|
|
|
|
সাংবাদিক হত্যায় এখনও সূত্র খুঁজছে পুলিশ |
সংবাদসংস্থা • মুম্বই |
সাংবাদিক জ্যোতির্ময় দে’র হত্যাকাণ্ডের চব্বিশ ঘণ্টা পরেও এই ঘটনায় তেমন কোনও সূত্র পায়নি পুলিশ। মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ চহ্বাণ নিজেই এই খবর জানিয়েছেন। মুম্বইয়ে আজ এক অনুষ্ঠানের ফাঁকে তিনি বলেন, “এখনও পর্যন্ত আমরা কোনও জোরালো সূত্র পাইনি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ও পুলিশ তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। আশা করছি শীঘ্রই কোনও দিশা মিলবে।”
গত কাল মুম্বই শহরতলির পওয়াইয়ে আততায়ীর গুলিতে জ্যোতির্ময়ের মৃত্যুর পরে ক্ষোভে ফুটছে সাংবাদিক মহল। সংবাদমাধ্যমের নিরাপত্তার প্রশ্ন তুলে সরব হচ্ছেন তাঁরা। আঙুল উঠছে রাজ্যের পুলিশ প্রশাসনের দিকে। জ্যোতির্ময়ের ঘনিষ্ঠ সহকর্মীদের একাংশের দাবি, বেশ কিছু দিন ধরেই ‘মিড ডে’ পত্রিকার এই অভিজ্ঞ ক্রাইম রিপোর্টারকে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। পুলিশকে তা জানানো হলেও তারা কোনও পদক্ষেপ করেনি। আবার গত কাল খোদ মুখ্যমন্ত্রীই বলেছিলেন, জ্যোতির্ময় নিজের প্রাণহানির আশঙ্কা করে কখনও সরকারি কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেননি।
ফলে জট এখনও পুরোমাত্রায়। সাংবাদিকদের নিরাপত্তা জোগাতে সরকার কতটা সক্রিয় সে প্রশ্ন যেমন উঠছে, তেমনই জ্যোতির্ময়কে ‘সরিয়ে দেওয়ার’ ছক কারা কষেছিল, সে রহস্যেরও দিশা মিলছে না। |
|
জ্যোতির্ময় দে-র দেহ ছুঁয়ে বোনের কান্না। রবিবার মুম্বইয়ে পিটিআইয়ের তোলা ছবি। |
দেশজোড়া চাপের মুখে কিছুটা অবশ্য নড়ে বসেছে মহারাষ্ট্র সরকার। কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী ঘটনার নিন্দা করে বলেছেন, তাঁর দলের অভিজ্ঞ নেতা পৃথ্বীরাজ চহ্বাণ দ্রুত তদন্তের স্বার্থে সব রকম চেষ্টা চালাবেন বলে তিনি নিশ্চিত। এমনকী সংবাদমাধ্যম আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ জানাতে আগামিকাল পৃথ্বীরাজের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছে মহারাষ্ট্র প্রদেশ কংগ্রেসেরই একটি প্রতিনিধিদল। এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী আজ নিজের বাড়িতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আর আর পাটিল, পুলিশ কমিশনার অরূপ পট্টনায়ক-সহ পুলিশ ও প্রশাসনের বেশ কয়েক জন উচ্চপদস্থ কর্তার সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেছেন। তদন্তের গতিপ্রকৃতি পর্যালোচনা করে পুলিশ কমিশনারকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জ্যোতির্ময়ের খুনিদের গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে চারটি বিশেষ দল গঠন করে এই ঘটনার তদন্তে নেমেছে মুম্বই পুলিশের অপরাধদমন শাখা।
পুলিশ কমিশনার গত কাল জানান, কোনও সুসংহত গোষ্ঠীই জ্যোতির্ময়কে খুন করেছে বলে তাঁরা মনে করছেন। প্রাথমিক ভাবে ‘ডি-কোম্পানি’র পাশাপাশি সন্দেহ করা হচ্ছিল তেল মাফিয়াদেরও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ অফিসার সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে বলেন, “আমরা সব দিকই খতিয়ে দেখছি। তবে এই ঘটনায় তেল মাফিয়াদের জড়িত থাকার সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখেই তদন্ত চালানো হচ্ছে। উনি তেল মাফিয়াদের নিয়ে অনেক লিখেছেন। ফলে ওরাও হয়তো ওঁকে (জ্যোতির্ময়কে) খুনের ছক কষছিল।” খুনিদের সম্ভবত মুম্বইয়ের কিংবা মহারাষ্ট্রেরই বাইরে থেকে ভাড়া করা হয়েছিল বলে সন্দেহ করছে পুলিশ। ব্যাপারটা যে পাকা হাতের কাজ, সে ব্যাপারে তারা মোটামুটি নিশ্চিত।
প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, খুনিদের বয়স মোটামুটি ২৫-৩০। এক জনের পরনে ছিল নীল উইন্ডচিটার। পওয়াইয়ের হীরানন্দানি থেকে ঘাটকোপারের অম্রুতনগরের বাড়িতে ফিরছিলেন জ্যোতির্ময়। হামলা হয় সেই সময়েই। মোট পাঁচটা গুলি লেগেছিল জ্যোতির্ময়ের। বাঁ হাতে
তিনটে, বুকের বাঁ দিকে একটা। এই চারটে গুলিই তাঁর শরীর ফুঁড়ে বেরিয়ে গিয়েছিল। পঞ্চম গুলিটা শুধু আটকে ছিল বুকের ডান দিকে। জ্যোতির্ময়ের কাগজ বলছে, তাঁকে রাস্তা থেকে
তুলে পথচারীরাই প্রথমে একটি হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু বিষয়টি পুলিশের এক্তিয়ারভুক্ত, এই যুক্তি দেখিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে ভর্তি করেননি। এর পর অন্য
একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। কিন্তু ততক্ষণে মারা
যান জ্যোতির্ময়।
ঘাটকোপারে আজ জ্যোতির্ময়ের শেষকৃত্য হয়। বহু সাংবাদিক ছাড়াও সেখানে ছিলেন রাজ্যের পূর্তমন্ত্রী ছগল ভুজবল। সাংবাদিকের পরিবারকে সুবিচারের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। তাঁদেরও নিরাপত্তা দেওয়া হবে বলে সরকারি সূত্রের খবর। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, তিনি শেষ দেখে ছাড়বেন। আপাতত সেই আশ্বাসেই ভরসা রাখতে হচ্ছে জ্যোতির্ময়ের আপনজনদের। |
|
|
|
|
|