মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন স্টেশনে, বিভিন্ন এলাকার বাগানে, বিভিন্ন বাজারের আড়তে থরে থরে সাজানো হিমসাগর, গোবিন্দভোগ, বোম্বাই, রানি, গোপালভোগ, নবাবপসন্দ, দিলখোস সহ কত কিসিমের পাকা আমে বোঝাই পেল্লাই সাইজের ঝুড়ি। কিন্তু স্থানীয় খুচরো ক্রেতাদের ওই সব ঝুড়িতে হাত ছোঁয়ানোর হুকুম নেই। রসালো ফলের ওই রাজারানিরা ট্রেনে ও লরিতে বোঝাই হয়ে ঝাড়খণ্ড, বিহার, কলকাতা, দুর্গাপুর, আসানসোল, শিলিগুড়ি-সহ বিভিন্ন এলাকায় পাড়ি দেওয়ার জন্য প্রহর গুণছে। কারণ, আজ সোমবারটা কোনও মতে কাটিয়ে দিয়ে মঙ্গলবার ভোরের মধ্যে দূর দুরান্তের গন্তব্যে পৌঁছতে পারলে ফল ব্যবসায়ীদের বরাতে মিলবে মোটা অঙ্কের লাভ। তার কারণ বাঙালির পঞ্জিকায় আগামীকাল মঙ্গলবার জামাইষষ্ঠী। সামর্থ্যে না কুলোলেও সুস্বাদু ফলের পসরা সাজানো রেকাবি জামাই বাবাজির আসনের সামনে এনে শাশুড়িমা’কে হাজির করতেই হবে। ফলে বাজারে আগুন। ওই সব মহার্ঘ্য ফলের মধ্যে বিশেষত আম, কাঁঠাল লিচু ও জামের বাজারের তাপ সব চেয়ে বেশি।
|
কারণ, জামাইবাবাজির থালায় থরে থরে সাজানো থাকবে নবাবি আমলের নানান কিসিমের সুস্বাদু আমের কাটা টুকরো, কাঁঠালের কোয়া ও গোলাপ-গন্ধি রসালো লিচু। ওই জরুরি চাহিদার কারণে মুর্শিদাবাদের প্রসিদ্ধ আম, লিচু, কাঁঠাল ও জামের দাম ঊর্ধ্বমুখী। ঝাড়খণ্ড নিয়ে যাওয়ার জন্য লালবাগ কোর্ট রোড স্টেশন চত্বরে সার দিয়ে সাজানো রয়েছে অন্তত ৭ জন ব্যবসায়ীর আম বোঝাই ঝুড়ি। আমের দামের ওঠা পড়া নিয়ে জানতে চাইলে তাঁদের এক জন লালবাগের এলাহিগঞ্জের মকবুল শেখ বলেন, “দেড়া দাম দিয়ে আম কিনতে হল। জামাই ষষ্ঠীর দিন এগিয়ে আসতেই বাগানে আগুন লেগেছে। একে এ বার আমের ফলন কম, তার উপর জামাই ষষ্ঠীর বাজার ধরতে সবাই নেমে পড়েছে দু’ দিনের ব্যবসায়। তাই আম লিচুর দামে এখন আগুন লেগেছে।”
এ জেলার আম কাঁঠাল লিচুর বড় বাজারগুলির মধ্যে লালবাগের নাকুড়তলা, জিয়াগঞ্জের আজিমগঞ্জ, বহরমপুরের নতুনবাজার, রঘুনাথগঞ্জের মিঞাপুর ও লালগোলা অন্যতম। নাকুড়তলার ব্যবসায়ী মহিম সরকার বলেন, “আম-জাম-কাঁঠাল-লিচুর বাজার তো মাত্র ওই জামাইষষ্ঠীর দিনটিই। ফলে বাজার তেজি হবেই।’’ তবে কতটা? মহিমবাবু বলেন, “দু’দিন আগে যে বোম্বাই আম ২০ টাকা কেজি দরে বিকিয়েছে, তা আজ ৩০-৩৫ টাকা হাঁকছে বাগান মালিকই।” লিচুর দামে আগুন লেগেছে। ফরাক্কার অর্জুনপুর-নয়নসুখ এলাকার লিচু স্বাদে ও গন্ধে যে কোনও উন্নতমানের লিচুকে টেক্কা দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। অজুর্নপুরের লিচু বাগানের মালিক আলিজান শেখ বলেন, “জামাইষষ্ঠীর কারণে এখন চাহিদা বেড়েছে। ফলে ৬০ টাকার লিচু এখন ১০০ টাকা বিকোচ্ছে।”
আম, কাঁঠাল, লিচুর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে সব্জির দামও। বহরমপুরের নতুন বাজারের সব্জি ব্যবসায়ী নরেন দাস বলেন, “সপ্তাহ খানেক আগেও যে বেগুনের দাম ছিল প্রতি কেজি ৮ টাকা থেকে ১০ টাকা, আজ বেড়ে ২০ টাকা কেজি হয়েছে। কিছুদিন আগের ৭ টাকা কেজির আলু এখন ৯-১০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে।” সব্জির পাশাপাশি দই-এর বাজারও। বহরমপুর মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী অরূপ ঘোষ বলেন, “আকাল পড়েছে দাদা! দই-এর আকাল। বরাবরের খদ্দেররা জামাইষষ্ঠীর দিনের জন্য আগাম দই-এর বরাত দিয়ে রেখেছেন। কিন্তু জোগান কম। ফলে আমরা ব্যবসায়ীর পড়েছি ফ্যাসাদে।” |