পানিকৌড়িই শুধু নয়, উত্তরবঙ্গে বেশ কয়েকটি জেলায় রাজনৈতিক দলের মদতে পুষ্ট দুষ্কৃতীদের হাতে অস্ত্র আছে বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের পর মালদহ, দক্ষিণ দিনাজপুর, উত্তর দিনাজপুর, কোচবিহার জেলায় রাজনৈতিক সংঘর্ষ ও অসামাজিক কার্যকলাপে ওই অস্ত্র ব্যবহারের প্রমাণও মিলেছে। অস্ত্র-সহ কয়েক জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বাকি অস্ত্র উদ্ধারে সক্রিয় উত্তরবঙ্গের ছয় জেলার পুলিশকর্তারা। রাজ্য পুলিশের উত্তরবঙ্গের আইজি রণবীর কুমার বলেন, “পানিকৌড়িতে এক ব্যাক্তির বাড়ি থেকে অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। ছয় জেলাতেই পুলিশ কর্তাদের অস্ত্র উদ্ধারের ব্যপারে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলেই অভিযান চালানো হবে। তবে ভোটের আগেই বেশ কিছু আগ্নেয়াস্ত্র উত্তরবঙ্গ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।” এ প্রসঙ্গে কোচবিহারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি বলেন, “জেলা জুড়ে অস্ত্র উদ্ধারে নজরদারি রয়েছে। নির্বাচনের আগে কোচবিহার জেলা থেকে ১৩টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়।” মালদহের পুলিশ সুপার ভুবন মণ্ডল বলেন, “কিছু আগ্নেয়াস্ত্র ইতিমধ্যেই উদ্ধার করেছি। রাজনৈতিক সংঘর্ষে নানা আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করার অভিযোগ রয়েছে। সেই সব বেআইনি অস্ত্র উদ্ধারে তল্লাশি চলছে।” ভোটের পর উত্তর দিনাজপুরে ৪টি পাইপগান ও ২ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। জেলার পুলিশ সুপার মিলন কান্ত দাস জানান, নজরদারি চলছে। বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র রাখার নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলেই অভিযান চালানো হবে। শনিবার রাজগঞ্জের পানিকৌড়িতে সিপিএমের জোনাল কমিটির সদস্য রঞ্জিত মণ্ডলের বাড়ির চৌবাচ্চা থেকে ম্যাগাজিন-সহ একটি নাইন এমএম পিস্তল উদ্ধার করে পুলিশ। শুক্রবার জলদাপাড়া অভয়ারণ্য থেকে রাইফেল ও কার্তুজ উদ্ধার হয়। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পর মহাকরণে দক্ষিণবঙ্গ ও উত্তরবঙ্গের শীর্ষ পুলিশ কর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উত্তরবঙ্গের আইজি রণবীর কুমারকে বেআইনি অস্ত্র উদ্ধারে জোর দেওয়ার কথা বলা হয়। তার পরেই উত্তরবঙ্গের ছয় জেলায় নজরদারি শুরু করে পুলিশ। পুলিশ সূত্রের খবর, নির্বাচন এবং নয়া সরকার গঠনের পরে উত্তরের মালদহ, দক্ষিণ দিনাজপুর এবং উত্তর দিনাজপুরেকয়েকটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। নির্বাচনের পরে কোচবিহারের বক্সিরহাট থানার উত্তর বালাকুঠি থেকে পাইপগান সহ এক সিপিএম সমর্থককে গ্রেফতার করে পুলিশ। ১০ জুন কালিয়াচকে বামনগ্রামে কর্তৃত্ব কায়েম নিয়ে কংগ্রেস-সিপিএম সমর্থকদের মধ্যে বোমা-গুলির লড়াই হয়। জুনের প্রথম সপ্তাহে কালিয়াচকে গুলি করে ও ভোজালি দিয়ে কুপিয়ে ২ ব্যবসায়ীকে খুন করা হয়। নিহতদের মধ্যে এক জন কংগ্রেস নেতা। উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ার নির্বাচনের পরে ১০টি রাজনৈতিক সংঘর্ষ হয়। ৩১ মে হরিশচন্দ্রপুরের ডাটিয়ানে এক যুবককে গুলি করে খুনের চেষ্টা করে দুষ্কৃতীরা। ধৃতদের কাছ থেকে একটি নাইন এমএম পিস্তল, একটি দেশি পিস্তল ও ৩ রাউন্ড গুলি উদ্ধার হয়। ওই দিন বালুরঘাটে আরএসপিকে কর্মীকে কুপিয়ে খুন করা হয়। ৮ মে দক্ষিণ দিনাজপুরে এক ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে ও গুলি করে মারে দুষ্কৃতীরা। মে মাসে উত্তর দিনাজপুরের বিন্দোলে ডাকাতির পর গুলি ছুড়তে ছুড়তে পালায় দুষ্কৃতীরা। ১০ মে মালদহ বাসে গুলি করে ও কুপিয়ে এক ব্যক্তিকে খুন করা হয়। মে-র দ্বিতীয় সপ্তাহে এনজেপিতে এক ব্যবসায়ীকেও গুলি করে খুন করা হয়। |