|
|
|
|
নিহতদের পরিবারকে অর্থ-সাহায্য |
বাগবিন্ধ্যায় চাই ক্যাম্প, মমতাকে বলবে ফব |
প্রশান্ত পাল • ঝালদা |
মাওবাদীদের হাতে দলের সাত জন কর্মী খুন হয়েছিলেন যেখানে, ঝালদার সেই বাগবিন্ধ্যা গ্রামে পুলিশ ক্যাম্প বসাতে এ বার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হবেন ফরওয়ার্ড ব্লকের পুরুলিয়া জেলা নেতৃত্ব। রবিবার এ কথা জানিয়েছেন ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক তথা পুরুলিয়ার সাংসদ নরহরি মাহাতো।
দলীয় কর্মীদের ‘মনোবল ফেরাতে’ ঝালদা ও বাঘমুণ্ডির ‘শহিদ পরিবার’গুলিকে এ দিন অর্থ সাহায্য করেন ফরওয়ার্ড ব্লক নেতৃত্ব। মাওবাদীদের হাতে নিহত ঝালদার সাত জন এবং বাঘমুণ্ডির ৫ জন কর্মী-সমর্থকের পরিবারকে দু’লক্ষ টাকা করে চেক তুলে দেন নরহরিবাবু, ফব-র রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নিশিকান্ত মেহেতা, জয়পুরের বিধায়ক ধীরেন্দ্রনাথ মাহাতো-সহ দলীয় নেতারা।
প্রসঙ্গত, গত ১৬ ডিসেম্বর রাতে ঝালদা ১ ব্লকের অযোধ্যা পাহাড়তলির গ্রাম বাগবিন্ধ্যা, গুটিলোহা, নওয়াগড় ও চিরুটাঁড় গ্রামে স্থানীয় ধালদা-দঁড়দা পঞ্চায়েতে মহিলা প্রধান চপলা গড়াইৎ, ঝালদা ১ পঞ্চায়েত সমিতির ফব সভাপতি চণ্ডীচরণ সিংহ সর্দারের ভাই তপন সিংহ সর্দার-সহ সাত জন ফব কর্মীকে (কংগ্রেসের অবশ্য দাবি ছিল, নিহতদের একজন তাদের কর্মী) গুলি করে খুন করেছিল মাওবাদীরা। সেই রাতের পর থেকে এখনও গোটা এলাকা আতঙ্ক থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। আজও ওই চার গ্রামের বহু বাসিন্দা ঘরছাড়া। ফব সাংসদ নরহরিবাবুর কথায়, “আমরা আগেই বলেছিলাম, শহিদদের পরিবারের সঙ্গে আমরা আছি। সেই প্রতিশ্রুতি মোতাবেকই এ দিন শহিদ পরিবারগুলির হাতে দু’লক্ষ টাকা করে অর্থ সাহায্য তুলে দেওয়া হয়েছে।” একই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “যা ক্ষতি হয়েছে, এই সাহায্য তার তুলনায় কিছুই নয়। কিন্তু রাজ্যে আমাদের কর্মী-সমর্থকেরা এই টাকা ঘুরে ঘুরে সংগ্রহ করেছেন।”
বাগবিন্ধ্যার ঘটনা এবং তার পরে বিধানসভা নির্বাচনেও বিপর্যয়, দু’য়ের জেরে ফব নেতৃত্ব ঠিক করেছিলেন, তলানিতে ঠেকে যাওয়া দলীয় কর্মী-সমর্থকদের মনোবল ফেরাতে বাগবিন্ধ্যা গ্রামেই ছোট অনুষ্ঠান করে এই অর্থ সাহায্য তুলে দেওয়া হবে নিহতের আত্মীয়দের হাতে। সেই অনুযায়ী এ দিন সকালে বাগবিন্ধ্যা গ্রামের মুখে নিহত পঞ্চায়েত প্রধান চপলাদেবীর বাড়ির উল্টোদিকের এক চিলতে জমিতে অশ্বত্থ গাছের তলায় ছোট সামিয়ানা টাঙিয়ে অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের আয়োজনও করে ফেলা হয়েছিল। ছিল কড়া নিরাপত্তা। শুধু অনুষ্ঠানস্থল নয়, ঝালদা পুর-শহর ছাড়িয়ে হুসেনডি মোড় থেকে বাগবিন্ধা যাওয়ার আট-নয় কিলোমিটার রাস্তাই এ দিন মোড়া ছিল নিরাপত্তার ঘেরাটোপে। জায়গায় জাগয়া পাহাড়ায় ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনী। ঘণ্টাখানেকের অনুষ্ঠানে চেক তুলে দেওয়ার আগে নিহতদের স্মৃতির উদ্দেশে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। নিশিকান্তবাবু জানান, প্রতি বছর ১৬ ডিসেম্বর এই গ্রামে স্মরণসভা করা হবে। নরহরিবাবু এ দিনও অভিযোগ করেন, “১৬ তারিখের ঘটনা কংগ্রেস ও তৃণমূলের প্রত্যক্ষ মদতে ঘটিয়েছিল মাওবাদীরা। জানি না, এ ধরনের নৃশংস খুনের রাজনীতি উন্নয়নের কোন দিশা দেখাবে!”
