাজাতি সদনে ওই দিন ফ ব-র সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত বিশ্বাস-সহ দু’দলেরই প্রথম সারির নেতাদের উপস্থিত থাকার কথা। জয়ন্তবাবুদের প্রত্যাবর্তনে ‘ক্ষুব্ধ’ নরেন চট্টোপাধ্যায়ের মতো নেতারা ওই অনুষ্ঠানে যান কি না, সেই দিকে নজর রাখছেন ফ ব রাজ্য নেতৃত্ব।
অভিজ্ঞ রাজনীতিক অশোকবাবু দলের অন্দরে পালাবদলের প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শুরু করেছেন। রাজ্য সম্পাদক হিসাবে প্রতিটি জেলায় তিনি নির্দেশিকা পাঠিয়ে বলেছেন, পুনর্মিলন নিয়ে জনবাদী ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে ফ ব-র জেলা নেতারা যেন আলোচনায় বসেন। রাজ্যের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেবেন রাজ্য নেতৃত্ব। রাজ্য সম্পাদকের পদ থেকে তাঁর অব্যাহতি নেওয়ার বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে অশোকবাবুর বক্তব্য, “আমাদের দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের পরে সাধারণ সম্পাদক বলেছিলেন, নেতৃত্ব বদলের প্রক্রিয়া চলছে। সেইমতোই প্রক্রিয়া এগোচ্ছে।” তবে দলের অন্দরে অশোকবাবু জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক কালে সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম, দিনহাটা-সহ একাধিক বিষয়ে এক রকম অবস্থান নিয়েও ফ ব পিছিয়ে আসায় দলের মধ্যেই রাজ্য সম্পাদককে বারবার প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে। সর্বোপরি বিধানসভা ভোটে হেরে বামফ্রন্টের শরিক হিসাবে ফ ব-ও এখন ক্ষমতার বাইরে। সব মিলিয়ে নেতৃত্ব হস্তান্তরের এটাই ‘উপযুক্ত সময়’। দলের একাংশের মতে, রাজ্য সম্পাদকের পদ থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে সরে গেলেও দলের ‘অভিভাবক’ হিসাবে চেয়ারম্যান বা ওই জাতীয় কোনও ভূমিকায় থেকে যান অশোকবাবু। কিন্তু অশোকবাবু তাতে রাজি নন। রাজ্য সম্পাদকের দায়িত্ব অন্যকে বুঝিয়ে দিয়ে অন্য কোনও পদে গেলে তা ‘দৃষ্টিকটূ’ হবে বলেই অশোকবাবুর মত। তাঁর কথায়, “গোটা প্রক্রিয়া দল চূড়ান্ত করবে।”
যে কোনও দু’টি দলের পুনর্মিলন হলেই পদ নিয়ে ঠোকাঠুকি লাগে। এই ক্ষেত্রেও সেই সমস্যা এড়াতে একটি ‘কার্যকর সূত্র’ বার করেছেন ফ ব নেতৃত্ব। দেবব্রতবাবুর কথায়, “আলাদা হওয়ার আগে জনবাদী ফরওয়ার্ড ব্লকের যে নেতা যে পদে ছিলেন, আপাতত সেই পদেই তাঁদের ফিরিয়ে নেওয়া হবে। কমল গুহ ফিরে আসার সময়েও (সমাজবাদী ফরওয়ার্ড ব্লক) একই পদ্ধতি নেওয়া হয়েছিল।” প্রসঙ্গত, বহিষ্কৃত হওয়ার আগে জয়ন্তবাবুই ফ ব-য় অশোকবাবুর পরবর্তী স্তরের নেতা হিসাবে পরিচিত ছিলেন। ফ ব নেতৃত্বের মতে, মুর্শিদাবাদ ও দক্ষিণ দিনাজপুর জেলাতেই শুধু দুই সংগঠন মিলে যাওয়াকে কেন্দ্র করে সমস্যা হতে পারে। তাই ২৩ জুন মুর্শিদাবাদ জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সঙ্গে আলাদা বৈঠকে বসছে ফ ব-র রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী।
বিধানসভা ভোটে বিপর্যয়ের পর থেকে আলিমুদ্দিনে বামফ্রন্ট বৈঠকে যোগ দেওয়া বন্ধ করেছেন অশোকবাবু। নির্বাচনী প্রচারেও বাইরে বিশেষ কোথাও যাননি।
এখনও রাজ্য দফতরের বাইরে দলীয় কর্মসূচিতে বিশেষ যাচ্ছেন না। অনেক দিন পরে রবিবার শুধু বেলেঘাটায় দলের কর্মীদের ‘বিশেষ আমন্ত্রণে’ নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর একটি মূর্তি উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। অর্থাৎ নিজেকে ‘গুটিয়ে’ নেওয়ার প্রক্রিয়া তিনি শুরু করে দিয়েছেন। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, “আমাদের দলে দীর্ঘ দিনের গড়ে-ওঠা সংস্কৃতি অনুযায়ী, অশোকদা’র কাছে মুখোমুখি সব কথা বলতে পারলে অনেক বড় ক্ষোভও মিটে যেত। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কী হবে, জানি না!” |
|
|
|
|
|