|
|
|
|
নতুন পেনশন প্রকল্পে ন্যূনতম বার্ষিক লগ্নি ৬ হাজার টাকা |
প্রজ্ঞানন্দ চৌধুরী • কলকাতা |
এক দিকে সরকারি কর্মীদের পেনশন খাতে ক্রমাগত খরচ বৃদ্ধি, অন্য দিকে পেনশনের বাইরে থাকা সাধারণ মানুষের অবসর পরবর্তী জীবনের আর্থিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার তাগিদ। এই দুই কারণেই প্রধানত ‘নতুন পেনশন প্রকল্প’ (নিউ পেনশন স্কিম) চালু করে কেন্দ্রীয় সরকার। প্রকল্প খাতে লগ্নির দায় নেবেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিই, সরকার নয়। প্রকল্প নিয়ন্ত্রণে গড়া হয়েছে পেনশন ফান্ড রেগুলেটরি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (পিএফআরডিএ) শীর্ষক বিশেষ কর্তৃপক্ষ।
প্রথমে প্রকল্পটি শুধু কেন্দ্রীয় কর্মীদের জন্যই চালু হয়। সেনা বিভাগ ছাড়া অন্য যে সব কেন্দ্রীয় কর্মী ২০০৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে চাকরিতে যোগ দিয়েছেন, তাঁদের বাধ্যতামূলক ভাবে প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে। ২০০৯-এর ১ মে থেকে তা সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দেওয়া হয়। ১৮ থেকে ৫৫ বছরের মধ্যে যে কোনও ভারতীয় নাগরিক প্রকল্পে লগ্নি করতে পারেন।
প্রকল্পের তহবিল পরিচালনা করার জন্য ফান্ড ম্যানেজার হিসাবে সারা দেশে মোট ৭টি সংস্থাকে নিযুক্ত করা হয়েছে। এগুলি হল: এসবিআই পেনশন ফান্ড, এলআইসি পেনশন ফান্ড, ইউটিআই রিটায়ারমেন্ট সলিউশন্স, আই সি আই সি আই প্রুডেন্সিয়াল পেনশন ফান্ড, আইডিএফসি পেনশন ফান্ড, কোটাক মহীন্দ্রা পেনশন ফান্ড এবং রিলায়্যান্স ক্যাপিটাল পেনশন ফান্ড। ওই সাত সংস্থার মধ্যে থেকে গ্রাহক ফান্ড ম্যানেজার বাছতে পারেন। অ্যাকাউন্ট খোলার সময়েই নাম বাছাই করা যাবে। |
খুঁজে নিন পছন্দের সংস্থা |
l প্রবেশ করুন www.npscra.nsdl.co.in ওয়েবসাইটে
l ক্লিক করুন ‘সাবস্ক্রাইবার কর্নারে’ (বাঁ দিক থেকে পঞ্চম)
l‘স্টেপস টু জয়েন এনপিএস’ (উপর থেকে দ্বিতীয়)-এ ক্লিক করুন
l স্ক্রিনে বিশদে পাবেন এনপিএস অ্যাকাউন্ট খোলার তথ্য
l‘পিওপি-এসপি ডিটেলসে’ ক্লিক করে আর্থিক সংস্থা বাছুন
l সংস্থায় গিয়ে আবেদনপত্র নিতে পারেন
l সাইট নির্দেশিত শব্দে ক্লিক করেও সেটি ডাউনলোড করা যাবে
l আবেদনপত্র পূরণের নির্দেশিকা জানতে পারবেন সাইট থেকেই
l পূরণ করা আবেদনপত্র ও তথ্য-প্রমাণ জমা দিন সংস্থায় গিয়ে |
|
বিশেষত্ব হল, শেয়ার এরং ঋণপত্রের বাজার ভিত্তিক এই প্রকল্পে পেনশনের পরিমাণ নির্দিষ্ট করা থাকবে না। প্রকল্পের আয় বাড়লে বাড়বে পেনশনের পরিমাণ।
গ্রাহককে প্রথমে অ্যাকাউন্ট খুলে অর্থ একটি নির্দিষ্ট মেয়াদে লগ্নি করতে হবে। সর্বোচ্চ ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত প্রতি বছর কমপক্ষে ৬ হাজার টাকা করে জমা দিতে হবে। ওই টাকায় যে-তহবিল তৈরি হবে, তা দিয়ে বিমা সংস্থার কাছ থেকে কিনতে হবে ‘অ্যানুইটি’ প্রকল্প। তার আয় থেকেই ৬০ বছরের পর পেনশন পাবেন গ্রাহক। অ্যনুইটি প্রকল্পের আয়ের উপরই নির্ভর করবে গ্রাহকের পেনশনের পরিমাণ।
