স্বীকৃতিহীন শিক্ষিকার প্রক্সি
উন্নয়নের ছিটেফোঁটাহীন ‘নেই’ রাজ্যের হাতিছড়া
দী পেরিয়ে, মাঠঘাট ভেঙে যেতে হয়। বড্ড দূর। তাই স্কুল থাকলেও মাস্টারমশাই কদাচ আসেন। লেখাপড়া শিকেয়। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ডাক্তার-ফার্মাসিস্টের পা পড়ে না। নার্স দিদিমণি সপ্তাহে কি দু’সপ্তাহে একবার আসেন দয়া করে। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মীরা বাড়ি বসেই বেতন তোলেন বলে অভিযোগ। সন্ধ্যার পরই গাঢ় অন্ধকারে ডুবে যায় গ্রামগুলি। বিদ্যুতের খুঁটিই সার, ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছয়নি। এমন ‘নেই রাজ্যটি’ হল কাছাড় জেলার হাতিছড়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা। উন্নয়নের ছিটেফোঁটাও জোটে না যে মাটির মানুষদের।
এই পঞ্চায়েত এলাকার দু’টি স্কুলের কথাই ধরা যাক। এক শিক্ষকবিশিষ্ট শিরীষতল নিম্ন প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং রূপাছড়া নিম্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রথম স্কুলটিতে শিক্ষকতার দায়িত্বে আছেন অমরজ্যোতি সিংহ। কিন্তু অমরজ্যোতির হয়ে ৬ মাস ‘প্রক্সি’ দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের পড়িয়েছেন কাছাড় জেলার বড়খলা বিধানসভা কেন্দ্রের ঝুমা দাস। বেতন পাননি এক টাকাও। এ নিয়ে মুখও খুলতে পারছেন না তিনি। কারণ তাঁর তো স্থায়ী অস্থায়ী কোনও তকমাই নেই।
মূল শিক্ষক অমরজ্যোতির অবশ্য সোজাসাপটা কথা, “হেঁটে নদী পেরিয়ে এত দূরের স্কুলে প্রতিদিন যাওয়া কি সম্ভব? তবে ছাত্রছাত্রীদের যাতে সমস্যা না হয় সে জন্য ওই পাড়ারই মেয়ে ঝুমা দাসকে পড়ানোর দায়িত্ব দিয়ে আসি। আমার বেতন থেকে মাসে ৫০০ টাকা করে ওকে দেওয়ার কথা। কিন্তু এলাকার লোকেরা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছে। তাতে আমার বেতন আটকে গিয়েছে। ঝুমাকেও আর রাখা যায়নি। বেতন না পেলে ওকে আগের টাকাই বা দেব কোথা থেকে?”
বিষয়টি জানা স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি জয়দেব দাশগুপ্তেরও। তিনি বলেন, “আমিই ঝুমাকে ঠিক করে দিয়েছিলাম। বিভাগীয় অফিসাররাই বলছিলেন, কোনও শিক্ষক এত দূরে যেতে চান না, একটা ব্যবস্থা করে নিন। তা, এখন তো কোনও ব্যবস্থাই কাজে আসছে না। সরকার বিনা পয়সায় ছাত্রছাত্রীদের বইপত্র, দুপুরের খাওয়ার ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু শিক্ষকের অনুপস্থিতির দরুন পড়াশোনাও হচ্ছে না।” কাছাড় জেলার বিদ্যালয়গুলির সহ-পরিদর্শক জওহরলাল রাই জানান, তিনি এতদিন এমন অভিযোগ পাননি। এ বার ব্যবস্থা নেবেন।
রূপাছড়া নিম্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়েও প্রায় একই অবস্থা। স্কুলের একমাত্র শিক্ষক কাজলকুমার দাস সপ্তাহে দু’তিন দিন স্কুলে গেলেও ক’দিন আগে যিনি এই দায়িত্বে ছিলেন, সেই প্রদীপকুমার যাদব বছরে চার-পাঁচ দিনের বেশি যেতেন না বলে অভিযোগ। ঝড়ে স্কুলঘরের টিনের ছাউনি উড়ে গিয়েছে। কাজলবাবু যে-দিনগুলিতে স্কুলে যান, বারান্দায় বসে ক্লাস নেন।
অভিযোগ, শিরীষতল ও লেবুরবন্দের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মীরাও বাড়ি বসেই বেতন নেন। কাজের সঙ্গে সম্পর্ক নেই। হাতিছড়া গ্রাম পঞ্চায়েতে স্বাস্থ্য পরিষেবারও একই হাল। ২০০৭-০৮ আর্থিক বর্ষে মঞ্জুরিকৃত ৬ লক্ষ ৭ হাজার ৪৫৪ টাকায় রূপাছড়ায় নির্মিত হয় হেলথ সাব সেন্টার। কিন্তু আজও সেখানে ডাক্তার-ফার্মাসিস্ট কিছুই নেই। একজন নার্স সপ্তাহে কি দু’সপ্তাহে এক দিন যান। গড়েরবন্দ-লেবুরবন্দ সাব সেন্টারটিতে মাঝেমধ্যে যান একজন ফার্মাসিস্ট, ব্যস!
পঞ্চায়েত সভাপতি স্বপন শুক্লবৈদ্য জানান, নদী পেরিয়ে বাগানের রাস্তা ধরে পাঁচ-সাত কিলোমিটার হাঁটার পর গাড়ির রাস্তা। ফলে দলবল নিয়ে তাঁর পক্ষে অফিসে অফিসে যাওয়া সম্ভব হয় না। বস্তুত এটাই এখানকার ‘কর্মসংস্কৃতি’। শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ভয় দেখালে এলাকার সরকারি কর্মীরা উল্টে বলেন, ‘ভালই তো। এমন হতচ্ছাড়া জায়গা থেকে বদলি হলেই বাঁচি।’
হাতিছড়ার রূপাছড়া, বাঁশতল, গেরমাডিসা, শ্রীশতল প্রভৃতি গ্রামের বাসিন্দারা বছরের পর বছর এমন ভাবেই দিন কাটান। অভিযোগ জানানোর জায়গা নেই বলে নিজেদের কপালকেই দোষ দেন এলাকার ছন্দ ওরাং, জগন্নাথ গোয়ালা, অনুকূল দাসেরা। রাজীব গাঁধী বৈদ্যুতীকরণ প্রকল্পে খুঁটি বসানো হয়েছে, লাইন টানা হয়েছে, কিন্তু শ্রীশতল এবং সোনাছড়া থেকে এক রাতে দু’দুটি ট্রান্সফর্মার চুরি যায়। ফলে এলাকার বাড়িঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার কাজও আর এগোয়নি।
Previous Story Desh Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.