|
|
|
|
দুর্যোগে বিপর্যস্ত জনজীবন, ব্যাহত পরিষেবা |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
তিন দিনের টানা বৃষ্টিতে পুরুলিয়া-বাঁকুড়ায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রবল বর্ষণে দেওয়াল চাপাপড়ে দেওয়াল চাপা পড়ে মৃত্যু এবং নদীতে তলিয়ে যাওয়ারও খবর মিলেছে বাঁকুড়ায়। শুক্রবার রাতে বাড়ির দেওয়াল চাপা পড়ে বাঁকুড়া শহরে শেখ রহিম কুরেশি (৭০) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। এবং রবিবার সকালে সাইকেলে করে রেশন সামগ্রী আনতে গিয়ে শালিনদীতে তলিয়ে গেলেন সোনামুখীর কুণ্ডপুষ্করিণী গ্রামের বাসিন্দা সুমন চট্টরাজ (২১) নামে এক যুবক। |
|
পুরুলিয়ায় প্রদীপ মাহাতোর তোলা ছবি। |
এ দিকে, গত কয়েক দিনের প্রবল বৃষ্টিতে জনজীবন কার্যত বিপর্যস্ত হল বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ায়। বিদ্যুতের তারে গাছ উপড়ে পড়ে যাওয়ায় দুই জেলার বেশকিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তাই জল সরবরাহ বন্ধের পাশাপাশি হাসপাতালও ছিল অন্ধকারাচ্ছন্ন। জানা গিয়েছে, বিদ্যুতের সাবস্টেশনে যান্ত্রিক ত্রুটির জেরে শনিবার বিকেল থেকে প্রায় ২৪ ঘণ্টা অন্ধকার হয়ে পড়েছিল বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। বিদ্যুৎ না থাকায় ৭টির বেশি ওয়ার্ড অন্ধাকার ছিল। এক্সরে, আল্ট্রাসোনোগ্রাফির মতো বিভিন্ন পরীক্ষাও বন্ধ ছিল। অন্ধকার হয়ে পড়ে হস্টেল ও আবাসনগুলি। ব্যাহত হয় জল সরবরাহ। হাসপাতাল সুপার পঞ্চানন কুণ্ডু বলেন, “জেনারেটরের মাধ্যমে অতি গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা চালু রাখা ছিল। ভবিষ্যতের কথা ভেবে আমরা আরও উন্নত মানের জেনারেটর কেনার কথা ভাবছি।” বর্তমানে হাসপাতালে প্রায় ১১০০ রোগী রয়েছেন বলে সুপার জানিয়েছেন। পাশাপাশি পুরুলিয়ার কাশীপুরে বিদ্যুৎ না থাকার জন্য জল সরবরাহ বন্ধ ছিল। বিদ্যুৎ পরিষেবার সঙ্গে বিপর্যস্ত হয়েছে টেলি যোগাযোগ ব্যবস্থা।
বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের পাশাপাশি দুই জেলায় প্রচুর মাটির বাড়ি ভেঙে পড়েছে, সব্জি ও ধান চাষের ক্ষতি হয়েছে। রবিবার দুপুরের পর থেকে বাঁকুড়া জেলার অধিকাংশ এলাকাতে জল নামতে শুরু করেছে। তবে তার আগে বৃষ্টি ও ঝড়ের দাপটে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে ইন্দাস ব্লকের ভগবতীপুর গ্রামে শালীনদীর উপরে ৫০ মিটার নম্বা একটি বাঁশের সাঁকো ভেঙে যাওয়ায় সোমসার, পলাশডাঙা, ভগবতীপুর, পারুল-সহ ১০-১২টি গ্রামের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। শনিবার বিকেলে রাইপুরের বাঁধগোড়া গ্রামে একটি পুকুরের পাড় ধসে যাওয়ায় ওই এলাকা ৮টি মাটির বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খাতড়ার ভারপ্রাপ্ত মহকুমাশাসক নকুলচন্দ্র মাহাতো বলেন, “মহকুমার ৮টি ব্লকে ১৪৪০টি কাঁচা বাড়ি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৭৬১০টি বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত। এ ছাড়া, ৩০০ হেক্টর ধানবীজের চারা, ৪৪৫ হেক্টর সব্জি, ১৫০ হেক্টর পানের বরজ ও আরও বেশ কিছু জমির ফসল নষ্ট হয়ে গিয়েছে।” এ দিকে, এই বৃষ্টির জেরে মুকুটমণিপুরে কংসাবতী জলাধারে জল জমা হয়েছে। কংসাবতী সেচ দফতরের সুপারিন্টেডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার(১) ইয়ার মহম্মদ মিদ্যা রবিবার বলেন, “এ দিন দুপুর পর্যন্ত জলাধারে ৪১৭ ফুট জল রয়েছে।”
মহকুমাশাসক (বিষ্ণুপুর) সুশান্ত চক্রবর্তী বলেন, “বিষ্ণুপুর, সোনামুখী, পাত্রসায়র, ইন্দাস, কোতুলপুর ও জয়পুর ব্লকে আংশিক ক্ষতি হয়েছে ৫৩৯২টি বাড়ি। সম্পূর্ণ ভাবে ভেঙে পড়েছে ১০৫৫টি বাড়ি। ২০০ হেক্টর বীজতলা, ৫৭ হেক্টর তিল জমি জলের ডুবে গিয়েছে।” তিনি জানান, ইন্দাস ও বিষ্ণুপুরে দু’টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। ওই দুই শিবির থেকে ১৩৪ জনকে রান্না করা খাবার দেওয়া হচ্ছে। |
