আমরা-ওরা মুছল খেলার গণসংবর্ধনায়
রাজ্যের খেলাধুলোর ইতিহাসে কোনও পুরস্কার মঞ্চে বিভিন্ন খেলার এ রকম নক্ষত্র সমাবেশ কখনও দেখা গেছে?
চল্লিশটি বিভিন্ন খেলার ১৭০ জন ক্রীড়াবিদ কি কখনও লাইন দিয়ে মঞ্চে উঠে এ ভাবে গণসংবর্ধনা নিয়েছেন?
এর আগে বাংলার কোনও সরকারি মঞ্চ থেকে কি কখনও ৩৫ লাখ টাকা ‘বিতরিত’ হয়েছে খেলোয়াড়দের জন্য?
খেলাধুলোকে ঘিরে হরিয়ানা, পঞ্জাব বা কেরলের ‘ভালবাসার মুখ’ যেন রবিবার বিকেলে ফিরে এল শহরের নেতাজি ইন্ডোরে। রাজ্য সরকারের ক্রীড়া দফতরের অনুষ্ঠানে। বেঙ্গল অলিম্পিক অ্যাসেসিয়েশন-এর আর্থিক সহযোগিতায় যে চমকপ্রদ অনুষ্ঠানটি হল তাতে মুছে গেল আমরা-ওরা বিভেদও। মঞ্চের মতো প্রাপকদের তালিকাতেও দেখা গেল না বিভেদের ছাপ। কিছুদিন আগেও সুভাষ চক্রবর্তী-কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়ের মিছিলে বা অনুষ্ঠান আলো করে থাকতেন যে ক্রীড়াবিদরা, তাঁদের অন্তত এক ডজন তারকাকে দেখা গেল ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্রের সঙ্গে মঞ্চে বসে থাকতে। প্রাপকদের তালিকাতে বাংলার ফুটবল, জিমন্যাস্টিক্স, অ্যাথলেটিক্স, টিটি-র পরিচিত প্লেয়ারদের সঙ্গে পুরস্কার নিলেন পর্বতারোহী, যোগব্যায়াম, ক্যারাটে এমনকী মুক-বধির ক্রীড়ার সফলরাও। মঞ্চে দেখা গেল লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কেও।
প্রদীপ জ্বালাচ্ছেন সৌরভ। সঙ্গে দুই মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও মদন মিত্র।-নিজস্ব চিত্র
পিকে-র পাশের চেয়ারেই ‘জড়সড়’ অমল দত্তের অবস্থানও ম্লান হয়ে গেল বাংলার খেলাধুলোর এক নম্বর আইকন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে। বেহালায় নিজের পাড়ায় রেলের একটি স্টেডিয়ামের ভিত্তিপ্রস্তর অনুষ্ঠানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে এসেছিলেন সৌরভ। এ দিন ফের মমতা-সরকারের একটি অনুষ্ঠানের মঞ্চে দেখা গেল তাঁকে। মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন না, কিন্তু ছিলেন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়-সহ চার মন্ত্রী। অনুষ্ঠানের সবথেকে জনপ্রিয় মানুষটিকেও কি একটু জড়সড়-অপ্রস্তুত দেখাল? কান ফাটানো হাততালির মধ্যে মঞ্চে উঠেও সবথেকে কোণের চেয়ারে (ঘোষকের পোডিয়ামের আড়ালে) বসতে দেখা গেল সৌরভকে। বেশিরভাগ দর্শকই তাঁকে সরাসরি দেখতে পাচ্ছিলেন না। দু’বার মাত্র ‘প্রকাশ্যে’ আসতে দেখা গেল তাঁকে। এক বার ক্রীড়ামন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে অন্য অনেকের সঙ্গে প্রদীপ জ্বালালেন তিনি। পরের বার দু‘লাখ টাকা সন্তোষ জয়ী দলের জন্য তুলে দেওয়ার সময়। এর কিছু পরেই সৌরভ চলে যান। অনুষ্ঠান তখনও পঁচিশ শতাংশ শেষ হয়নি।
বাকি সময়টা শৈলেন মান্না থেকে দোলা বন্দ্যোপাধ্যায়, চুনী গোস্বামী থেকে সোমা বিশ্বাস, বদ্রু-সমরেশ-ভাস্কর-সম্বরণ-শিবাজি থেকে গুরবক্স, দিব্যেন্দু বড়ুয়া, জ্যোৎস্না দত্তঅলিম্পিয়ান, বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা আলো করে রইলেন মঞ্চ। পাঁচ হাজার থেকে এক লাখ টাকা তুলে দেওয়া হল প্রাপকদের। গণসংবর্ধনা দেখে অবাক কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী অজয় মাকেন বলে দিলেন, “বাংলাকে জাতীয় গেমস দিতে পারলে খুশি হব।” শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বললেন, “নতুন সরকার শিল্প, সাহিত্যের মতো ক্রীড়াকেও যে গুরুত্ব দিচ্ছে সেটা বোঝাতেই এই অনুষ্ঠান।”
‘ভূমি’-র গানের মধ্যেই বাড়ি চলে যাচ্ছিল বছর পনেরোর খুদে জিমন্যাস্ট প্রণতি নায়েক। জাতীয় গেমসে জোড়া রুপো জেতার জন্য পাওয়া ২০ হাজার টাকার চেক আর সার্টিফিকেট হাতে ধরা। “আগে এক বার ২৫০ টাকা পুরস্কার পেয়েছিলাম একটা ক্লাব থেকে। তাড়াতাড়ি চলে যাচ্ছি। এত টাকা নিয়ে ফিরতে হবে তো!” প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়ের মুখ যেন বলে দিচ্ছিলবাংলার খেলাধুলাতেও হয়তো ‘পরিবর্তন’ আসছে।
Previous Story Khela Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.