|
|
|
|
হাই মাদ্রাসা নিয়ে ক্ষোভ মেটেনি অভিভাবকদের |
অনল আবেদিন • লালগোলা |
গ্রীষ্মের ছুটির পর আজ সোমবার লালগোলার মাণিকচক হাইমাদ্রাসা (উচ্চ-মাধ্যমিক) খুললেও অভিভাবকদের প্রস্তাবিত বিক্ষোভের জেরে পঠনপাঠন হবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। কারণ, আজ অভিভাবকরা মাদ্রাসায় গিয়ে বিক্ষোভ দেখানোর কর্মসূচি নিয়েছেন।
ওই মাদ্রাসার পরিচালন সমিতির সম্পাদক তাজমল হক বলেন, “প্রধানশিক্ষক সাড়ে ৭ লক্ষ টাকা তছরুপ করেছেন বলে পুলিশের কাছে তাঁর বিরুদ্ধে এফ আই আর করা হয়েছে গত ৬ মে। তার জেরে প্রধানশিক্ষক গত ১২ মে থেকে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। স্বাভাবিক কারণে ছাত্রছাত্রীদের পঠনপাঠন ও ইউনিট টেস্ট নিয়ে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। তার প্রতিবাদে অভিভাবকরা মাদ্রাসায় গিয়ে বিক্ষোভ দেখানোর কর্মসূচি নিয়েছেন।” ফলে গ্রীষ্মের ছুটির পর মাদ্রাসা খোলার প্রথম দিনেই ফের অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার সম্ভবনা দেখা দিয়েছে।
কিন্তু যে ‘আর্থিক তছরুপে’র অভিযোগ নিয়ে মাস খানেকের বেশি সময় ধরে ওই মাদ্রাসায় ডামাডোল চলছে সেই অনিয়মটি কী ধরণে?
প্রায় ৯০ বছরের প্রাচীন ওই তিন তলা মাদ্রাসার রয়েছে নিজস্ব বিঘা আটেক খেতিজমি, যা থেকে প্রতি বছর আয় হয়। ২০০৪ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ৭ বছরে জমি থেকে পাওয়া আয়ের টাকার কোনও হিসাব প্রধানশিক্ষক পেশ করতে পারেননি বলে দাবি ওই তাজমল হকের। এ ছাড়াও তাঁর অভিযোগ, “মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা টাকার হিসেব নিয়ে ব্যাপক দুর্নীতি ধরা পড়েছে। ওই টাকার হিসাব পরিচালন সমিতির সভায় পেশ করেন না প্রধানশিক্ষক।” |
|
হাইমাদ্রাসায় লেখা ব্যায়ের হিসেব। ছবি: গৌতম প্রামাণিক। |
প্রায় আড়াই হাজার ছাত্রছাত্রীর ওই মাদ্রাসায় অভিযোগ উঠেছে ছাত্রীদের শৌচালয়, কমনরুম ও পানীয় জলের প্রকল্প নির্মাণ সংক্রান্ত টাকা তছরুপের। প্রধানশিক্ষক নুরুল ইসলাম নিজেই পরিচালন সমিতির সভায় ছাত্রীদের শৌচালয়, কমনরুম ও পানীয় জলের প্রকল্প নির্মাণের খরচের হিসাব পেশ করেছেন। তাঁর পেশ করা হিসাবে দেখানো হয়েছে, “পাঁচ হাজার ইট দিয়ে ছাত্রীদের শৌচালয় নির্মান করতে সিমেন্ট খরচ হয়েছে ২৭১ বস্তা।” পরিচালন সমিতির সম্পাদক জানান, পরিচালনসভায় প্রধানশিক্ষকের পেশ করা হিসাবে ওই পাঁচ হাজার ইটের কাজ করতে লেগেছে, “লোহার রড ১০ কুইন্টাল ও ১০ কুইন্টাল বালি।” তিনি বলেন, “ওই হিসাব নিয়ে মানিকচকে রীতিমতো হাসির রোল উঠেছে।”
পরিচালন সমিতির সম্পাদক তাজমল হক বলেন, “তবে সব কিছুকে ছাড়িয়ে গিয়েছে মেয়েদের কমনরুম নির্মাণ সংক্রান্ত ধাপ্পা। দোতলার যে ঘরের দেওয়ালে কিছু দিন আগে লেখা হয়েছে ‘মাণিকচক হাইমাদ্রাসা (উঃ মাঃ) বালিকা কমনরুম। সৌজন্যে মাদ্রাসা বোর্ড ২০০৮-০৯।’ সেই ঘরটি ২০-২২ বছর আগের তৈরি।” প্রধানশিক্ষক নরুল ইসলাম অবশ্য বলেন, “ওই কথাটি ভুল করে লেখা হয়েছে। আসলে বালিকা কমনরুমের জন্য মাদ্রাসা বোর্ড থেকে কোনও টাকা পাওয়া যায়নি।” দেওয়ালে ‘ভুল করে লেখা’ হলেও পরিচালন সমিতির একাধিক সভায় কেন ‘গার্লস কমনরুম’ নির্মাণ বাবদ খরচ ওই দেখানো হয়েছে? মাদ্রাসার প্রধানশিক্ষক নুরুল ইসলাম সিপিএমের ধুলাউড়ি লোকাল কমিটির সম্পাদক ও লালগোলা জোনাল কমিটির সদস্য। তাঁর কাছ থেকে ওই বিষয়ে কোনও সদুত্তর মেলেনি। সি পি এমের মুর্শিদাবাদ জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য তুষার দে অবশ্য বলেন, “স্কুলের টাকা পয়সার কথা আমার জানার কথা নয়, জানিও না। নুরুল ইসলাম প্রকৃত অর্থেই সৎ মানুষ। রাজনৈতিক কারণে মিথ্যা অভিযোগে তাঁকে ফাঁসানো হতে পারে।”
বছর খানেক আগে ওই স্কুলের পরিচালন সমিতি সিপিএমের দখল থেকে চলে যায় কংগ্রেসের দখলে। পরিচালন সমিতির সম্পাদক তাজমল হক স্থানীয় অঞ্চল কংগ্রেস সভাপতি ও প্রাক্তন গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান। তাঁর কাছ থেকে স্কুলের নধিপত্র ছিনিয়ে নিয়েছেন বলে তাজমল হকের বিরুদ্ধে থানায় নালিশ করেছেন প্রধানশিক্ষক। তাজমল বলেন, “যে সব নথিপত্র পরিচালন সমিতির সম্পাদকের কাছে থাকার কথা সে গুলিই রয়েছে। তাঁর তোলা ওই অভিযোগ ভিত্তিহীন ও মিথ্যা। আর্থিক দুর্নীতি ধরা পড়ায় তিনি এখন ফন্দি আটছেন।” মুর্শিদাবাদ জেলা বিদ্যালয় (মাধ্যমিক) পরিদর্শক শুভেন্দুবিকাশ দত্ত বলেন, “সপ্তাহ খানেকের মধ্যে তদন্তকারী দল সরেজমিনে গিয়ে সব কিছু খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দেবে। রিপোর্ট পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তবে বাংলাদেশের সীমানা ঘেসা ৪৮ জন শিক্ষকে সমৃদ্ধ ওই মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রীদের পঠনপাঠন কবে স্বাভাবিক হবে, কবেই বা দ্বিতীয় ইউনিট টেস্ট নেওয়া হবে, সেই সব বিষয়ে আপাতত অনিশ্চত। |
|
|
|
|
|