|
সিমলাপালে সেতু ছাপিয়ে বইছে শিলাবতী। চলছে মাছ ধরার তোড়জোড়ও। ছবি: উমাকান্ত ধর। |
বাকুড়া জেলা আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ৩২০ মিমি বৃষ্টি হয়েছে। জেলাশাসক মহম্মদ গুলাম আলি আনসারি বলেন, “ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রিপল ও খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হচ্ছে। বিডি এবং ত্রাণ দফতরের কর্মীদের নিজ নিজ এলাকায় নজর রাখার ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের কাজ করছেন। চাষের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ খোঁজ করা হচ্ছে।” বাঁকুড়ার মহকুমাশাসক শ্যামলকুমার মণ্ডল বলেন, “বাঁকুড়া মহকুমা এলাকায় ৪৩০টি বাড়ি সম্পূর্ণ ভেঙে গিয়েছে। ১৯৫০টি ঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষত ওন্দা, ছাতনা, বাঁকুড়া ২ ও বড়জোড়া ব্লকে ক্ষতির পরিমাণ বেশি।” এ ছাড়া, বুধবার থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। খাতড়া মহকুমার আটটি ব্লকে বেশ কিছু গ্রামের বাসিন্দারা কার্যত বন্দিদশা কাটিয়েছেন। সিমলাপাল ব্লকে আনন্দপুরে শিলাবতী নদীর সেতুর উপর দিয়ে রবিবার সকাল পর্যন্ত জল বইতে থাকায় যানচলাচল ব্যাহত হয়। একই ভাবে রাইপুর ব্লকে অমৃতপাল গ্রামে ভৈরববাঁকি নদীর সেতুর উপর দিয়ে এ দিনও জল বইতে থাকায় বাঁকুড়া-ঝাড়গ্রাম রাজ্য সড়কে যানচলাচল বন্ধ ছিল। অবশ্য দুপুরের পর থেকে যানচলাচল ব্যবস্থা কিছুটা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। |
|
রবিবার এমনই ছিল বাঁকুড়া শহরের পথ। ছবি: অভিজিৎ সিংহ। |
বাঁকুড়ার মতো পুরুলিয়ায়ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টি ও ঝড়ের দাপটে জেলায় ভেঙে পড়েছে ৬,৬৮০টি মাটির বাড়ি। আংশিক ক্ষতি হয়েছে ৩২,০৫০টি মাটির বাড়ি। বাড়ি ভেঙে পড়ার পাশাপাশি ঝালদা-বাঘমুণ্ডি রাস্তায় কুটিডি সেতু, বলরামপুর-বাঘমুণ্ডি রাস্তায় শোভা নদীর উপরে অস্থায়ী সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বরাবাজারের বিডিও দেবজিৎ বসু রবিবার বলেন, “এই দুর্যোগে স্থানীয় নদীগুলিতে জল বেড়েছে। এলাকায় প্রচুর বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পুরোপুরি ক্ষতির হিসেব পাইনি।” চাষের ক্ষতি হয়েছে ঠিকই এই বৃষ্টি পরবর্তী সময়ে চাষের জন্য অত্যন্ত সহায়ক বলে পুরুলিয়া জেলা কৃষি দফতর জানিয়েছে। এমন কী শনিবার রঘুনাথপুরের ডাকঘরে জল ঢুকে গিয়েছিল। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্যোগের কারণে আজ, সোমবার পানীয় জল সমস্যা-সহ বেশ কয়েকটি সভা স্থগিত রাখা হয়েছে। জেলাশাসক অবনীন্দ্র সিংহ বলেন, “বৈঠক স্থগিত রাখা হয়েছে। পরে দিন ধার্য করা হবে।” |
|
দাঁড়াল রাজধানী |
নিজস্ব সংবাদদাতা • আদ্রা |
ইঞ্জিন বিকল হয়ে প্রায় দেড়ঘন্টা দাঁড়িয়ে রইলো রাজধানী এক্সপ্রেস। রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার সন্ধ্যায় আদ্রা-মেদিনীপুর শাখার ইন্দ্রবিল স্টেশনের অদূরে বিকল হয়ে যায় ভূবনেশ্বর-নয়াদিল্লি রাজধানী এক্সপ্রেসের ইঞ্জিন। পরে আদ্রা থেকে অন্য ইঞ্জিন পাঠিয়ে ট্রেনটিকে আদ্রা স্টেশনে নিয়ে আসা হয়। েআদ্রার ডিআরএম অমিত কুমার হালদার বলেন, “অন্য ইঞ্জিন পাঠিয়ে ট্রেনটিকে আদ্রায় নিয়ে আসা হয়। ওই ইঞ্জিনটিই ট্রেনটিকে গোমো স্টেশন পর্যন্ত নিয়ে যায়।” রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, গোমোতে ইঞ্জিন মেরামতি কেন্দ্র রয়েছে, সেখান থেকে বিশেষ ইঞ্জিন দিয়ে ট্রেনটি গন্তব্যের দিকে রওনা হয়েছে। |
|
|
|
|
|