জেলে ফুটবল
ঠোনের চারপাশে চুন দিয়ে দাগ কেটে তৈরি ছোট্ট মাঠ। ছিটেফোটা ঘাস নেই। খুব বেশি হলে চার ফুট লম্বা পাঁচ ফুট চওড়া গোলপোস্ট। তাতে কী? মাঠের চার দিকে উপচে পড়ছে দর্শক। রেফারির বাঁশিতে শুরু হল ফাইনাল ম্যাচ। দর্শকদের কেউ হাত নাড়ছেন, কেউ তারস্বরে চিৎকার করেই চলেছেন। খেলার স্থান জলপাইগুড়ি কেন্দ্রীয় সংশোধানাগারের উঠোন। খেলোয়াড়, দর্শক সকলেই ওই জেলের বন্দি। মাসখানেক আগে জেলের বন্দিদের নিয়ে তৈরি ১৬ টি দলের মধ্যে ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ চালু করেছিলেন জেল কর্তৃপক্ষ। রবিবার ছিল তারই ফাইনাল ম্যাচ। পঞ্চাশ মিনিটের খেলা। প্রচীর ঘেরা জেলের পরিবেশের মধ্যে এই ফুটবল ম্যাচ বিষন্নতা আর নিয়মানুবর্তিতার বাঁধন খুলে খেলোয়াড়, দর্শক সকলকেই মুক্তির স্বাদ দিল। অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক দেবপ্রসাদ রায়, জলপাইগুড়ি সদরের বিধায়ক সুখবিলাস বর্মা, জলপাইগুড়ি পুরসভার চেয়ারম্যান পরিষদের সদস্য জয়ন্তী পাল প্রমুখ। ফুটবল ম্যাচকে ঘিরে জেলের ১১০০ বন্দির উল্লাস তাঁরাই প্রত্যক্ষ করলেন। এ দিনের ম্যাচকে ঘিরে সকাল থেকেই জেলের ভিতরে ছিল সাজো সাজো রব। সাড়ে বারোটা নাগাদ খুলে দেওয়া হল জেলের দরজা। একে একে ঢুকলেন অতিথিরা। লাল দেওয়ালের পাশ দিয়ে সরু রাস্তা। সেখান দিয়েই খেলার জায়গায় নিয়ে যাচ্ছিলেন জেলের এক আধিকারিক। যাওয়ার সময় বলছিলেন, “দেখবেন আপনাদের দেখলেই বন্দিরা কত খুশি হয়।” খেলার জায়গার সামনে পৌঁছতেই জেলের অধিকাংশ বন্দিরা সার দিয়ে দাঁড়িয়েছেন।

অতিথিদের দেখে সকলে হাততালি দিয়ে উঠলেন। কেউ কেউ জেলের ভিতরের গাছ থেকে নানা রঙের ফুল ছিঁড়ে অতিথিদের হাতে তুলে দিলেন। চড়া রোদে অতিথিদের যাতে সমস্যা না হয় সে জন্য অনেকে ছায়া ঘেরা জায়গায় অতিথিদের বসার ব্যবস্থা করতে ব্যস্ত হয়ে উঠলেন। নির্বারিত সময়ে শুরু হল খেলা। দু’ দলের জন করে খেলোয়াড়। জেল সুপার রবীন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেন, “জেলের মধ্যে মাঝে মধ্যেই খেলার আয়োজন করা হয়। বন্দিদের বিনোদনের ব্যবস্থা করতেই এই উদ্যোগ। আমরা লক্ষ্য করে দেখেছি বন্দিদের অনুষ্ঠান বা খেলায় বাইরের অতিথিদের সামিল করলে তারা খুশি হন। সে কারণেই বিধায়ক এবং অন্যান্য অতিথিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। বঙ্গীয় কারারক্ষী সমিতির সম্পাদক রিপন কর বলেন, “বন্দিরা নিজেদের যাতে মূল স্রোত থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন মনে না করে তার জন্যই এই আয়োজন। শুধু ফুটবল নয় অন্য ইন্ডোর খেলা জেলের ভিতরে শুরু করেছি।” দেবপ্রসাদবাবু বলেন, “বন্দিদের জন্য এমন আয়োজন যাতে আরও করা যায় তা নিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে কথা বলব। ওদের মন ভারমুক্ত রাখাই আমাদের মূল লক্ষ্য।”

ছবি: সন্দীপ পাল
Previous Story Uttarbanga Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.