|
|
|
|
সম্পাদকীয় ২... |
রাজনীতির বাধ্যতা |
ডি এম কে-র শীর্ষ নেতৃত্ব ইউ পি এ জোটে কংগ্রেসের সহযোগী হিসাবে থাকিয়া যাওয়ার সিদ্ধান্তেই অবিচল রহিল। সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনায় মনে হইতেছিল, বড় শরিকের উপর বীতশ্রদ্ধ হইয়া এই দক্ষিণী দলটি কেন্দ্রীয় শাসক জোটের অন্তর্ভুক্ত থাকার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করিবে, নিদেনপক্ষে দলীয় মন্ত্রীদের ইস্তফা দিতে বলিয়া বড় শরিকের উপর চাপ সৃষ্টি করিবে। কিন্তু দলীয় নেতৃত্বকে ক্ষুব্ধ অভিমানপ্রসূত প্রত্যাখ্যানের পথে হাঁটিতে দেখা গেল না। বরং করুণানিধি ইউ পি জোটে থাকিয়া যাওয়ার সিদ্ধান্তেই অটল রহিলেন। কারণটি অনুমান করা কঠিন নয়। রাজ্য বিধানসভার নির্বাচনে জয়রাম জয়ললিতার এ ডি এম কে-র হাতে বিপর্যস্ত হওয়ার পর রাজ্য-রাজনীতিতে ডি এম কে আপাতত পাঁচ বছরের জন্য অপ্রাসঙ্গিক হইয়া পড়িয়াছে। এখন কেবল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্বই ডি এম কে-কে প্রাদেশিক ও জাতীয় রাজনীতিতে ভাসাইয়া রাখিতে পারে।
এ বিষয়ে সন্দেহ নাই যে, জোট ও সরকার গঠনের সময় অন্যান্য শরিকের তুলনায় ডি এম কে-কে কংগ্রেস অতিরিক্ত গুরুত্ব দিয়াছে। অন্য শরিক তৃণমূল কংগ্রেসের তুলনায় কম আসন পাইয়াও করুণানিধি অনেক বেশি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্ব হাসিল করিয়া লন। ইহার মধ্যে অর্থকরী টেলিকম মন্ত্রক এ আর রাজার কল্যাণে হাতছাড়া। বস্ত্র মন্ত্রী দয়ানিধি মারানের মন্ত্রিত্বও বিপন্ন। এই অবস্থায় দরকষাকষি করার মতো বিকল্প করুণানিধির হাতে বিশেষ অবশিষ্ট নাই। তবু তিনি যদি মর্যাদার প্রশ্নে জিদ ধরিয়া জোট হইতে বাহির হইয়া আসেন কিংবা দলীয় মন্ত্রীদের ইস্তফা দিতে বলিয়া কংগ্রেস হাইকমান্ডের উপর চাপ সৃষ্টির পথ অবলম্বন করেন, তাহা হইলে জাতীয় রাজনীতি হইতেই ডি এম কে আপাতত নির্বাসিত হইয়া পড়িবে। নিজের নাক কাটিবে, অথচ পরের যাত্রাভঙ্গও হইবে না। কারণ ডি এম কে সমর্থন প্রত্যাহার করিলেও ইউ পি এ সরকারের পতন হইবে না। মুলায়ম সিংহ যাদব, মায়াবতীরা তো তাঁহাদের সাংসদদের লইয়া সমর্থনে প্রস্তুতই আছেন, উপরন্তু জয়ললিতাও ডি এম কে-র শূন্য স্থান পূরণ করিতে ইউ পি এ জোটে ঢুকিয়া পড়িতে পারেন। করুণানিধি তাই অপমান হজম করিলেন। জোট-রাজনীতিতে এটি অস্বাভাবিক নয়। বড় শরিক হিসাবে জাতীয় দলগুলির যেমন কিছু বাধ্যবাধকতা থাকে, আঞ্চলিক দলগুলিও তাহা হইতে মুক্ত নয়। নিজ-নিজ রাজ্যে শক্তিবৃদ্ধির নিরিখেই তাহারা কেন্দ্রে গুরুত্ব ও মর্যাদা পায়। রাজ্য-রাজনীতিতে পায়ের তলার মাটি সরিয়া গেলে দিল্লির রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করার আস্ফালন তাই অন্তঃসারশূন্য হইয়া পড়ে। হরিয়ানায় লোকদল, উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী পার্টি, অন্ধ্রপ্রদেশে তেলুগু দেশম, বিহারে লালুপ্রসাদের রাষ্ট্রীয় জনতা কিংবা সর্বশেষ পশ্চিমবঙ্গে সি পি আই এম রাজ্য-রাজনীতিতে হীনবল ও হতমান হইয়া পড়ায় জাতীয় রাজনীতিতে, কেন্দ্রীয় শাসক গোষ্ঠীর সঙ্গে দরকষাকষির ক্ষমতা হারাইয়া ফেলিয়াছে। তাই আজ করুণানিধির কন্যা ও প্রিয়জনেরা জামিন না পাইয়া তিহার জেলে পচিলেও নীরবে অশ্রুপাত করা ছাড়া এই অশীতিপর বৃদ্ধের কিছুই করার নাই। |
|
|
|
|
|