|
|
|
|
নাগাড়ে বৃষ্টি, জেলা জুড়ে ব্যাহত জনজীবন |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
গভীর নিম্নচাপজনিত টানা বর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জেলার স্বাভাবিক জনজীবন। ভেঙেছে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট। জল ঢুকেছে জেলার বেশ কয়েকটি ব্লকে। সব মিলিয়ে দুর্ভোগে বীরভূমবাসী।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে রামপুরহাট এলাকায়। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ প্রায় ১৩১.৪ মিলিমিটার। রামপুরহাটের মহকুমাশাসক বিধান রায় বলেন, “রামপুরহাট ২ ব্লকের বিষ্ণুপুর পঞ্চায়েতের কালিদহ ও বিষ্ণুপুর গ্রামে কিছু এলাকায় জল ঢুকেছে। ওই ব্লকেরই বুধিগ্রাম পঞ্চায়েতের পাতিনা, লাহা, নারায়ণপুর গ্রামগুলির বিভিন্ন রাস্তায় জল উঠেছে।” জলমগ্ন হয়েছে রামপুরহাট পুর এলাকাও। ৮, ৯ ও ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে বেশি জল ঢুকেছে। আংশিক জলমগ্ন হয়েছে ১, ৩, ৪, ৬, ৭ ও ১৭ নম্বর ওয়ার্ডও। ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের দাবি, নিকাশি ব্যবস্থার ত্রুটির কারণেই এই অবস্থা। |
|
রামপুরহাটে চলছে নর্দমা পরিষ্কারের কাজ। ছবিটি সব্যসাচী ইসলামের তোলা। |
রবিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মহকুমাশাসকের উপস্থিতিতে শহরের মধ্য দিয়ে যাওয়া পানাগড়-মোরগ্রাম জাতীয় সড়কের পাশের ‘হাইড্রেন’ সংস্কারের কাজ চলে। বিধানবাবু বলেন, “হাইড্রেন সংস্কারের অভাবে পুরসভার জাতীয় সড়ক লাগোয়া ওয়ার্ডের বেশ কিছু নীচু এলাকায় জল ঢুকেছে। ড্রেন ছাপিয়ে জল যাতে ওয়ার্ডে ঢুকতে না পারে সে জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।” পুরপ্রধান নির্মল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পুর এলাকায় বিভিন্ন ওয়ার্ডে বেশ কিছু মাটির বাড়ি ভেঙে গিয়েছে।” উপ পুরপ্রধান আব্বাস হোসেন বলেন, “ঠিক কত বাড়ি ভেঙেছে তার হিসেব-নিকেশ চলছে। মহকুমাশাসকের কাছ থেকে ৫০০ ত্রিপল পাওয়া গিয়েছে। এর মধ্যে ৩০০ ত্রিপল বিলি করা হয়েছে। ২০০টি মজুত রাখা হয়েছে।”
ক্ষতি হয়েছে জেলার অন্যত্রও। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বোলপুর মহকুমার চারটি ব্লক ও বোলপুর পুরসভা এলাকার একাংশে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রচুর ঘরবাড়ি। বোলপুরের মহকুমা বিপর্যয় ব্যবস্থাপন আধিকারিক কাশীনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “রবিবার সকাল পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ৯০০টি বাড়ি সম্পূর্ণ এবং ২০৫৪টি বাড়ি আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মহকুমার মোট ৩৭৭টি গ্রাম এবং পুরসভার ১৯টি ওয়ার্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।” শ্রীনিকেতন আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত তিন দিনে বোলপুর পুরসভা এলাকায় বৃষ্টি হয়েছে প্রায় ১২০ মিলিমিটার। |
|
বোলপুরে অসম্পূর্ণ বেইলি সেতুর পাশে ক্ষতিগ্রস্ত অস্থায়ী রাস্তা । বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরীর তোলা ছবি। |
অত্যধিক বর্ষণে বেহাল হয়ে পড়েছে পানাগড়-মোরগ্রাম ৬০ নম্বর জাতীয় ,সড়কের ঘুড়িষা থেকে জয়দেব মোড় পর্যন্ত প্রায় আট কিমি রাস্তা। বাসিন্দাদের অভিযোগ, ইলামবাজার থানা এলাকার শিরষা গ্রাম পঞ্চায়েতের উত্তরকোনা বাসস্টপের কাছে রাস্তার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তাঁদের দাবি, ওই রাস্তায় রোজ প্রায় ৪০ হাজারেরও বেশি গাড়ি চলাচল করে। তাই অবিলম্বে ব্যবস্থা না নিলে যে কোনও মুহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এ ছাড়া, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, বোলপুর-সিউড়ি সড়কে বেইলি ব্রিজের পাশের অস্থায়ী রাস্তাটিও। বেইলি ব্রিজে কাজ চলায় ওই রাস্তা দিয়েই আপাতত গাড়ি চলাচল করত। কিন্তু প্রবল বর্ষণে ওই রাস্তাটির একাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বোলপুরের মহকুমা শাসকের নির্দেশে ওই রাস্তায় নজরদারি ও ভারি গাড়ি চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
বোলপুরের মহকুমাশাসক দেবাশিস নন্দী বলেন, “বিভিন্ন ব্লক ও পুরসভা এলাকায় কিছু কিছু ত্রাণ সামগ্রী দেওয়া হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ সংগ্রহ করছি। পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে সব রকমের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আমরা তৈরি আছি।” তিনি জানান, মহকুমার সমস্ত বিডিও ও পুর কর্তৃপক্ষকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। একটি কন্ট্রোল রুমও খোলা হয়েছে।
|
|
সিউড়িতে তিলপাড়া ব্যারাজে জলস্রোত । তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোলা ছবি। |
জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন বলেন, “রামপুরহাট ও বোলপুরের মহকুমায় বেশ কিছু মাটির বাড়ি ভেঙে পড়েছে। এখনও পর্যন্ত কত মাটির বাড়ি ভেঙেছে তার হিসেব পাওয়া যায়নি। ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রিপল দেওয়া হয়েছে।” অধিক বর্ষণের দরুণ জল ছাড়া হচ্ছে নদীবাঁধ গুলি থেকেও। জেলা সেচ দফতরের সুপারিন্টেন্ডেন্ট ইঞ্জিনিয়র আবদুল লতিফ বলেন, “রবিবার তিলপাড়া ব্যারাজ থেকে ১৩,০০০ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। জেলার বৈধড়া, ডেউচা ব্যারাজ থেকেও এ দিন সামান্য পরিমাণ জল ছাড়া হয়েছে।” তবে এই প্রাকৃতিক দুর্যোগেও আশার কথা শুনিয়েছেন জেলা কৃষি আধিকারিক অশোক রায়। তাঁর মতে, “যে পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে তাতে ধানের বীজতলা তৈরির ক্ষেত্রে খুবই সহায়ক হবে।” তবে এই বৃষ্টিতে কী পরিমাণ বীজতলা জলে ডুবে গিয়েছে তা জানাতে পারেননি তিনি। তবে জেলায় বন্যার আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন। তাঁর কথায়, “বৃষ্টি যা হয়েছে তাতে এখনই বন্যার কোনও আশঙ্কা নেই।” |
|
|
|
|
|