|
|
|
|
চলছে অস্ত্র উদ্ধারও |
ফের হাড়গোড় মিলল গড়বেতা-কেশপুরে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
ফের মড়ার খুলি ও হাড়গোড় উদ্ধার হল গড়বেতায়। রবিবার রঘুনাথপুর এলাকায় ওই হাড়গোড়ের সঙ্গেই পাওয়া গিয়েছে কিছু জামা-কাপড়ের টুকরো ও একাধিক বালা। নির্দিষ্ট অভিযোগ না করলেও তৃণমূলের দাবি, ক্ষমতায় থাকাকালীন বহু মানুষকে খুন করেছে সিপিএম। পরে মৃতদেহ লোপাট করা হয়েছে। রঘুনাথপুরেও তেমনই কারও দেহ পোঁতা ছিল। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
গড়বেতার তৃণমূল নেতা অসীম ওঝার অভিযোগ, “বিধানসভা নির্বাচনের আগে পর্যন্ত এই এলাকা সিপিএমের মুক্তাঞ্চল ছিল। বহু মানুষকে খুন করেছে ওরা। দেহ পুঁতে দিয়েছে। রঘুনাথপুরে পাওয়া হাড়গোড় তেমনই কারও হবে।” সিপিএমের স্থানীয় নেতারা মুখ খোলেননি। আর দলের জেলা সম্পাদক দীপক সরকার ‘মিটিংয়ে ব্যস্ত’ বলে প্রসঙ্গটি এড়িয়ে যান। পুলিশ সূত্রের খবর, হাড়গোড়ের ফরেন্সিক পরীক্ষা করা হবে। পশ্চিম মেদিনীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) সুকেশ জৈন বলেন, “সব দিকই খতিয়ে দেখছি।”
সপ্তাহখানেক আগেই গড়বেতার সিপিএম বিধায়ক সুশান্ত ঘোষের আদি বাড়ির অদূরে দাসেরবাঁধ থেকে হাড়গোড় মেলে। তৃণমূলের অভিযোগ ছিল, ২০০২-এ কেশপুরের পিয়াশালা গ্রামে ৭ জন দলীয় কর্মী-সমর্থককে খুন করে দেহ মাটিতে পুঁতে দেয় সিপিএম। সেই ঘটনার তদন্ত করছে সিআইডি। ইতিমধ্যে দিন তিনেক আগে গড়বেতারই মাজুরিয়া সংলগ্ন শীলাবতী নদীর চর থেকে কিছু পোড়া কাঠ উদ্ধার হয়। ছোট আঙারিয়া মামলায় অভিযুক্ত, পরে তথ্যপ্রমাণের অভাবে বেকসুর খালাস পাওয়া আসাজুল খানের দাবি, ২০০১-এ ওই জায়গাতেই ৫টি দেহ পোঁতা হয়। পরে দেহগুলি মাটি খুঁড়ে বের করে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। সেই পোড়া কাঠই মিলেছে শীলাবতীর চরে। |
|
কেশপুরের আনন্দপুরে উদ্ধার হওয়া খুলি। নিজস্ব চিত্র |
গড়বেতার একের পর এক জায়গা থেকে হাড়গোড় পাওয়ার তালিকায় নবতম সংযোজন রঘুনাথপুর। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, শনিবার রাতে রঘুনাথপুরে শীলাবতীর চরে কয়েকজনকে ঘুরে বেড়াতে দেখেন গ্রামবাসীরা। সন্দেহ হওয়ায় রবিবার সকালে ওই এলাকায় মাটি খোঁড়া শুরু হয়। গ্রামবাসীই প্রথমে মাটি খুঁড়তে শুরু করেন। পরে পৌঁছয় পুলিশ। মাথার খুলি, হাড়গোড় ও জামা-কাপড়ের টুকরো উদ্ধার হয়। একাধিক হাতের বালাও মেলে, যা দেখে স্থানীয় মানুষের অনুমান, ওই দেহাবশেষ কোনও মহিলার।
কেশপুরের আনন্দপুরেও এ দিন মাটি খুঁড়ে পাওয়া গিয়েছে মাথার খুলি। স্থানীয় সূত্রের খবর, স্থানীয় দুই সিপিএম কর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে গ্রামবাসীরা জানতে পারেন আনন্দপুরের পাঁউশখালি গ্রাম সংলগ্ন এলাকায় দেহ পোঁতা হয়েছিল। ওই জায়গায় মাটি খুঁড়ে পাওয়া যায় মাথার খুলি। তৃণমূলের অভিযোগ, ২০০০ সালে দলীয় কর্মী মওদুদ হোসেনকে অপহরণের পরে খুন করে সিপিএমের লোকজন। পরে মৃতদেহ পুঁতে দেওয়া হয়েছিল। মওদুদের বাড়ি জগন্নাথপুরে। কেশপুরেই তিনি অপহৃত হন। তৃণমূলের ধারণা, উদ্ধার হওয়া দেহাবশেষ মওদুদের। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
হাড়গোড়ের পাশাপাশি, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারও চলছে। এ দিন শালবনির চ্যাংশোল থেকে দু’টি পিস্তল মিলেছে। সঙ্গে কিছু কার্তুজ। পশ্চিম মেদিনীপুর ছাড়াও এ দিন বেআইনি অস্ত্র মিলেছে পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ায়। অস্ত্র রয়েছে এই দাবিতে রবিবার ভোর থেকেই পাঁশকুড়ার পশ্চিম প্রান্তে হাউর এলাকার মুরলিচক গ্রামের সিপিএম নেতা ভগীরথ দোলইয়ের বাড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা। পরে পাঁশকুড়া থানার পুলিশ গিয়ে ওই বাড়িতে তল্লাশি চালায়। বাড়ির পিছন থেকে, ৬টি বোমা ও একটি হাত-কামান পাওয়া যায়। সিপিএমের লোকাল কমিটির সদস্য ভগীরথবাবুকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। তবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁর স্ত্রী শ্রীমতীদেবীকে আটক করেছে পুলিশ। আটক করা হয় গ্রামের আরও তিন সিপিএম সমর্থককে।
এ দিন সকালেই বাঁকুড়ার পাত্রসায়রে গ্রামবেড়ার পুকুর থেকে একটি বোমা, কয়েকটি টাঙ্গি ও বল্লম উদ্ধার করে পুলিশ। গ্রামবাসীর কাছে খবর পেয়ে প্রায় শুকনো পুকুরের মাটি খুঁড়ে সেগুলি উদ্ধার করা হয়। অস্ত্র মিলেছে হুগলির গোঘাটের অনুপনগরে। সেখানেও পাওয়া গিয়েছে ৪টি মাস্কেট, ২টি হাত-কামান, একটি দেশি পিস্তল, ১৩ রাউন্ড গুলি এবং বোমার মশলা। |
|
|
|
|
|