সুব্রতর স্বপ্ন, ফুটবলের সংসারপুর হচ্ছে সোদপুর
সুব্রত পাল হঠাৎ বললেন, “জানেন তো, সন্দীপ নন্দীর খেলা দেখার জন্য আমি আগে নিয়মিত মোহনবাগান মাঠে যেতাম?”
সন্দীপের খেলার কোন দিকটা ভাল লাগত?
“কোন দিকটা মানে? এ থেকে জেড। সব। ওর হাঁটাচলা, কথাবার্তাসব নকল করতাম। আমার ছোটবেলার হিরো। স্বপ্নের লোক।”
সন্দীপের মতো হতে চাইতেন?
“একেবারে তাই। এক বার মোহনবাগান প্র্যাক্টিসে বন্ধুকে নিয়ে গেছিলাম, সন্দীপদার সঙ্গে ছবি তুলব বলে। খেলা তো বটেই, ওর প্র্যাক্টিসও দেখতে যেতাম।”
পাঁচতারা হোটেলটা এখনও তৈরি হয়নি পুরো। লাউঞ্জে বেশি লোক নেই। জায়গাটা দিল্লি-নয়ডার সীমান্তে। লাউঞ্জে বসেই দেখা যায়, পাশ দিয়ে তিন মিনিট অন্তর যাতায়াত করছে মেট্রো রেল। ভারতীয় দলের ডেরা এ বার এখানেই।
আর ওই হোটেলের লাউঞ্জে অবাক হয়ে শুনছিলাম সুব্রত পালের কথাগুলো। সন্দীপ নন্দী সম্পর্কে তাঁর এতটাই শ্রদ্ধা যে বলে ফেললেন, “সালগাওকর ম্যাচে এ বার ইস্টবেঙ্গল সন্দীপদাকে খেলালে দেখতেন ওরাই চ্যাম্পিয়ন হত। সন্দীপদা থাকলে ইস্টবেঙ্গল ওই ম্যাচ হারত না।”
গুরু এবং শিষ্য তিন বছর পরে আবার প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। জাতীয় দলের এক নম্বর হতে।
সন্দীপ-সুব্রত: গুরু ও শিষ্য এখন জাতীয় দলে প্রতিদ্বন্দ্বীও।
সুব্রত যেমন বড় হয়েছেন সন্দীপকে দেখে, সন্দীপের আদর্শ ছিলেন হেমন্ত ডোরা। সুব্রতর প্রিয় কিপার অলিভার কান হলে, সন্দীপের ইগর কাসিয়াস। যে ভাবে এক বছর অস্ত্রোপচারের জন্য মাঠের বাইরে থেকে আবার জাতীয় দলে ফিরেছেন সন্দীপ, তা থেকে ভাইচুংও অনুপ্রেরণা পেতে পারেন। তিনি থাকার সময় সুব্রতকে এক নম্বর জায়গাটা বব হাউটন দিতেই পারেননি। “আমার কাছে এক নম্বর, দু’নম্বর বলে কিছু নেই। আমি নিজের খেলা নিয়ে ভাবি। নিজের সেরা খেলা খেলতে পারলেই খুশি হব। আর সন্দীপদা আবার আমার পাশে এসেছে বলে তো আমি আরও অনুপ্রাণিত হচ্ছি। কত রকম কথা বলে। কত কিছু শেখা যায়!” বলতে শোনা গেল সুব্রতকে।
গুরু ববের আমলে শেষ ১০টা ম্যাচে ৪২ গোল হজম করতে হয়েছে ভারতকে। এতে কি আপনার রেকর্ড খারাপ হয়ে গেল না? সুব্রতর জবাব, “রেকর্ডের জন্য তো খেলি না। আপনি আগে দেখুন, দশটা ম্যাচে কোন কোন দলের সঙ্গে ভারতকে খেলতে হয়েছে।” সুব্রত তাঁর উত্থানের পিছনে বব হাউটনকে কৃতিত্ব দিলে সন্দীপের কথায় ঘুরে ফিরে আসে আর এক ব্রিটিশ কোচের কথা। “ট্রেভর মর্গ্যান আর অতনু ভট্টাচার্য আমার সাহস জোগানোর পিছনে বিশাল ভূমিকা নিয়েছেন। এখন আমি অনেক আত্মবিশ্বাসী।”
বর্ধমানের সন্দীপের মুখে সব সময় হাসি লেগেই রয়েছে। যে কোনও লোকের সঙ্গে মিশে যেতে পারেন। খুব খোলামেলা। সুব্রত আবার একটু চাপা। নিজের মনে থাকেন। রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনেন নিয়মিত। বিবেকানন্দ পড়েন। জাতীয় দলে নেতৃত্বের কথা উঠলে বলে ওঠেন, “ভাইচুং ভুটিয়া জাত অধিনায়ক। দলে থাকলে অন্য প্রেরণার কাজ করে।” নিজের বিদেশের খেলার স্বপ্ন আটকে থাকার কথা বলতে বলতে অকপটে বলে দেন, “সন্দীপদাও চেষ্টা করলে বিদেশে খেলতে পারত!”
