বাড়িতে বেআইনি অস্ত্র রাখার অভিযোগে ধৃত সিপিএম নেতা রঞ্জিত মণ্ডল এবং তাঁর সহযোগীদের হয়ে আদালতে জামিনের আবেদন জানালেন না কোনও আইনজীবীই। রবিবার ওই সিপিএম নেতা এবং তাঁর দুই সঙ্গীকে জলপাইগুড়ি জেলা আদালতে তোলা হয়। জেলা আদালতের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সুজয় সেনগুপ্ত ধৃতদের ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন। শনিবার পুলিশ ওই সিপিএম নেতার বাড়িতে তল্লাশির সময়ে চৌবাচ্চা থেকে একটি নাইন এমএম পিস্তল এবং দুটি ম্যাগাজিন উদ্ধার করে। সিপিএমের জলপাইগুড়ির সাংসদ মহেন্দ্র রায় অবশ্য জানিয়েছেন, দল রঞ্জিত মণ্ডলের পাশেই থাকবে। আজ, সোমবার জলপাইগুড়ি আদালতে ওই সিপিএম নেতার জামিনের জন্য আবেদনও জানাবেন তাঁরা। সিপিএম সাংসদ বলেন, “রঞ্জিত একেবারেই নির্দোষ। অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা পুরোপুরি সাজানো ঘটনা। ওকে বলেছি, সত্যেরই জয় হবে।” জলপাইগুড়ির রাজগঞ্জের ওই সিপিএম নেতার হেফাজত থেকে অস্ত্র উদ্ধার হলেও উত্তরবঙ্গে রাজনৈতিক সংঘর্ষ চলছেই। শনিবারও হামলা চালিয়ে এক সিপিএম সমর্থকের বাড়ি আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে উত্তর দিনাজপুর জেলার চোপড়ায়। এলাকার গোয়াবাড়ি গ্রামে ওই দিন রাতে সংঘর্ষের সময়ে হামলাকারীদের বাধা দিতে গিয়ে ৩ সিপিএম সমর্থক জখম হন। জখমেরা একই পরিবারের। তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। খবর পেয়ে আধা সামরিক বাহিনীর জওয়ানরা এলাকায় গিয়ে পরিস্থিতি আয়ত্বে আনেন। সিপিএমের চোপড়া লোকাল কমিটির সম্পাদক পরিতোষ রায়ের অভিযোগ, “ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকেই এলাকায় কংগ্রেসের অত্যাচার মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছে।” কংগ্রেসের চোপড়া ব্লকের সভাপতি অশোক রায় বলেন, “ওই ব্যক্তি শনিবার রাতে মদ খেয়ে গোলমাল করেন। তারই জেরে তাঁর বাড়িতে হামলা হতে পারে। এর সঙ্গে রাজনীতির যোগ নেই।”
এ দিকে, রাজগঞ্জেরর তৃণমূল নেতাদের অবশ্য অভিযোগ, কেবল রঞ্জিত মণ্ডলই নয়, ঠিকঠাক তল্লাশি চালানো হলে এলাকার আরও বেশ কিছু সিপিএম সমর্থকের বাড়ি থেকেই অস্ত্র উদ্ধার হতে পারে। এলাকার তৃণমূল যুব নেতা নিমাই মণ্ডল বলেন, “এলাকায় আরও অস্ত্র জমা রয়েছে। সমস্ত তথ্য এখনও সংগ্রহ করা যায়নি। বিভিন্ন এলাকা থেকে যে সমস্ত তথ্য মিলছে, সবই পুলিশকে জানানো হচ্ছে।” তৃণমূলের মান্তাদাড়ি অঞ্চলের সভাপতি নাসের আলি বলেন, “এলাকার মানুষ এবার স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবেন। রঞ্জিত মণ্ডলের দাপটে এলাকার কোনও মানুষ মুখ খুলতে পারতেন না। আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে সিপিএম এলাকায় ভোটে জিতত। এ বার সেটা হাতেনাতে প্রমাণ হল।” এ দিন মিলনপল্লি এলাকায় রঞ্জিতবাবুর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় শ্মশানের স্তব্ধতা। গোটা বাড়িটাই সুনসান। দুটি দোতলা কাঠের বাড়ি। উঠোনে কালী মন্দির। বাড়ির বাইরের ডাকঘর। বাড়ির ধার ঘেঁষে দুটো বড় পুকুর। পশ্চিম দিকে আরও ছোট ৪টি পুকুর। বাড়িতে ঢোকার মুখে দু’টি গাছে সিপিএম পতাকা উড়ছে। বাড়িতে রয়েছেন শুধু তাঁর মেয়ে ডলি দেবী। দিন কয়েক আগে ময়নাগুড়ি শ্বশুরবাড়ি থেকে বাপের বাড়ি এসেছেন ডলি দেবী। খবর পেয়ে রবিবা গজলডোবা থেকে ছুটে এসেছেন তাঁর ভাই। ডলি দেবী বলেন, “সকাল থেকেই বাড়ির কাছাকাছি শ’দেড়েকের মতো তৃণমূলের লোকজন জড়ো হয়েছিলেন। বাবা-মা বাড়িতেই ছিল। বাবা-মা জলপাইগুড়িতে ডাক্তারের বাড়ি যাবেন বলে বাড়ির বাইরে বের হতেই পুলিশের কয়েকটি গাড়ি চারপাশ ঘিরে ফেলে। পুলিশ ঢুকতেই তৃণমূলের লোকজনরা পুলিশকে ঠেলে ঘরে তল্লাশি চালানো শুরু করে দেয়। পুলিশের সামনে লুঠপ চলে।” রঞ্জিতবাবুর স্ত্রী মান্তাদাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান প্রভাবতী দেবী বলেন, “তৃণমূলের আমার স্বামীর উপরে অনেক দিন ধরে রাগ। চক্রান্ত করে রাতের অন্ধকারে পুকুরে আগ্নেয়াস্ত্র ফেলে স্বামীকে ধরিয়ে দেওয়া হল। পুলিশ তদন্ত করলেই সত্যটা বেরিয়ে পড়বে।” |