|
|
|
|
লক্ষ্য পর্যটন, সেজে উঠবে চন্দননগর |
নিজস্ব সংবাদদাতা • চন্দননগর |
এক সময়ের ফরাসি উপনিবেশ চন্দননগরকে ঢেলে সাজতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার। এ শহরকে গড়ে তোলা হবে পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে। প্রস্তাবিত সেই প্রকল্পে ট্যুরিস্ট লজ তৈরির জন্য ইতিমধ্যেই জমি চিহ্নিত করার কাজ শেষ করেছে প্রশাসন। এ ব্যাপারে প্রাথমিক রিপোর্ট রাজ্য সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।
রাজ্যের নগরোন্নয়ন দফতর, পর্যটন দফতর এবং চন্দননগর পুরসভা মিলিত ভাবে প্রকল্পটি রূপায়ণ করবে। প্রাথমিক ভাবে পর্যটন কেন্দ্রের রূপরেখা তৈরির কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। গত মঙ্গলবার মহাকরণে এ নিয়ে বৈঠক হয়। প্রাথমিক ভাবে প্রকল্পব্যয় ধরা হয়েছে ৮ কোটি টাকা। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই প্রকল্পে চন্দননগরের গঙ্গার তীরকে মনোরম করে সাজিয়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেই লক্ষ্যে রানিঘাট, জোড়াঘাট, বোড়াই চণ্ডীতলা, শুঁড়িপাড়া ঘাট-সহ সংলগ্ন মানকুণ্ডু ও ভদ্রেশ্বরের মোট ৯টি গঙ্গার ঘাটকে আমূল সংস্কার করা হবে। লাগানো হবে গাছ। বসানো হবে নতুন আলো। পুজোর আগেই এই কাজ শেষ হওয়ার কথা।
শুধু গঙ্গার ঘাটগুলি নয়, এ শহরে বেশ কিছু ঐতিহাসিক স্মারক ও সৌধ রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় সে সবও সংস্কার করা হবে। মহকুমাশাসক অভিজিৎ মিত্র বলেন, “এ শহরে ফরাসি আমলের বহু স্মারক রয়েছে। সেই সব স্মারকগুলিতে আরও আকর্ষণীয় করার কাজে ফরাসি কনসাল জেনারেলের থেকেও নতুন এই প্রকল্পের জন্য পরিকল্পনা চাওয়া হয়েছে। তাঁরাও প্রকল্পটি নিয়ে যথেষ্ট আশাবাদী।” |
|
|
ফ্রেঞ্চ মিউজিয়াম |
গির্জা |
|
জগদ্ধাত্রী পুজো এ শহরের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। সে সময় বহু মানুষ আসেন। তা ছাড়া, শীতেও পর্যটকেরা আসেন। কিন্তু তাঁদের থাকার যথাযথ ব্যবস্থা এ শহরে সে ভাবে গড়ে ওঠেনি। বর্তমানে শুধু পুরসভা পরিচালিত রবীন্দ্রভবন চত্বরে ৮টি ঘরের একটি অতিথি-নিবাস রয়েছে। চন্দননগরকে একটি সম্পূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে তাই পর্যটকদের থাকার জায়গার বিষয়টি মাথায় রেখেছিলেন প্রশাসনের কর্তারা। সেই জন্য ওই প্রকল্পে ট্যুরিস্ট লজ তৈরি করতে রানিঘাট লাগোয়া একটি জায়গাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। রানিঘাটের কাছেই তৈরি করা হচ্ছে ভাসমান জেটি। |
|
|
জোড়া ঘাট |
নিত্যগোপাল স্মৃতিমন্দির |
|
--ছবিগুলি তুলেছেন তাপস ঘোষ। |
