|
|
|
|
রামদেব-আন্নার আন্দোলন |
বিরোধী মোকাবিলায় রাস্তায় নামছে কংগ্রেস |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
বাবা রামদেব এবং আন্না হাজারের আন্দোলনকে সামনে রেখে বিরোধীরা কেন্দ্রীয় সরকারকে বিপাকে ফেলার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। সেই প্রেক্ষিতেই বিজেপি-সহ কংগ্রেস-বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির বিরুদ্ধে প্রণববাবুরা পাল্টা প্রচারে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কী ভাবে বিজেপি ও তার সহযোগী সংগঠনগুলি দেশের সংসদীয় ব্যবস্থাকে ‘অকেজো’ করে দিতে চাইছে, তা লিখিতভাবে জানিয়ে সারা দেশ জুড়ে বিভিন্ন ভাষায় পুস্তিকা প্রকাশ করে প্রচার চালাবে কংগ্রেস। রবিবার কলকাতার বিধান ভবনে প্রদেশ কংগ্রেস দফতরে সেই পুস্তিকার খসড়া প্রকাশ করে কার্যত সেই প্রচার শুরুও করে দিয়েছেন প্রণববাবু।
কালো টাকা, দুর্নীতি এবং মূল্যবৃদ্ধির প্রশ্নে নাজেহাল কেন্দ্রের প্রধান শাসকদল কংগ্রেসকে বিজেপি এবং তার সহযোগী সংগঠনগুলির আরও কোণঠাসা করার যে চেষ্টা চলছে, তাতে দেশে ১৯৭৫ সালের মতো কেন্দ্রীয় সরকার জরুরি অবস্থা জারি করতে পারে কি? প্রণববাবুর জবাব, “একেবারেই সেইরকম পরিস্থিতি নয়। কিন্তু সেই সময়ের রাজনৈতিক দলগুলির ভূমিকার সঙ্গে এখনও কিছু কিছু ব্যাপারে মিল দেখা যাচ্ছে। তবে ওই ঘটনার (জরুরি অবস্থা) পুনরাবৃত্তি হবে না।”
বিষয়টির ব্যাখ্যা করে প্রণববাবু বলেন, “১৯৭১-৭২ সালে নির্বাচনে বিরোধীরা পর্যূদস্ত হওয়ার পর ১৯৭৩ সালেই পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি হল। তারপর পরপর তিনবছর খরা হল। মুদ্রাস্ফীতিও বেড়ে গেল। সেই পরিস্থিতির সুযোগে কিছু রাজনৈতিক দল একত্র হয়ে সরকারকে বিপাকে ফেলার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি পুরোপুরি তেমন নয়।” |
|
বিধান ভবনে সাংবাদিক বৈঠকে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। রবিবার। নিজস্ব চিত্র |
প্রদেশ কংগ্রেসের সদ্য-ভারপ্রাপ্ত সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য জানান, প্রণববাবুর ‘নির্দেশে’ তাঁরা বিজেপি এবং সিপিএমের বিরুদ্ধে ‘রীতিমতো রাস্তায় নেমে’ প্রচারের কর্মসূচি তৈরি করেছেন। কলকাতায় তাঁরা কেন্দ্রীয় ভাবে একটি সমাবেশও করবেন। তবে সমাবেশের দিনক্ষণ চূড়ান্ত হবে প্রণববাবুর সঙ্গে আলোচনা করে। প্রণববাবু এ দিন বলেন, “নির্বাচনে জনগণের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়ে বিজেপি এবং তাদের অনুগামী বিভিন্ন সংগঠন অ-গণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে চাইছে। এই অপচেষ্টার বিরুদ্ধে রাজ্যের সর্বত্র জনমত গঠনে কংগ্রেস সভা-সমাবেশ করবে। দেশ জুড়ে লক্ষ লক্ষ কংগ্রেস কর্মীকেও প্রচারে সামিল করব।”
এ দিন পরিসংখ্যান দিয়ে প্রণববাবু জানান, চর্তুদশ লোকসভা ভোটে কংগ্রেস পেয়েছিল ১৪৫টি আসন এবং বিজেপি ১৩৮টি। দু’দলের ব্যবধান ছিল মাত্র সাতটি আসনের। কিন্তু পঞ্চদশ লোকসভা ভোটে বিজেপির থেকে কংগ্রেস ৯০টি আসন বেশি পায়। প্রণববাবুর কথায়, “এরপরেই বিজেপি সিদ্ধান্ত নেয়, সংসদের অধিবেশন তারা গোলমাল করে বন্ধ করে দেবে। কখনও ১০ দিন, কখনও ১২ দিন সভা বন্ধ করে দিয়েছে তারা। ২০১০ সালের টু-জি স্পেকট্রাম কান্ডে সংসদীয় যৌথ কমিটি গঠনের দাবিতে পুরো শীতকালীন অধিবেশনই বানচাল করে দিয়েছিল বিজেপি।” সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ-সহ পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটে বিজেপি-র হাল জানাতে গিয়ে প্রণববাবু বলেন, “পাঁচ রাজ্যের বিধানসভার মোট ৮২৪ টা আসনে বিজেপি ৪১১ টিতে প্রার্থী দিয়ে জিতেছে মাত্র পাঁচটি আসনে! সেখানে কংগ্রেস ৩৫৪ টা আসনে প্রার্থী দিয়ে জিতেছে ১৭১ টি আসনে। কংগ্রেসের জোটসঙ্গী তৃণমূল ও কেরলে কয়েকটি ছোট দল মিলে জিতেছে ২৪৩ টি আসন। তিন রাজ্যে কংগ্রেস জোটসঙ্গীদের নিয়ে সরকারও গঠন করেছে।” সেই কারণেই কংগ্রেসকে প্রতিহত করতে বিজেপি এ বার রামদেব-আন্না হাজারেদের আন্দোলনকে মদত দিচ্ছে বলে অভিযোগ প্রণববাবুর।
বিরোধীদের মোকাবিলায় প্রদেশ কংগ্রেস রাস্তায় নামার প্রস্তুতি শুরু করলেও বিজেপি আগেই পথে নেমে পড়ছে। আন্না হাজারে এবং রামদেবের আন্দোলনের সমর্থনে আজ, সোমবার বেলা ২টো থেকে ১০ মিনিট রাজ্য জুড়ে বিজেপি পথ অবরোধ করবে। দলের রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ রবিবার জানান, রাজ্যে তৃণমূল-কংগ্রেস জোট সরকার কাজ শুরু করেছে এক মাসও হয়নি। এত নতুন একটি সরকারকে তাঁরা বিব্রত করতে চান না। তাই ১০ মিনিটের ‘প্রতীকী’ অবরোধের সিদ্ধান্ত। কালো টাকা উদ্ধারের দাবিতে এবং দুর্নীতি-মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ৩০ জুন কলেজ স্কোয়্যার থেকে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ পর্যন্ত ‘মহামিছিল’ও করবে বিজেপি। |
|
|
|
|
|