বদলা নাও না কেন, নিজের উপরেই?
আমি দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। প্রস্তুতির কাছে পরামর্শের জন্য এই চিঠি। প্রথম শ্রেণি থেকে আমি বরাবর ক্লাসের সেরা দশজনের অন্যতম। অঙ্কে নম্বর পেয়েছি বরাবর নব্বই শতাংশ। কিন্তু একাদশ শ্রেণিতে আমি ওই বিষয়ে চল্লিশ শতাংশ নম্বরও পাইনি। বাবা মা অখুশি। আত্মীয়, বন্ধুরা জিজ্ঞাসা করে, অঙ্কে কত পেয়েছিস? আমি উত্তর না দিয়ে লজ্জায় মুখ লুকিয়ে রাখি। স্কুলে যেতে ইচ্ছা করে না। উচ্চ মাধ্যমিকেও কি আমার অঙ্ক পরীক্ষা খারাপ হবে? আমি কি বন্ধুদের সঙ্গে স্বচ্ছন্দে কথা বলতে পারব না?
ছবি: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য
তোমাকে বলছি
একটা সত্য জেনে রাখো। শুধু তোমার একার নয়, আরও অনেক ছাত্রছাত্রীরই কিন্তু একই অবস্থা। কেন এমনটা হয়, সেটা আগে বুঝে নাও। মাধ্যমিক আর উচ্চ মাধ্যমিকে সিলেবাসের ফারাক বেশ অনেকটা। উচ্চ মাধ্যমিকে অঙ্কে প্রশ্নের ধরনটাও এখন পাল্টে গেছে। এই দু’রকম ফারাকের ধাক্কা সামলানো অনেকের পক্ষেই একটা সমস্যা। সুতরাং তুমি যে সমস্যার কথা লিখেছ, তা পৃথিবীতে কেবল তোমারই, এ কথা ভেবে মন খারাপ মোটেই কোরো না।
সিলেবাসের ফারাক যদিও সব বিষয়েই থাকে, তবু অঙ্কের ক্ষেত্রে সেটা সবচেয়ে বেশি হয়ে দাঁড়ায় কেন জানো? মাধ্যমিক স্তরে যে অঙ্ক তুমি কষেছ, এবং নব্বই শতাংশ নম্বর পেয়ে মনে মনে একটু গর্বও অনুভব করেছ, সে অঙ্কের সঙ্গে উচ্চ মাধ্যমিকে ওই বিষয়টার একেবারে চরিত্রগত তফাত আছে। ফলে, মাধ্যমিকে অঙ্কে একশোয় একশো পেলেই বিরাট কিছু প্রমাণ হয় না। সোজা কথায়, পুকুরে আর নদীতে সাঁতার কাটায় যা তফাত, মাধ্যমিক আর উচ্চ মাধ্যমিকে তেমনই ফারাক। সুতরাং, একাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় চল্লিশ শতাংশ কম নম্বর পেলেও ঘাবড়ানোর কোনও কারণ নেই। মুখ লুকোনোর প্রশ্ন তো ওঠেই না। বরং সত্যিটা সহজ করে নাও। কেউ জিজ্ঞাসা করলে চটপট বলে দাও, তুমি কত পেয়েছ। তাতে যদি কেউ নাক সিঁটকোয়, তো তুমি তাদের থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিও। এবং সঙ্গে সঙ্গে এটাও ঠিক করে নিও যে, ওই উপেক্ষার জবাব তুমি দেবে। দেবেই।
সমস্যা আছে ঠিকই। কিন্তু তাতে ভয় পাওয়াটা কী কাজের কথা? বরং মনে রেখো যে, এই প্রথম অঙ্ক বিষয়টা তোমার সামনে তার আসল মজা নিয়ে উপস্থিত। অঙ্ক মানে তো কেবল নামতা নয়, ১৯ এবং ৪৯-এর গুণফল মুখে মুখে বলে দেওয়া নয়, অঙ্ক মানে বুদ্ধির লুকোচুরি, প্যাঁচালো ধাঁধার সমাধান। আমাদের দেশের প্রাতঃস্মরণীয় গণিতজ্ঞ শ্রীনিবাস রামানুজন দিন-রাত অঙ্ক কষতে ভালবাসতেন। আসলে, গণিতের বইয়ে এক একটা প্রশ্নমালা ওঁর সামনে ধরা দিত বিস্তীর্ণ এক একটা পর্বতমালা হিসেবে। এক একটা প্রশ্নের সমাধান যেন এক একটা শৃঙ্গ জয়। পর পর শৃঙ্গগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর। একের পর এক প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়ার মজা অনেক। পর্বতারোহীরা যেমন এক একটা শৃঙ্গ জয় করে আনন্দ পান, প্রশ্নের পর প্রশ্ন সমাধান করে রামানুজনও তেমনই আনন্দে বিভোর হয়ে থাকতেন। না, কাল সকালে উঠে তুমি রামানুজন হয়ে যাবে, এমন কথা বলছি না। বলছি শুধু এটাই যে, নম্বর যাই পাও, অঙ্ক বিষয়টা দেদার একটা মজার সাবজেক্ট।
