|
|
|
|
সম্পাদকীয় ২... |
আষাঢ়ের দ্বিতীয় দিবসে |
জুন মাসে চব্বিশ ঘণ্টায় ১৫৪ মিলিমিটার বৃষ্টি দশ বছরে এই প্রথম। সুতরাং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং শহরের মেয়র জলমগ্ন মহানগরের বাসিন্দাদের দুই হাত তুলিয়া আকাশ দেখাইয়া দিলে বিস্ময়ের কিছু থাকিত না। তাঁহারা ঠিক তেমনটি করেন নাই। মেয়র শুক্রবার সকাল হইতে সচল হইয়াছেন, মুখ্যমন্ত্রী দিল্লি যাত্রা বাতিল করিয়াছেন। তাঁহাদের তৎপরতা নিতান্ত ব্যক্তিগত স্তরে সীমিত থাকে নাই, অতিবৃষ্টির মোকাবিলার কিছু উদ্যোগ নাগরিকদের চোখে পড়িয়াছে। নূতন সরকার গদিয়ান হইবার পর রাজ্য জুড়িয়া, বিশেষত কলিকাতা শহর জুড়িয়া যে কাজের হাওয়া বহিতেছে, শুক্রবারের জল-যুদ্ধেও তাহার আভাস ছিল। কিন্তু এই দিনের অভিজ্ঞতা দেখাইয়া দিয়াছে, তৎপর নেতৃত্ব বা নেতাদের আন্তরিক সদিচ্ছা জরুরি হইতে পারে, যথেষ্ট নহে। নাগরিক পরিকাঠামোর উন্নতি আবশ্যক, সেই পরিকাঠামোর যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ আবশ্যক, তাহাকে সচল রাখিবার প্রশাসনিক তৎপরতা আবশ্যক। প্রতিটি বিষয়েই কলিকাতার পুর-ব্যবস্থায় উন্নতি সাধন জরুরি। তিনটি দৃষ্টান্ত। এক, জল নিকাশি ব্যবস্থার পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ গত কয়েক বছর ধরিয়াই চলিতেছে, কিন্তু অনেক এলাকাতেই সেই কাজ এখনও অসমাপ্ত, অনেক ক্ষেত্রে অনারব্ধ। দুই, পুরসভার পাম্প সহ বিভিন্ন সরঞ্জাম যে ভাবে প্রস্তুত রাখা দরকার, তাহা এখনও রাখা হয় নাই, হইলে মেয়রকে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় ‘ব্যক্তিগত উদ্যোগ’ করিতে হইত না। তিন, বিভিন্ন অঞ্চলে যত দ্রুত ম্যানহোলের আবরণ খুলিয়া দেওয়া আবশ্যক ছিল, তাহা হয় নাই। আশা করা যায়, অভিজ্ঞতা শিক্ষা দিয়াছে, নাগরিকরা অতঃপর তাহার প্রমাণ পাইবেন। এই আশা পূরণের বিস্তর সুযোগ পুরসভা পাইবে বর্ষার ইহা সূচনামাত্র। কলিকাতার জলমগ্নতার সমস্যা সম্পূর্ণ দূর করা দুঃসাধ্য, এই শহরের ভূগোল এবং ইতিহাস সেই পথ বন্ধ করিয়াছে একটি বাটিতে জল পড়িলে জল জমিবেই। কিন্তু যথাসম্ভব দ্রুত বাটির জল সেঁচিয়া ফেলা দরকার, যথাসম্ভব কম জল জমিতে দেওয়া দরকার।
শুক্রবারের অভিজ্ঞতা আর একটি সত্যকে চিহ্নিত করিয়াছে। তাহা এই যে, নগর প্রশাসনের ভারপ্রাপ্ত সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানগুলির পারস্পরিক সমন্বয় অত্যন্ত জরুরি। এই ধরনের দুর্যোগের মোকাবিলায় পুরসভা, কে এম ডি এ, পুলিশ, দমকল, সি ই এস সি ইত্যাদি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের একযোগে কাজ করা অত্যাবশ্যক। তাহার একটি উপায় নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা। কেবল প্রয়োজন হইলে তখন যোগাযোগ নয়, দৈনন্দিন কাজকর্মের অঙ্গ বা পদ্ধতি হিসাবেই সেই যোগাযোগ রক্ষণীয়। কিন্তু তাহার পাশাপাশি একটি মৌলিক এবং কাঠামোগত সংস্কারও জরুরি। পুর-কাঠামো পরিচালনার কাজগুলি যথাসম্ভব এক ছাতার নীচে আনিতে পারিলে সমন্বয় সহজ হয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই কাজ শুরু করিয়াছেন, কলিকাতা পুলিশের এক্তিায়ারকে কলিকাতা পুরসভা এলাকায় সম্প্রসারিত করিবার নীতি তাহার প্রমাণ। কিন্তু এই নীতিকে আরও বৃহৎ এবং সংহত ভাবে প্রয়োগ করিতে হইবে। কলিকাতা শহরের বিভিন্ন পরিষেবার ইতিহাস বিভিন্ন ধরনের। পুলিশ, ডাকঘর, আবাসন, জন সরবরাহ, রাস্তাঘাট বিভিন্ন পরিষেবা বিভিন্ন ভাবে, বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়া বিবর্তিত হইয়াছে। তাহাদের মধ্যে অসঙ্গতি থাকিবে, ইহাই স্বাভাবিক। সেই অসঙ্গতি দূর করিবার জন্য সমগ্র শহরকে একটি সংহত দৃষ্টিতে দেখা দরকার। |
|
|
|
|
|