সুব্রতর একটা ব্যথার দিক, ইচ্ছে থাকলেও বিদেশে খেলার সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে না। নতুন মরসুমে তা হলে লক্ষ্যটা কী থাকছে? জানতে চাইলে দেশের এক নম্বর কিপারের মন্তব্য, “ও ভাবে আগে থেকে লক্ষ্য থাকে না। একটা একটা করে ধাপ পেরোতে হয়। আমি এখন ভাবছি হাতের চোটটা নিয়ে। হাতের চিড়টা সেরে গিয়েছে। কিন্তু আর দিন কতক বল ছাড়া প্র্যাক্টিস করব। বল টাচ করতে করতে পরের সোমবার হয়ে যাবে মনে হয়।”
রবিবারটা একেবারে ছুটি দিয়েছিলেন আর্মান্দো। যে যেমন করো, কোনও আপত্তি নেই কোচের। নিজে এক বেলার জন্য ঘুরে এলেন গোয়ার বাড়ি থেকে। দুপুরবেলা সামনে দিয়ে অনেক সতীর্থ দিল্লি বেড়ানোর জন্য যাচ্ছেন, সুব্রত বললেন, “পুরো বিশ্রাম নিতে চাই। ভাল করে দু’বেলা প্র্যাক্টিসের জন্য তৈরি থাকতে হবে।”
সুব্রত-সন্দীপের সহাবস্থান আবার ফিরে আসার ফলে ভারতীয় দলের কতটা লাভ হবে? ভারতের দুই প্রাক্তন খ্যাতনামা কিপার কলকাতা থেকে বললেন, লাভ হবেই। ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, “সুব্রতই এখনও এক নম্বর। ওকে ধরা কঠিন সন্দীপের। তবে সন্দীপ দু’নম্বর হতেই পারে।” অতনু ভট্টাচার্যর মন্তব্য, “সন্দীপ ইস্টবেঙ্গলে আন্তর্জাতিক ম্যাচ যা খেলেছে, তাতে এক নম্বর হয়ে গেলেও অবাক হব না। তবে বয়স ও উচ্চতার বিচারে সুব্রত এগিয়ে। সন্দীপ অবশ্য দু’নম্বরে যাবেই।”
হাউটন নেই, ভাইচুং নেই। পরিবর্তনের ভারতীয় দলে এখনও এক নম্বর, দু’নম্বর গোলকিপার বাংলার। তিন নম্বর অরিন্দম ভট্টাচার্যও বাংলার। ছবিটা পাল্টায়নি। তবু এটাই সুব্রত পালের সবচেয়ে তৃপ্তির কারণ নয়। আসল তৃপ্তি তা হলে কী? নতুন বুট হাতে ঢুকছিলেন লালকমল ভৌমিক। বন্ধুকে দেখিয়ে সুব্রত বললেন, “ওকে নিয়ে জাতীয় দলে একসঙ্গে এখন তিন জন সোদপুরের ছেলে। আমি, লাল, অরিন্দম। খুব কাছাকাছি বাড়ি। এমন ব্যাপার কি ভারতীয় ফুটবলে আগে হয়েছে?”
একটা সময় ভারতীয় হকিতে সাড়া জাগানো নাম ছিল পঞ্জাবের সংসারপুর। অজস্র অলিম্পিয়ান বেরোত সেখান থেকে। সুব্রত মনে হল, ওই রকমই সোনালি স্বপ্ন দেখছেন। সোদপুর ভারতীয় ফুটবলের সংসারপুর হতে চলেছে।
Previous Story Khela Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.