|
|
|
|
মদে পূর্ণ নিষেধাজ্ঞার প্রশ্নে দ্বিধাবিভক্ত মিজো সমাজ |
রাজীবাক্ষ রক্ষিত • গুয়াহাটি |
মদের উপরে পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা, না-করা নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত মিজো সমাজ। পরিস্থিতি এমনই, বৃদ্ধ ও বিদগ্ধজনরা ছাড়া কেউই এই নিষেধাজ্ঞায় রাজি নন। রাজ্যের বিভিন্ন সংগঠনের বক্তব্য শোনার পরেই সরকার এই ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
১৯৯৭ সালে খ্রিস্টান-প্রভাবিত মিজোরামে কার্যত গির্জার চাপেই ‘মিজোরাম লিকার টোট্যাল প্রহিবিশন অ্যাক্ট’ বলবৎ করতে বাধ্য হয় সরকার। সেই থেকেই রাজ্যে, প্রকাশ্যে মদ বেচাকেনা মানা। অথচ ঘরোয়া উৎসব বা আমোদ-স্ফূর্তিতে মিজোরামে মদ্যপান বন্ধ থাকে না। তবে তা কালোবাজারে, দ্বিগুণ দামে কিনতে হয়। শেষ পর্যন্ত ২০০৯ সালে এই নিষেধাজ্ঞা থেকে ছাড় মিলেছিল মদিরার (ওয়াইন)। ‘ব্যাঙালোর ব্লু’ আঙুরের উৎপাদনে মিজোরাম অন্যতম সেরা। যা থেকে সেরা মানের ‘রেড ওয়াইন’ তৈরি হয়। ফলে রাজ্য সরকার ফি বছর প্রচুর রাজস্ব হারাচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত ‘ধর্ম’-ই পথ দেখাল। খ্রিষ্টান ধর্মে ‘চার্চ দ্য রিগু্যয়ের’ বা পবিত্র পানীয় হল এই রেড ওয়াইন। মানবজাতির উদ্দেশে যিশুর রক্তপাতের প্রতীক ধরা হয় রেড ওয়াইনকে। গির্জা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ২০০৮ সাল থেকেই দফায় দফায় বৈঠক শুরু করে সরকার। সরকারের বক্তব্য ছিল, ‘পবিত্র পানীয় পান বা উৎপাদন মোটেই অনৈতিক হতে পারে না’। ২০০৯ সালে রাজি হয় গির্জা কর্তৃপক্ষ। মদ্যপান নিবারণী আইনের ধারা থেকে আঙুর ও পেয়ারার নাম বাদ দেওয়া হয়, ছাড় দেওয়া হয় রেড ওয়াইনকে। গড়া হয় ‘গ্রেপ গ্রোয়ার সোসাইটি’। হাহনানে বছরে ৮ হাজার বোতল ও চাম্পাইতে বছরে ১২ হাজার বোতল ওয়াইন তৈরি হচ্ছে। বোতলপ্রতি দেড়শো টাকায় বিকোচ্ছে জাওলাইদি। কিন্তু সেই ‘ওয়াইন শপ’-এই লুকিয়ে বিদেশি মদ (ফরেন লিকার) রাখার অভিযোগও আসতে থাকে। ফলে খ্রিষ্টধর্ম নিয়ন্ত্রিত রাজ্যে, গির্জা থেকে ফের আপত্তি ওঠে। অন্য দিকে, আঙুর উৎপাদক, ব্যবসায়ী, সামাজিক সংগঠনগুলিও রুখে দাঁড়ায়। তাদের যুক্তি, মদ নিবারণী আইন কেবল মদের কালোবাজারি বাড়ানো ছাড়া কাজের কাজ কিছুই করতে পারেনি।
সরকারের তরফে, সুরা বিতর্ক কাটাতে মিজোরাম মদ নিবারণী নীতি নিয়ে স্বতন্ত্র ‘স্টাডি গ্রুপ’ তৈরি করা হয়েছে। স্টাডি গ্রুপের সভাপতি প্রাক্তন আমলা এইচ রালতাওনা। তাদের তরফে সম্প্রতি রাজ্যের সব স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কাছ থেকে এই বিষয়ে মতামত চাওয়া হয়। সরকারি সূত্রে খবর, মিজোরাম উপা পউল (প্রবীণদের সংগঠন) ও মিজো আকাদেমি অফ লেটারস নিষেধাজ্ঞার পক্ষে রায় দিয়েছে। তাদের বক্তব্য, নিষেধাজ্ঞার ফলে সমাজে অপরাধ কমেছে, চারিত্রিক উন্নতি ঘটেছে। রাস্তায় মাতালের অত্যাচারও নেই। কিন্তু মিজো যুব সংগঠন, মিজো সাংবাদিক সংস্থা, আইনজীবি সংস্থা, জোরাম ট্যাক্সিচালক সংগঠন, মিজোরাম কলেজ শিক্ষক সংগঠন-সহ বাকিরা মদের উপর নিষেধাজ্ঞা তোলার পক্ষে। এমনকী মহিলা সংগঠনগুলিও মদ বিক্রির পক্ষে রায় দিয়েছে।
সকলের মতামত বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত জানাবার জন্য রালতাওনা আপাতত একমাস সময় নিয়েছেন। |
|
|
|
|
|