শুধু কথায় লাভ নেই। এ বার কাজের বিষয়ে আসি। একাদশ শ্রেণির অঙ্ক উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় আসবে না বলে গণিতের বইটা তাকে তুলে রেখো না। খুলে নিয়ে বসো। মন দিয়ে বিভিন্ন শাখার প্রশ্ন মালাগুলোর দিকে মন দাও। বীজগণিত, ত্রিকোণমিতি, স্থানাঙ্ক জ্যামিতির প্রবলেমগুলো নিয়ে নতুন করে ভাবো। বোঝার চেষ্টা করো এক একটা প্রশ্নে তোমার কাছে কী জানতে চাওয়া হয়েছে। অপারেশন থিয়েটারে এক জন সার্জেন যে ভাবে মানবদেহ নিয়ে কাটাছেঁড়া করেন, তুমিও সে ভাবে প্রশ্নগুলো নিয়ে কাটাছেঁড়া করো। অঙ্কের প্রশ্ন মানে কি? তোমাকে কতকগুলো জিনিস বলে দেওয়া হয়েছে, এর পর তোমাকে একটা প্রশ্ন করা হয়েছে। যার উত্তর খুঁজতে হবে তোমাকে দেওয়া জিনিসগুলোর সাহায্যেই। নির্ভেজাল পাজল সলভিং। এই দৃষ্টিভঙ্গি হারালে ভুল করবে। এই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে একাদশ শ্রেণির অঙ্ক সামলে দ্বাদশ শ্রেণির বইতে ঢুকে পড়ো।
মনে রেখো, উচ্চ মাধ্যমিকে প্রশ্নের ধরন এখন পাল্টে গেছে। পরীক্ষায় প্রশ্ন এমন ভাবে করা হয়, যাতে তোমার ওই পাজল সলভিং-এর দক্ষতা কতটা সেটা জানা যায়। প্রশ্নের এই নতুন ধরন মাথায় রেখেই তোমাকে তৈরি হতে হবে।
আর একটা কথা। একাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় অঙ্কে যে নম্বর তুমি পেয়েছ, সেটা ভুলে যেও না। ওই নম্বরটার কথা ভেবে মনে মনে তৈরি হও। যেন বদলা নেওয়ার ভঙ্গিতে। তা হলেই উচ্চ মাধ্যমিকের মোকাবিলাটা সহজ হয়ে আসবে।
বাবা-মাকে বলছি
রনির চিঠি পড়ে জানলাম, আপনারা অখুশি। তা হতে পারেন, তবে ওর সমস্যাটা বুঝতে ভুল করবেন না। ওর এখন যা দরকার তা হল এক জন প্রকৃত শিক্ষকের সান্নিধ্য। খুঁজে দেখুন, তেমন কেউ আপনাদের কাছাকাছি আছেন কিনা, যিনি ওর গণিত ভাবনাকে উস্কে দিতে পারেন। এমন শিক্ষক পাওয়া বেশ কষ্টের, তা মানছি। তবে, কোচিং ক্লাসে (যেখানে এক সঙ্গে ত্রিশ-চল্লিশজন পড়ে) তেমন শিক্ষক পাওয়ার সম্ভাবনা যে কম সেটাও বলে রাখছি। যদি একান্তই ওর প্রয়োজনীয় শিক্ষকটিকে খুঁজে না পান, তা হলে হাল ছেড়ে দেবেন না। বরং ওকে বলুন, তেমন কাউকে খুঁজে পাওয়া গেল না তো কি হয়েছে, তুমি একাই তৈরি হও। এই প্রস্তুতি পর্বে আপনারাও সন্তানের মানসিক সঙ্গী হোন। একাদশ শ্রেণিতে ছেলের নম্বর হঠাৎ কমে গেছে বলে অখুশি হতে পারেন, লজ্জিত হবেন না মোটেই। লজ্জিত হওয়া মানে হার স্বীকার। রনি হারেনি, ওকে জেতায় সাহায্য করুন। ও ঘুরে দাঁড়াবে, যদি এখন ওর প্রয়োজনীয় সাহায্য আপনারা ওর দিকে বাড়িয়ে দেন।
ছেলেমেয়েকে নিয়ে মা-বাবার সমস্যা? নাকি মা-বাবাকে নিয়ে ছেলেমেয়ের সমস্যা? পড়ার খরচ
নিয়ে অভিভাবকের দুশ্চিন্তা? দূরের শহরে পড়তে যাওয়ার নামে মেয়ের গায়ে জ্বর আসা? যে
মুশকিলই হোক না কেন, পরিবারের সবাই মিলেই সমাধানে পৌঁছতে হবে। এ বার থেকে
‘প্রস্তুতি’-ও কথা বলবে গোটা পরিবারের সঙ্গেই। অভিভাবকদের বা সন্তানের যে কোনও দুশ্চিন্তার
কথা আমাদের জানান (এবং জানাও) নিজেদের সমস্যা। সুচিন্তিত উত্তর দেবেন বিশেষজ্ঞরা।

ইমেল: prastuti@abp.in বিষয়: Haate Haat।

অথবা, চিঠি পাঠান (এবং পাঠাও) এই ঠিকানায়:
হাতে হাত, প্রস্তুতি,
Previous Item Prostuti Next Item


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.