‘ভরকেন্দ্র’ দক্ষিণ ভারত
রাজ্য সংগঠনের প্রশংসা, পার্টি কংগ্রেস কেরলেই
দুই রাজ্যে ভোটের ফলাফলেই প্রাথমিক ইঙ্গিত ছিল। দলেরই একাংশের মতে, কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের পরে সিপিএমের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে দক্ষিণ ভারতের ‘প্রাধান্য’ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার লক্ষণ আরও স্পষ্ট হয়ে গেল!
দলের ২০তম পার্টি কংগ্রেস কেরলে করার সিদ্ধান্ত নিল কেন্দ্রীয় কমিটি। নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ঠিক এক বছর পরে, ২০১২ সালের এপ্রিলে ভি এস অচ্যুতানন্দনের রাজ্যে বসবে পার্টি কংগ্রেসের আসর। সম্ভবত সেখানেই দলের অশীতিপর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ভি এসের পলিটব্যুরোয় প্রত্যাবর্তনের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে সিপিএম। কেরলের কোন শহরে সর্বভারতীয় সম্মেলন হবে, তা অবশ্য কেন্দ্রীয় কমিটিতে চূড়ান্ত হয়নি। কেরল সিপিএমের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে স্থান ও দিনক্ষণ ঠিক করা হবে। পলিটব্যুরো সূত্রের খবর, কোঝিকোড়, কান্নুর, কোল্লম ও পালাক্কাডের মধ্যে কোনও একটি শহরকে বেছে নেওয়া হতে পারে। আগামী ৩০ জুন কেরল রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী এবং ১ ও ২ জুলাই রাজ্য কমিটির বৈঠকে এই ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা।
কেবল পার্টি কংগ্রেস আয়োজন করার ‘দায়িত্ব’ই নয়, নির্বাচনী বিপর্যয়ের পরে কেন্দ্রীয় কমিটির ‘গুরুত্বপূর্ণ’ বৈঠক থেকে আরও কিছু ‘সম্মান’ নিয়ে ফিরছে কেরল সিপিএম। বিধানসভা ভোটের আগে সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক ভাবে কেরল সিপিএম যে ভাবে কাজ করেছে, আনুষ্ঠানিক ভাবে তার ‘প্রশংসা’ করেছে কেন্দ্রীয় কমিটি। সাংগঠনিক ভরাডুবির জেরে যে ‘মর্যাদা’ কোনও ভাবেই বঙ্গ সিপিএমের পক্ষে জোটেনি। কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের শেষে সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট বলেছেন, “লোকসভা ভোটের পর থেকে বিধানসভা ভোট পর্যন্ত কেরল রাজ্য সিপিএম খুবই ভাল কাজ করেছে। নিজেদের জনসমর্থন বাড়াতে পেরেছে। নির্বাচনী ফলাফলের বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখে তারা যাতে সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করতে পারে, তার জন্য কেরল রাজ্য কমিটিকেও কিছু পর্যালোচনামূলক সুপারিশ পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটি।”
কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক শেষে প্রকাশ ও বৃন্দা কারাট। রবিবার হায়দরাবাদে। দেশকল্যাণ চৌধুরী
বস্তুত, সিপিএমের অন্দরে একাংশের মত ছিল, পরবর্তী পার্টি কংগ্রেস হোক পশ্চিমবঙ্গে। তা হলে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ঝিমিয়ে-পড়া সংগঠনকে পার্টি কংগ্রেস আয়োজনের দায়িত্ব সামনে রেখে চাঙ্গা করতে সুবিধা হবে। কিন্তু সেই মত পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটিতে খারিজ হয়ে গিয়েছে। পলিটব্যুরোর সদস্য, এক কৃষক নেতার কথায়, “পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটে এ বার আমাদের সব চেয়ে ভাল ফল হয়েছে কেরল ও তামিলনাড়ুতে। কংগ্রেসের নানা ব্যর্থতার সুযোগও আমরা নিতে পেরেছি ওই দুই রাজ্যেই। সেই দিক থেকে কেরলে পার্টি কংগ্রেস হলে দুই রাজ্যকে আরও ভাল বার্তা দেওয়া যায়। তারা আরও উৎসাহ পায়।” প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালে ১৯তম পার্টি কংগ্রেস হয়েছিল তামিলনাড়ুর কোয়ম্বত্তূরে। এ বার বসছে প্রতিবেশী রাজ্য কেরলে। লোকসভা ভোটে ভরাডুবির পরে কেন্দ্রীয় কমিটির বর্ধিত অধিবেশন বসেছিল অন্ধ্রপ্রদেশের বিজয়ওয়াড়ায়। দুই রাজ্যে ক্ষমতা হারানোর কারণ খুঁজতে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক হল সেই রাজ্যেরই হায়দরাবাদে। সিপিএমের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে দক্ষিণ ভারতীয় শিবিরের ‘প্রাধান্য’ এই স্থান নির্বাচন থেকেই স্পষ্ট বলে দলের একাংশের অভিমত।
কেন্দ্রীয় কমিটিতে রাজ্যের তরফে অতিরিক্ত রিপোর্ট দিতে গিয়ে কেরলের প্রাক্তন মন্ত্রী এম এ বেবি জানিয়েছেন, মুসলিম-অধ্যুষিত জেলা মলপ্পুরমে বিপর্যয় এবং খ্রিস্টান ও হিন্দুদেরও কিছু সমিতির বিরোধিতার ফলে দল শেষ পর্যন্ত পরপর দু’বার ক্ষমতায় আসার ‘রেকর্ড’ গড়তে পারেনি। বৈঠকের পর কারাটও বলেছেন, “খুব অল্প ব্যবধানে এলডিএফ সরকারে যেতে পারেনি। কয়েকটা আসনে কেন খুব সামান্য ভোটে হারতে হয়েছে, তার কারণ খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। মলপ্পুরমে পুরো মুসলিম ভোট কী ভাবে মুসলিম লিগের দিকে চলে গেল, তা বিশ্লেষণ করে সংশোধনী পদক্ষেপ করতে হবে।” কেন্দ্রীয় কমিটিতে রাজ্যের আরও দুই প্রাক্তন মন্ত্রী টমাস আইজ্যাক এবং পি কে শ্রীমতি ব্যাখ্যা দিয়েছেন, কী পরিস্থিতিতে ভি এসের প্রার্থী-পদ নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছিল। দলের অন্দরে ভি এস শারীরিক অসুস্থতার কথা বলার জন্যই রাজ্য নেতৃত্ব প্রাথমিক ভাবে তাঁকে প্রার্থী করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি বলে তাঁরা বৈঠকে জানিয়েছেন।
রাজ্য রাজনীতিতে ভি এসের বিরোধী পিনারাই বিজয়নদের পাশে তিনি আগাগোড়া থাকলেও এ বার কিন্তু প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর ভুয়সী প্রশংসা করেছেন কারাট। বলেছেন, “দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের লড়াইকে ভি এস যে উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন, মানুষ তার স্বীকৃতি দিয়েছেন।” দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সিপিএমের রেকর্ড ‘কলঙ্কহীন’ বলেও দাবি করেছেন কারাট। কিন্তু তাঁর নিজের রাজ্যে দলের রাজ্য সম্পাদক বিজয়নের বিরুদ্ধেই তো দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে? কারাটের সহাস্য জবাব, “জানতাম প্রশ্নটা আসবে! নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ভোটের ফলে প্রভাব ফেলেছে কি না, তা-ও পর্যালোচনা করে দেখতে বলা হয়েছে রাজ্য কমিটিকে।” এর পরে ভি এস পলিটব্যুরোয় ফিরবেন কি? সে বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি কারাট। তবে পলিটব্যুরোর এক সদস্য বলেন, “বিষয়টা আলোচনা হয়েছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পার্টি কংগ্রেসে হবে।”
পশ্চিমবঙ্গ-সহ সব রাজ্যেই সেপ্টেম্বরে শাখা কমিটি স্তর থেকে সম্মেলন-পর্ব শুরু হবে। পশ্চিমবঙ্গে ‘আক্রান্ত’ সিপিএম কি সর্বত্র তা করতে পারবে? পলিটব্যুরোর এক সদস্যের কথায়, “সারা দেশের ১০ লক্ষ দলীয় সদস্য পশ্চিমবঙ্গের পাশে আছেন। ওখানে দল এখন যেমন রক্ষণাত্মক ভুমিকায় আছে, সম্মেলনকে ঘিরে তারা আক্রমণাত্মক হবে!”
তবে সব চেয়ে তাৎপযর্পূর্ণ মত দিয়েছেন কেরল রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য। তাঁর কথায়, “পশ্চিমবঙ্গকে এখন বারবার কেরলের কাছে যেতে হবে!”
Previous Story Desh Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.