|
|
|
|
অভিযুক্ত তৃণমূল |
বাঁকুড়ায় পিটিয়ে মারা হল সিপিএম নেতাকে |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
ফের ‘বদলার রাজনীতি’-র শিকার এক সিপিএম নেতা। শনিবার রাতে বাঁকুড়ার কোতুলপুর থানার সাইমনি গ্রামের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে পিটিয়ে মারা হয় সিপিএম নেতা অলক বেওড়াকে (৫৫)। অভিযোগের তির তৃণমূলের দিকে।
অলকবাবু দলের স্থানীয় শাখা কমিটির সদস্য ছিলেন। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে হামলাকারীদের হাতে বেধড়ক মার খেয়ে গুরুতর জখম হন অলকবাবুর ৭৫ বছর বয়সী বাবা রামজয় বেওড়া, মেজ ভাই বাবলু এবং ভাইপো মৃত্যুঞ্জয়। এই তিন জনকেই স্থানীয় গোগড়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করানো হয়েছে। রবিবার বিকেল পর্যন্ত কোনও সিপিএম নেতা ঘটনাস্থলে যাননি। যা থেকে স্পষ্ট ইঙ্গিত, দলের অন্দরে ‘আতঙ্ক’ কতটা ছড়িয়েছে।
বস্তুত, ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকেই বাঁকুড়ার বিভিন্ন প্রান্তে তৃণমূলের হাতে ‘আক্রান্ত’ হচ্ছেন সিপিএম নেতা-কর্মীরা। গত মাসে তালড্যাংরায় সিপিএমের শালতোড়া লোকাল কমিটির সম্পাদক অজিত লোহারকে খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত তৃণমূলই। শুক্রবার দুপুরে কোতুলপুরেরই রায়বাঘিনি গ্রামে অস্ত্র আছে অভিযোগে সিপিএমের শিক্ষক-নেতাকে পেটানোর অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। |
|
নিহত সিপিএম নেতা অলক বেওড়ার মৃতদেহ। নিজস্ব চিত্র |
মাথায় আঘাত নিয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসাধীন বাবলু বেওড়া রবিবার বলেন, “আমি নিজে বিজেপি সমর্থক হলেও দাদা বরাবর সিপিএম করে এসেছেন। শাখা কমিটির সদস্য হওয়ার পাশাপাশি, বড়দা এলাকার হিমঘর মুটে-মজদুর সংগঠনেরও নেতৃত্বে ছিলেন। ভোটের ফল বেরনোর পর থেকেই এলাকার বেশির ভাগ সিপিএম কর্মী গ্রামছাড়া। দাদাও পালাতে চেয়েছিলেন। আমিই অভয় দিয়ে বলেছিলাম, কিছু হবে না। কিন্তু দাদাকে বাঁচাতে পারলাম না!” নিহতের ছেলে সহদেব বেওড়ার অভিযোগ, “ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকেই তৃণমূলের কর্মীরা বাবাকে হুমকি দিত। ওদের ভয়ে বাবা গ্রাম ছাড়ার কথা ভেবেছিলেন।”
হামলাকারীদের মুখ গামছায় ঢাকা ছিল বলে জানালেও কোতুলপুর থানায় স্থানীয় কিছু তৃণমূল কর্মীর নামে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন নিহতের বাবা। সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমিয় পাত্রের অভিযোগ, “তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্বই এই খুনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে আমাদের ধারণা।” জেলা পুলিশ সুপার প্রণব কুমার বলেছেন, “খুনের তদন্ত শুরু হয়েছে। দু’জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।” স্থানীয় সূত্রের খবর, কল্যাণ সিংহ ও প্রদ্যুৎ নন্দী নামে আটক দু’জন এলাকায় তৃণমূল কর্মী হিসাবেই পরিচিত। |
|
কোতুলপুরের সাইমনি গ্রামে শনিবার রাতে সিপিএম নেতা খুনের ঘটনার তদন্তে পুলিশ। ছবি: শুভ্র মিত্র। |
এ দিন সকালে নিহত নেতার বাড়িতে তাঁর বৃদ্ধা মা ভাদুদেবী বলেন, “ওদের পায়ে পড়লাম। তবু ওরা ছেলেকে ছাড়ল না।” পরিবারের লোকজন জানিয়েছেন, শনিবার রাত ১২টা নাগাদ লাঠি, লোহার রড, শাবল নিয়ে জনা ২০-২৫ বাড়িতে চড়াও হয়। হামলার আগে তারা আশপাশের বাড়ির শিকল তুলে দেয়। বাবলুবাবুর দাবি, “ওরা বাড়ির দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে দাদাকে তুলে নিয়ে গেল। বাধা দিতে গিয়ে মার খাই। ওরা উঠোনে নিয়ে গিয়ে দাদাকে রড-লাঠি-শাবল দিয়ে পেটায়। মৃত্যু হয়েছে, নিশ্চিত হওয়ার পরে এলাকা ছেড়ে চলে যায়।”
সিপিএম নেতৃত্ব অবশ্য রবিবার রাত পর্যন্ত এলাকায় যাননি। স্থানীয় বাসিন্দা তথা সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তাপস চক্রবর্তীর অভিযোগ, “ওখানে যাওয়ার মতো পরিবেশ নেই। তৃণমূল সন্ত্রাস চালাচ্ছে।
অলকবাবুকে ওরাই খুন করেছে।” জেলা সম্পাদক অমিয়বাবুও বলছেন, “ওখানে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি নেই। আমাদের জোনাল সম্পাদক গেলেও তৃণমূলের লোকেদের হাতে মার খেয়ে যেতে পারেন।” যদিও কোতুলপুর ব্লক তৃণমূল সভাপতি নিমাই ঘোষের দাবি, “আমরা দলনেত্রীর (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) নির্দেশ মেনে রাজনীতি করি। আমাদের দলের কেউ এই ঘটনায় যুক্ত নয়।” |
|
স্বজনের কান্না।-নিজস্ব চিত্র |
অন্য দিকে, শনিবার রাতেই ডিওয়াইএফের নবদ্বীপ জোনাল কমিটির সদস্য সফিক বিশ্বাসের বাড়ি ও দোকান ভাঙচুরের ঘটনায় তৃণমূলের দিকেই অভিযোগের আঙুল উঠেছে। তৃণমূল অবশ্য দাবি করেছে, কিছু মদ্যপ লোক ওই কাণ্ড ঘটিয়েছে। রবিবার মেদিনীপুর সদর ব্লকের বাগডুবিতেও দীর্ঘ দিন পরে গ্রামে ফেরা দুই সিপিএম কর্মীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তৃণমূলের অবশ্য দাবি, ঘটনার সঙ্গে দলের কোনও যোগ নেই। গ্রামবাসীরাই ওই দু’জনকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেন। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, সদর ব্লকের কনকাবতীতে ‘সশস্ত্র শিবির’ চালাত সিপিএম। সেই শিবিরেই ছিলেন এই দু’জন। পুলিশ জানিয়েছে, দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। |
|
|
|
|
|