লোকপাল বিলের আওতায় প্রধানমন্ত্রীকে রাখা নিয়ে আন্না হাজারেদের দাবি কোনও ভাবেই মানবে না কংগ্রেস। শনিবার দলের কোর গ্রুপের বৈঠকের পরে কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, কোনও অবস্থাতেই প্রধানমন্ত্রীকে লোকপালের আওতায় আনা হবে না। এ ব্যাপারে নাগরিক সমাজের কোনও চাপের কাছেই মাথা নোয়াবে না দল। লোকপাল নিয়ে বিতর্ক মেটাতে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত কমিটির সঙ্গে আগামিকালের মহা-গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে নিজেদের এই মনোভাব স্পষ্ট করে দেবে সরকার।
লোকপালে প্রধানমন্ত্রীকে না রাখার কড়া সিদ্ধান্ত নেওয়ার পাশাপাশি সামগ্রিক ভাবেই আন্নাদের সম্পর্কে অবস্থান কঠোর করার ইঙ্গিত দিয়েছে কংগ্রেস। আজ আন্না হাজারেকে লেখা কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর চিঠিতেও তা স্পষ্ট হয়েছে। কংগ্রেস মিডিয়া সেলের সদস্য জনার্দন দ্বিবেদী-সহ কিছু নেতা তাঁকে ‘আরএসএসের এজেন্ট’ বলায় ক্ষোভ জানিয়ে সনিয়াকে গত ৯ জুন চিঠি দেন আন্না। সেই চিঠি আবার সংবাদমাধ্যমের কাছে ‘ফাঁস’ও হয়ে যায়। আজ রীতিমতো ‘কড়া’ ভাষায় সেই চিঠির জবাব দিয়ে সনিয়া জানিয়েছেন, গত ১৯ এপ্রিলের চিঠিতেই তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, কোনও রকম ‘কুৎসা’র রাজনীতিতে তিনি বিশ্বাস করেন না। প্রসঙ্গত, এর আগেও আন্না অভিযোগ করেছিলেন, তাঁর আন্দোলনকে কালিমালিপ্ত করতেই কংগ্রেসের একাংশ তাঁর নামে কুৎসা রটাচ্ছে। তখনও আন্নাকে চিঠি দিয়ে সনিয়া জানিয়েছিলেন, তিনি কোনও রকম কুৎসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন না। আজকের চিঠিতে সনিয়া আরও জানিয়েছেন, দুর্নীতি রুখতে তিনি ও তাঁর দলের নেতৃত্বাধীন সরকার সব রকম কড়া ব্যবস্থাই নেওয়ার পক্ষপাতী। |
প্রধানমন্ত্রীকে লোকপালের আওতায় রাখার ব্যাপারে আন্নাদের মতের বিরোধিতা করলেও এ নিয়ে কংগ্রেসের মধ্যেই কিন্তু মতপার্থক্য রয়েছে। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিত বা কংগ্রেসের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক দিগ্বিজয় সিংহ প্রধানমন্ত্রীকে লোকপালের আওতায় আনার পক্ষপাতী ছিলেন। কিন্তু দলের শীর্ষ নেতাদের অনেকেই এই মতের বিরোধী। গত কাল কোর গ্রুপের বৈঠকেও তাঁরা এ ব্যাপারে সওয়াল করেন এবং শেষ পর্যন্ত দল তাঁদের কথাই মেনে নেয়। তখনই সিদ্ধান্ত হয়, আগামিকালের বৈঠকেই নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত কমিটির সঙ্গে বৈঠকে নিজেদের কড়া মনোভাবেবর বিষয়টি স্পষ্ট করে দেওয়া হবে।
তা হলে সোমবারের বৈঠকে আন্না-শিবিরকে কী বার্তা দেবে সরকার? কংগ্রেস তথা সরকারের এক শীর্ষ সূত্রের বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রীকে লোকপালের আওতায় না রেখেও তাঁর কাজকর্মে ‘নজরদারি চালানো’ যায়। সংসদীয় ব্যবস্থায় কী ভাবে প্রধানমন্ত্রীর কাজকর্মে ‘নজরদারি চালানো’ যায়, আগামিকালের বৈঠকে আন্নাকে সেটাও বোঝানো হবে। এ ব্যাপারে নিজেরে ‘অবস্থান’ ও ‘বাধ্যবাধকতা’ বোঝানো হবে। সরকারের হাতে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র আছে। আন্না-সঙ্গীদের বাইরেও যে নাগরিক সমাজ রয়েছে, তাঁদের অনেকেই চান না, প্রধানমন্ত্রীকে লোকপালের আওতায় আনা হোক। তাঁদের অনেকে এ নিয়ে সরকারের কাছে চিঠিও দিয়েছেন। সেই সব চিঠিও দেখানো হবে আন্না ও তাঁর সঙ্গীদের। সরকার দুর্নীতি দমনে কতটা আন্তরিক, সেটাও স্পষ্ট করে দেওয়া হবে।
তবে আন্না-শিবির এখনও তাঁদের দাবির ব্যাপারে অনড়। আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ থেকে কর্নাটকের লোকায়ুক্ত সন্তোষ হেগড়ে সকলেই প্রধানমন্ত্রীকে লোকপালের আওতায় আনার ব্যাপারে নিজেদের অবস্থান থেকে সরতে নারাজ। এই অবস্থায় কংগ্রেস তথা সরকারের সিদ্ধান্ত, বিষয়টি নিয়ে আন্না-শিবির গোঁ ধরে থাকলে গোটা বিষয়টি নিয়ে সর্বদল বৈঠকে বসবে সরকার। তখন অন্য রাজনৈতিক দলগুলিকেও এ ব্যাপারে জড়িয়ে নেওয়া যাবে। অনেক দলই প্রধানমন্ত্রীকে লোকপালের আওতায় রাখার বিরোধী। সে ক্ষেত্রে আন্না-শিবির অনেকটাই ধাক্কা খাবে বলে আশা সরকারের।
বস্তুত পক্ষে কংগ্রেস তথা সরকারের কৌশল হল, লোকপাল নিয়ে কালক্ষেপ করা, যাতে আন্না-শিবির ধীরে ধীরে ক্লান্ত হয়ে
পড়ে। গত কয়েক মাস ধরে আন্না-শিবির জনমানসে এমন বার্তাই পাঠিয়েছে যে,
দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তারাই মূল চালিকাশক্তি। কিন্তু এখানেই আপত্তি কংগ্রেসের। আন্না-শিবিরের হাত থেকে
দুর্নীতি-বিরোধী লড়াইয়ের ‘ব্যাটন’ নিজের হাতে নিতে চাইছে তারা। এবং সে কারণেই লোকপাল নিয়ে আন্না-শিবিরের সঙ্গে সমঝোতা না করেও দুর্নীতি-বিরোধী লড়াইয়ে কড়া পদক্ষেপ করতে চায় কেন্দ্র। |