|
|
|
|
মেয়ের পড়া চালাতে বাড়ি বেচতেও রাজি দম্পতি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কালনা |
অর্থকষ্ট সঙ্গী ছোটবেলা থেকেই। তার মধ্যেও বরাবর ভাল ফল করে এসেছে প্রিয়াঙ্কা।
বর্তমানে অর্থকষ্ট এতটাই বেড়ে গিয়েছে, পড়াশোনা চালানো কার্যত অসম্ভব হয়ে গিয়েছে। মেয়ের পড়াশোনা চালানোর খরচ চেয়ে অনেকের কাছে ঘুরেছেন দরিদ্র বাবা। কেউ বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছেন, কেউ আবার মুখের উপরেই না করে দিচ্ছেন। বাধ্য হয়েই মেয়েকে প্রতিষ্ঠিত করতে বসতবাড়ি বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
কালনা ১ ব্লকের নিভুজিমোড় এলাকায় স্ত্রী ও একমাত্র মেয়ে প্রিয়াঙ্কাকে নিয়ে থাকেন নিখিলকৃষ্ণ কুণ্ডু। হাসকিং মিলে কাজ করা ছাড়াও একসময় ছোটখাটো ব্যবসাও করতেন তিনি। তখন স্বাচ্ছন্দ্যেই সংসার চলত। |
প্রিয়াঙ্কা কুণ্ডু।
নিজস্ব চিত্র। |
বিপত্তি ঘটে বছর চারেক আগে। নিখিলবাবুর হাসকিং মিলটি বন্ধ হয়ে যায়। মন্দা দেখা দেয় তাঁর কুঁড়োর ব্যবসাতেও। বেকার হয়ে পড়েন তিনি। এর মধ্যে মেয়ের পড়াশোনা ও সংসারের খরচ চালাতে তাঁর অনেক দেনাও হয়ে যায়। স্ত্রীর কঠিন অসুখের মধ্যেও মেয়ে ২০০৯-এ মাধ্যমিকে ৭০৮ পায়। শতাংশের বিচারে ৮৮.৫। মেয়ের ইচ্ছাতেই তার নিজের স্কুল মহিষমর্দিনী গার্লস স্কুলে তাঁকে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি করানো হয়। এ বছব উচ্চ মাধ্যমিক দিয়েছিলেন তিনি। প্রাপ্ত নম্বর ৪৪৪, শতাংশের বিচারে ৮৮.৮। নিখিলবাবুর কথায়, “উচ্চ মাধ্যমিকে মেয়েকে সব বিষয়ে গৃহশিক্ষক দিতে পারিনি। |
|
অনেকেই কম টাকায় ওকে পড়িয়েছেন। তার মধ্যেই প্রিয়াঙ্কা বাংলায় ৮৩, ইংরেজিতে ৮৮, রসায়নে ৮৪, অঙ্কে ৯৩ ও পদার্থবিদ্যায় ৭৫ পেয়েছে। তবে পদার্থবিদ্যা ও রসায়নের নম্বরে মেয়ে খুশি নয়। ওই দু’টি বিষয়ে রিভিউ করাতে চেষ্টা করছি।”
মেয়ে ভাল ফল করেছে, তবুও ঘুম নেই কুণ্ডু দম্পতির। মেয়েকে আর পড়ানো যাবে না, তাই বাড়ি বিক্রি করে টাকা জোগাড় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। প্রিয়াঙ্কার মা সুপ্রিয়াদেবীর কথায়, “সংসার চালাতে বাড়িতে বসে রাখি তৈরি করি। পড়ার ফাঁকে মেয়েও সাহায্য করে। তবে এই সামান্য টাকাতে তো আর মেয়ের উচ্চশিক্ষা হবে না। তাই বাড়ি বিক্রি করা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই।”
মন ভাল নেই প্রিয়াঙ্কারও। তাঁর প্রশ্ন, “এমন কি কেউ নেই, যিনি এই দুঃসময়ে সাহায্য করতে আমাদের পাশে এসে দাঁড়াতে পারেন?” |
|
|
|
|
|