প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রিত্ব
রাহুলের জন্মদিনে বিতর্ক উস্কে দিলেন দিগ্বিজয়
রাহুল গাঁধীকে প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসানোর জন্য তাঁর জন্মদিনেই আবার সরব হলেন দিগ্বিজয় সিংহ। রাহুলের একচল্লিশে পা দেওয়ার দিনে দিগ্বিজয়ের স্পষ্ট কথা, রাহুলের এ বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সময় হয়ে গিয়েছে।
কংগ্রেসের নবীন নেতার প্রবীণ অনুগামীরা যা-ই বলুন না কেন, রাহুল নিজে কিন্তু মনমোহন সিংহকে সরিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পদে বসতে চান না। কংগ্রেস সূত্রে জানা যাচ্ছে, রাহুল এ বিষয়ে তাঁর মতামত দলের নবীন-প্রবীণ নেতাদের স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েও দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, চলতি বছরের শেষে বা আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে মনমোহনকে সরিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পদে বসার কোনও ইচ্ছাই তাঁর নেই। সেটা তাঁর পক্ষে যথেষ্ট অসম্মানজনক বলেই মনে করছেন রাহুল।
দিগ্বিজয়ও অবশ্য মনমোহনকে সরিয়ে রাহুলের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কথা বলছেন না। তাঁর বক্তব্য, এ বিষয়ে রাহুল নিজেই সিদ্ধান্ত নেবেন। কিন্তু এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদকের মতে, “রাহুল গত সাত-আট বছর ধরে দলের জন্য কাজ করছেন। প্রধানমন্ত্রীর পদে বসার যথেষ্ট যোগ্যতা, সহজাত ক্ষমতা ও অভিজ্ঞতা তাঁর রয়েছে।”
গত কয়েক মাসে টু-জি স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারি থেকে শুরু করে লোকপাল বিলের মতো ঘটনায় মনমোহন সরকারের কর্তৃত্ব অনেকটাই দুর্বল হয়ে গিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দিক থেকেও রাজনৈতিক দুর্বলতা দেখা গিয়েছে বলে মনে করছেন কংগ্রেসের একাংশ। ফলে বিরোধীরাও প্রধানমন্ত্রীকে এবং সরকারকে আক্রমণের সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে দিগ্বিজয় সিংহ বা জনার্দন দ্বিবেদীর মতো নেতারা সরকার-বিরোধী অবস্থান নিচ্ছেন। বিশেষত রামদেবের বিষয়ে সরকারের কাজকর্ম প্রকাশ্যে খারিজ করে দিয়েছে দল। কংগ্রেসের মধ্যে থেকেই দাবি উঠেছে, এ বছরের শেষেই প্রধানমন্ত্রীর পদে রাহুলকে নিয়ে আসা হোক।
দলের একাংশ চাইছে, আগামী বছর রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময় মনমোহন সিংহকে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী করা হোক। ঠিক যে ভাবে এনডিএ জমানায় আডবাণী-শিবির থেকে অটলবিহারী বাজপেয়ীকে রাষ্ট্রপতি করার প্রস্তাব উঠেছিল। শেষ পর্যন্ত যদিও তা বাস্তবায়িত হয়নি। লালকৃষ্ণ আডবাণী নিজেই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বাজপেয়ীর কাজ চালিয়ে যাওয়ার সপক্ষে মত দেন। ঠিক সেই ভাবে এখনও দাবি উঠেছে, লোকসভা নির্বাচনের আগেই রাহুলকে প্রধানমন্ত্রীর পদে বসানো হোক।
তবে দশ নম্বর জনপথের সূত্র এবং রাহুল-ঘনিষ্ঠ শিবির কিন্তু বলছে, সনিয়া বা রাহুল কেউই এখন প্রধানমন্ত্রীর পদে রদবদল নিয়ে ভাবছেন না। আগামী লোকসভা নির্বাচনে দল ফের জিতলে, সে সময় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিতে রাহুল তৈরি। কিন্তু এই মুহূর্তে রাহুল দলের সাংগঠনিক কাজেই বেশি মন দিতে চান। আগামী বছরের শুরুতে উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনকেও নিজের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিচ্ছেন রাহুল। সপা বা বসপা-র সঙ্গে জোট না বেঁধে একা লড়ার জন্য দলকে তৈরি করার চেষ্টা করছেন। বিহারে অবশ্য তাঁর এই চেষ্টা সফল হয়নি। দিগ্বিজয়ের মতো নেতারা যুক্তি দিচ্ছেন, উত্তরপ্রদেশ আর বিহারের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আলাদা। সম্প্রতি গ্রেটার নয়ডার ভাট্টা-পারসৌলে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে কৃষকদের আন্দোলনকে রাহুল মায়াবতীর বিরুদ্ধে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। উত্তরপ্রদেশের রাজ্য কংগ্রেসের তরফ থেকেও আজ রাজ্য জুড়ে ‘কিষাণ অধিকার দিবস’ পালন করেছেন কংগ্রেস কর্মীরা। রাহুলের কেন্দ্র অমেঠির বিভিন্ন জায়গায় কৃষকদের অভিযোগ শুনতে ন্যায়-পঞ্চায়েতেরও আয়োজন করা হয়।
তবে দলের মধ্যে থেকেই বারবার রাহুলকে প্রধানমন্ত্রীর করার দাবি ওঠায় এবং বিভিন্ন বিষয়ে দল সরকারের বিপরীত অবস্থান নেওয়ায়, সরকারের উপরেও চাপ তৈরি হচ্ছে। কংগ্রেসের তরফে অবশ্য বলা হচ্ছে, দল সরকারের সমালোচনা করলে আখেরে সরকারের লাভই হয়। সরকারের ত্রুটি-বিচ্যুতি কেটে যায়। সনিয়া-মনমোহনের সম্পর্কে এত সহজে ভাঙন ধরবে না বলেই কংগ্রেস নেতাদের দাবি। তবে অনেকে মনে করছেন, দিগ্বিজয় সিংহরা যে ভাবে রাহুলকে প্রধানমন্ত্রীর করার দাবি তুলছেন, তার পিছনে দশ জনপথের প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয় রয়েছে। ইন্দিরা গাঁধীর আমলেও কখনও সঞ্জয়, কখনও রাজীব গাঁধীকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়ার জন্য গাঁধী-পরিবারের অনুগামীরা আগেভাগে সরব হতেন। মজার কথা হল, রাহুল নিজে তাড়াহুড়ো করতে না চাইলেও তাঁর সতীর্থরা অসহিষ্ণু হয়ে পড়ছেন। ‘বাবালোগ’ বলে পরিচিত এক ঝাঁক নবীন সাংসদকে নিয়ে রাহুলের অপেক্ষমান মন্ত্রিসভার সদস্যরা বলছেন, রাহুল যত দেরি করবেন, তাঁদেরও মন্ত্রিত্বে আসতে ততই দেরি হয়ে যাবে।
যাঁর জন্মদিনে এত হইচই, তিনি আজ সারাদিন সংবাদমাধ্যমের নজর এড়িয়েই ছিলেন। তুঘলক রোডে রাহুলের বাসভবন থেকে জানানো হয়েছে, সেখানেও কোনও বড় আনন্দ-অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়নি।
Previous Story Desh Next Story


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.