এ দিন চেক হাতে নিয়ে কেঁদে ফেলেন চপলাদেবীর স্বামী দুখু গড়াইৎ। তাঁর কথায়, “আমরা রোজ ভাল করে খেতেও পাই না। আমার স্ত্রী ক’দিনই বা পঞ্চায়েত প্রধানের দায়িত্ব নিয়েছিল! ও পঞ্চায়েত কী বুঝত? অথচ ওকেও নৃশংস ভাবে খুন করা হল।” নিহত ফব কর্মী কালীকিঙ্কর সিংহের মা শকুন্তলাদেবীও বললেন, “আমি এখনও ওই রাত ভুলতে পারি না। আমার চোখের সামনে ছেলেটাকে ওরা মেরে দিল। ও রাজনীতির কতটা কী বুঝত?” শকুন্তলাদেবী আজও গ্রামে ফেরেননি। ঝালদা শহরে ঘরভাড়া নিয়ে থাকেন।
দলীয় নেতৃত্ব এ দিনও এসে গ্রামের অবস্থা চাক্ষুষ করেছেন। দলের কর্মীদের কি গ্রামে ফেরানোর ব্যবস্থা করবেন? সরাসরি উত্তর এড়িয়ে গিয়েছেন ফব নেতারা। যদিও অনুষ্ঠানে উপস্থিত দলের কিছু কর্মীই সাফ বলছেন, “নেতাদেরই যখন এমন নিরাপত্তা নিয়ে গ্রামে আসতে হচ্ছে, তখন কর্মীরা কোন সাহসে গ্রামে ফিরবেন?” এই অবস্থানয় বাগবিন্ধ্যায় পুলিশ ক্যাম্প বসানোর দাবি আরও একবার তুলছেন দলীয় নেতৃত্ব। নরহরিবাবু বলেন, “ওই হত্যাকাণ্ডের পরে রাজ্যপাল যখন এখানে এসেছিলেন, তখনও আমরা এই গ্রামে একটা পুলিশ ক্যাম্প করার দাবি জানিয়েছিলাম। পরে আমাদের দলীয় প্রতিনিধিদল তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও একই দাবি করেছিল। বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও আমরা একই দাবি জানাচ্ছি।” তিনি জানান, বিধানসভার অধিবেশন শুরু হওয়ার পরেই এই দাবি নিয়ে তাঁরা নতুন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন।
এ দিনই বিকেলে বাঘমুণ্ডির দলীয় কার্যালয়ে ২০১০ সালের বিভিন্ন সময়ে মাওবাদীদের খুন হওয়া কর্মী-সমর্থকদের পরিবারের হাতে চেক তুলে দেন ফব নেতারা। নিশিকান্তবাবু বলেন, “আমরা আগেই এই অর্থ সাহায্য তুলে দিতে পারতাম। কিন্তু নির্বাচন থাকায় তা বিধিভঙ্গের আওতায় পড়ে যেত। তাই অর্থ সাহায্য তুলে দিতে কিছুটা দেরি হয়েছে।” |
|
|
|
|
|