রেশন তুলতে গিয়ে জলের তোড়ে ভেসে গেলেন যুবক
বৃষ্টি মাথায় বাড়ি থেকে রেশন তুলতে যেতে বারণ করেছিলেন মা। নদীর স্রোতে ডুবে যাওয়া কজওয়ে পেরোতে নিষেধ করেছিলেন গ্রামবাসীরাও। শোনেননি সুমন চট্টরাজ। জলের তোড় সাইকেল শুদ্ধু ভাসিয়ে নিয়ে গেল তাঁকে। রবিবার সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটে বাঁকুড়ার সোনামুখীতে, শালি নদীর কজওয়েতে। সকালে ওই ঘটনা ঘটলেও রাত পর্যন্ত অবশ্য সরকারি স্তরে কোনও উদ্ধারকাজই শুরু হয়নি।
কেন উদ্ধারকাজ শুরু হয়নি, সে প্রসঙ্গে সোনামুখীর যুগ্ম-বিডিও নিশীথ মাহাতো যুক্তি, “খবর পেয়ে এক কর্মীকে পাঠিয়েছি। কিন্তু এখনও ওদের বাড়ির তরফ থেকে কোনও অভিযোগ পাইনি।” এ ক্ষেত্রে কেন পরিবারের পক্ষে লিখিত অভিযোগের প্রয়োজন হবে, কার বিরুদ্ধেই বা অভিযোগ হবে তার সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি। মহকুমাশাসক (বিষ্ণুপুর) সুশান্ত চক্রবর্তী বলেন, “কেন উদ্ধারকাজে দেরি হল, তা বিডিও-র কাছে জানতে চাইব। তা ছাড়া, দুপুর ১২টা পর্যন্ত আমি এই ঘটনার কোনও খবরই পাইনি!”
ফুঁসছে শালি নদী।
প্রশাসন ডুবুরি তো পাঠায়ইনি, এমনকী জালও না ফেলায় স্থানীয় মানুষ ক্ষুব্ধ। যতটুকু যা চেষ্টা করার, তা তাঁরাই করছেন। তাঁদের অভিযোগ, সারা দিনে সরকারি উদ্যোগ বলতে ব্লক অফিস থেকে ত্রাণ দফতরের এক কর্মীর ঘুরে যাওয়া। বিষ্ণুপুরের বিধায়ক তথা আবাসনমন্ত্রী শ্যাম মুখোপাধ্যায় এ দিন সন্ধ্যায় বলেন, “উদ্ধারকাজ দ্রুত শুরু করতে জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছি।”
একটি বিস্কুট কোম্পানির ডিস্ট্রিবিউটারের কর্মী, বছর একুশের সুমনের বাড়ি শালি নদীরে ও-পারে কাশীপুর-কুণ্ডপুষ্করিণী গ্রামে। তবে তাঁর পরিবার থাকে সোনামুখী পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ধর্মতলা এলাকায়। গত দু’দিনের প্রবল বর্ষণে ফুলেফেঁপে উঠেছে শালি নদী। স্থানীয় সূত্রের খবর, সেই অবস্থায় নিজের সাইকেল ঘাড়ে করে এক কোমর জল ভেঙে, ঝুঁকি নিয়েই সুমন নদীর ওপারের গ্রামে যাচ্ছিলেন রেশন তুলতে। ধামসিমলা স্টেশনের কাছে ধানসিমলা-কাশীপুর কুণ্ডপুষ্করিণী মোরাম রাস্তাতেই ওই কজওয়ে। প্রত্যক্ষদর্শী শেখ আবু, শেখ সফিদের কথায়, “আমরা ওকে নদী পেরোতে বারণ করি। ও শুনল না। কজওয়ের মাঝপথে দেখলাম, প্রথমে ওর হাত থেকে সাইকেলটা হড়কে গেল। পরে ও নিজেও হুমড়ি খেয়ে জলে পড়ল। চোখের সামনে ছেলেটাকে ভেসে যেতে দেখলাম। বারবার হাত তুলছিল। কিন্তু, ওখানে জলের ঘুর্ণি আর গভীরতা এত বেশি, কেউই সাহস করে নামতে পারিনি।”
ধানসিমলা পঞ্চায়েত প্রধান গোপাল সাহা খবর দেন ব্লক অফিস ও থানায়। এ দিন দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, নদীর দুই পারে লোকেলোকারণ্য। তিন জন মাত্র পুলিশকর্মী ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন। দু’পারেই গ্রামবাসীরা বাঁশ দিয়ে নদীতে খুঁচিয়ে দেখার চেষ্টা করছেন, যদি দেহ বা সাইকেলটির হদিস মেলে। এক সময় ঘটনাস্থল ঘুরে যান সোনামুখীর তৃণমূল বিধায়ক দীপালি সাহা।

সুমন চট্টরাজ।
ধর্মতলায় সুমনের বাড়িতে ছিলেন মা, ছোট ভাই ও বোন। কাঁদতে কাঁদতে সুমনের মা মায়া চট্টরাজ বললেন, “আমি সপরিবার বাপের বাড়িতে থাকি। প্রতি সপ্তাহে আমার ছেলে রেশন তুলতে গ্রামের বাড়ি যেত। ও কোথায়, রাত পর্যন্ত জানতে পারিনি। প্রশাসনের কেউ খবর পর্যন্ত নিতে আসেননি।”
এসডিপিও দিব্যজ্যোতি দাসের কথায়, “এক্ষেত্রে আমাদের বিশেষ কিছু করণীয় নেই। তবু পরে সোনামুখীর সিআই এবং ওসি ঘটনাস্থলে যান। আমরা বিডিও-র কাছে ডুবুরি আনার আবেদনও জানিয়েছি। দমকলকেও খবর পাঠানো হয়েছে। তবে ওই প্রচণ্ড ঘুর্ণিতে জাল ফেলে কোনও লাভ হত না।”
এ দিন পশ্চিম মেদিনীপুরের বিনপুরেও খালের জলে ভেসে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে এক প্রৌঢ়ের। স্থানীয় কুমীরকাটা খাল সাইকেলে চেপে পেরোচ্ছিলেন ঝাড়গ্রাম রামচন্দ্রপুরের বাসিন্দা চুনারাম মাণ্ডি (৫৫)। খালে পড়ে তলিয়ে যান তিনি। পরে দেহটি ভেসে ওঠে।
ছবি: শুভ্র মিত্র
First Page Purulia Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.