অনেকটা মিউচুয়াল ফান্ডের ধাঁচেই প্রকল্পে টাকা লগ্নি করা হয় শেয়ার এবং ঋণপত্রে। লগ্নির জন্য গ্রাহক প্রকল্প বেছে নিতে পারেন। তিন ধরনের ক্ষেত্র নির্দিষ্ট করা রয়েছে। এগুলি হল শেয়ার বাজার, কর্পোরেট বন্ড এবং সরকারি ঋণপত্র। তবে প্রতি বছর গ্রাহক মোট যে টাকা নতুন পেনশন প্রকল্পে জমা দেবেন, শেয়ার বাজার ভিত্তিক প্রকল্পে ওই টাকার ৫০ শতাংশের বেশি লগ্নি করা হবে না। গ্রাহক ইচ্ছা করলে অবশ্য পুরোটাই কর্পোরেট বন্ড এবং সরকারি ঋণপত্রে লগ্নি করতে পারবেন। এই ধরনের লগ্নি পরিকল্পনাকে বলা হয় ‘অ্যাকটিভ চয়েস’। সাধারণত যে সব গ্রাহক শেয়ার এবং বন্ডের বাজার সম্পর্কে ওয়াকিবহাল, তাঁরা নিজেরাই অ্যাকটিভ চয়েস ব্যবস্থার মাধ্যমে লগ্নি পরিকল্পনা তৈরি করে নিতে পারেন। তবে যাঁদের তেমন অভিজ্ঞতা নেই, তাঁরা ‘অটো চয়েস’ ব্যবস্থায় লগ্নির সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এই ব্যবস্থায় সংশ্লিষ্ট ফান্ড ম্যানেজার সংস্থাই গ্রাহকের বয়সের ভিত্তিতে জমা টাকার কতটা শেয়ার এবং কতটা বন্ড বা ঋণপত্রের বাজারে লগ্নি করা উচিত হবে, তা ঠিক করে লগ্নি পরিকল্পনা তৈরি করে দেয়।
কী ভাবে প্রকল্পে যোগ দেওয়া যাবে? পিএফআরডিএ সারা দেশে ৩৫টি সংস্থাকে নির্দিষ্ট করেছে। তাদের বলা হয় ‘পয়েন্ট অফ প্রেজেন্স’ (পিওপি)। প্রতিটি সংস্থার আওতায় রয়েছে ২৫টি শহর। ওই সমস্ত পিওপি ছাড়াও পিএফআরডিএ দেশ জুড়ে ব্যাঙ্ক, মিউচুয়াল ফান্ড-সহ প্রায় সাড়ে ন’হাজার আর্থিক সংস্থাকে নিযুক্ত করেছে। যেগুলিকে বলা হচ্ছে ‘পয়েন্ট অফ প্রেজেন্স-সার্ভিস প্রোভাইডর’ (পি ও পি-এসপি)। এই সব আর্থিক সংস্থার কাছে গিয়েও সরাসরি নিউ পেনশন স্কিমের জন্য অ্যাকাউন্ট খোলা যাবে। সংস্থাগুলির কাছ থেকেই পাওয়া যাবে লগ্নির নির্দেশাবলি এবং আবেদনপত্র। দেশে মোট ৯৫০০ পিওপি-এসপি-র মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে আছে ৫৫০টি, কলকাতায় প্রায় ২৭০টি। যেমন, কলকাতায় ইউটিআইয়ের প্রধান শাখা (বিবাদি বাগ), স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া, ইলাহাবাদ ব্যাঙ্ক, অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক, ওরিয়েন্টাল ব্যাঙ্ক-সহ বিভিন্ন ব্যাঙ্ক,আর্থিক সংস্থার শাখাকে নির্দিষ্ট করা হয়েছে অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য। কী করে অ্যাকাউন্ট খোলা যাবে এবং এর জন্য ব্যাঙ্ক, মিউচুয়াল ফান্ড-সহ কোন আর্থিক সংস্থায় যেতে হবে, তা জানতে দেখে নেওয়া যায় www.npscra.nsdl.co.in ওয়েবসাইটটি। দেখা যাবে পিএফআরডিএ-র www.pfrda.org.in সাইটটিও। সেখান থেকে ফর্ম ডাউনলোড করে বা সরাসরি ওই সব ব্যাঙ্ক, আর্থিক সংস্থায় গিয়ে নাম লেখানো যাবে প্রকল্পে।
আবেদনপত্রের সঙ্গে কী কী নথি জমা দিতে হবে? অ্যাকাউন্ট খোলার সময়ে প্রয়োজন এক কপি রঙিন ছবি, গ্রাহকের নিজস্ব অ্যাটেস্ট করা দু’কপি পরিচিতির প্রমাণপত্র এবং ঠিকানার প্রমাণ, নিজের অ্যাটেস্ট করা প্যান কার্ডের দুটি কপি এবং ৫০০ টাকার ডিমান্ড ড্রাফ্ট অথবা পে অর্ডার।
নমিনেশনের সুবিধা আছে কি? গ্রাহক মারা গেলে কী হবে? গ্রাহক তাঁর পছন্দ মতো ব্যক্তিকে নমিনি করতে পারেন। গ্রাহক পেনশন পাওয়ার আগে মারা গেলে তাঁর নমিনি জমা টাকার পুরোটাই ফেরত পাবেন। নমিনি অবশ্য ইচ্ছা করলে এবং তাঁর বয়স ১৮-৫৫ বছরের মধ্যে হলে প্রকল্প চালিয়ে যেতে পারেন। অন্য দিকে, গ্রাহক পেনশন পাওয়া-কালীন মারা গেলে অ্যানুইটির শর্ত অনুযায়ী নমিনি পেনশন পাবেন বা টাকা ফেরত পাবেন।
টাকা মাঝপথে কি তোলা যাবে? কঠিন অসুখের চিকিৎসায় বা প্রথম বার বাড়ি-ফ্ল্যাট কেনার জন্য টাকা তুলতে পারেন গ্রাহক। তবে কখনওই জমা টাকার ২০ শতাংশের বেশি তোলা যাবে না। |
|
|
|
|
|