চন্দননগরের মেয়র রাম চক্রবর্তী বলেন, “পুরসভার নিজস্ব একটি জমি রয়েছে রানিঘাট লাগোয়া এলাকায়। ওই জমিতেই একটি ট্যুরিস্ট লজ তৈরি করা হবে। তাতে পর্যটকদের স্বাচ্ছন্দ্যের ব্যবস্থা থাকবে। জেটির কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে।” তবে ওই লজে ক’টি ঘর থাকবে, কত ভাড়া হবে বা কোথা থেকে ‘বুকিং’ করা যাবে, সে সব এখনও নির্দিষ্ট হয়নি। পুরসভা সূত্রের খবর, লজটি গড়া নিয়ে ইতিমধ্যেই আলোচনা শুরু হয়েছে। তা ছাড়া, রবীন্দ্রনাথ, অরবিন্দের স্মৃতিধন্য এ শহরে তাঁদের যে সব স্মারক রয়েছে, তাও সংরক্ষণের পরিকল্পনা হয়েছে।
নতুন এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন শহরবাসী। পাশাপাশি, তাঁরা তুলেছেন একটি সমস্যার কথাও। শহরের জনসংখ্যা বাড়ছে। গড়ে উঠছে ফ্ল্যাট, আবাসন। কিন্তু নিকাশি ব্যবস্থার তেমন উন্নতি হয়নি। প্রসঙ্গত, প্রাচীন এই জনপদের অনেকটাই ‘গড়’ দিয়ে ঘেরা। যে গড় এ শহরের নিকাশি ব্যবস্থার মূল ভিত্তি। অনেকেরই অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে গড় সংস্কার না হওয়ায় বহু এলাকায় বর্ষায় নিকাশি বেহাল হয়ে পড়ে। সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন মেয়র। তিনি জানিয়েছেন, গড় সংস্কারের জন্য ইতিমধ্যেই দরপত্র ডাকা হয়েছে। শীঘ্রই কাজ শুরু হবে। নিকাশি ব্যবস্থার উন্নতি ঘটানো হবে। |
দারুণ খবর। এখানে সৌন্দর্যায়নের অনেক সুযোগ আছে। তবে গড় এবং গঙ্গার পাড় সংস্কার জরুরি। জলপথে কলকাতার সঙ্গে যোগাযোগ ঘটানো হলে এখানকার গুরুত্ব
বাড়বে।
বিজয় গুহ মল্লিক (ব্যবসায়ী) |
|
গঙ্গার পাড় দিয়ে মানুষের হাঁটার পথটি আরও সুন্দর করে সাজিয়ে তোলা হলে স্ট্র্যান্ডের আকর্ষণ অনেক বেড়ে যাবে। তবে নিকাশি ব্যবস্থার আরও উন্নতির প্রয়োজন রয়েছে। কারণ বর্ষায় অনেক রাস্তায় জল জমে থাকে।
বরেন্দ্রনাথ মাকড়(সহ অধিকর্তা, ফরাসি মিউজিয়াম) |
|
চন্দননগরকে পর্যটনের জন্য সাজানো হবে জানতে পেরে খুব ভাল লাগছে। তবে এখানে পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা তেমন নেই। সে দিকে সরকার নজর দিলে পর্যটকদের অবশ্যই সুবিধা হবে।
প্রসেনজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় (চিকিৎসক) |
|
চন্দননগরকে পর্যটনকেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলা হলে খুব ভাল হয়। তবে সেই কাজ অবশ্যই পরিবেশকে বাঁচিয়েই করতে হবে। পাশাপাশি এখানকার স্মৃতিসৌধগুলিকেও সাজিয়ে তোলা দরকার।
কৃষ্ণেন্দু স্যান্যাল (পরিবেশবিদ) |
|
গোটা চন্দননগর শহর জুড়ে ফরাসি আমলের বহু স্মৃতিসৌধ ছড়িয়ে রয়েছে। সেই সব সৌধ সংস্কার করা দরকার। পর্যটনের প্রয়োজনে আমার শহর সেজে উঠবে, এটা তো খুবই গর্বের বিষয়।
প্রবীর ঘোষ (শিক্ষক) |
|
অনেক আগেই এই ঐতিহাসিক শহরকে পর্যটনকেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলা দরকার ছিল। তবে দেরিতে হলেও সরকারের এই উদ্যোগ ভাল লাগছে। এর ফলে চন্দননগরের গুরুত্ব আরবেড়ে গেল।
সুষমা বসু (প্রবীণ নাগরিক) |
|
|
|
|
|
|