পশ্চিমবঙ্গে রোজ যে বেআইনি অস্ত্র উদ্ধার হচ্ছে, তা নিয়ে আরও এক বার উদ্বেগ প্রকাশ করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম। এবং জানিয়ে দিলেন, এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুরোধ মেনে আপাতত জুলাই পর্যন্ত রাজ্যে আধাসেনা রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। তবে তিনি এ-ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গে কত দিন আধাসেনা থাকবে, সেটা রাজ্য সরকারই পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেবে।
চিদম্বরম আজ জানিয়েছেন, বিধানসভা ভোটের জন্য পশ্চিমবঙ্গে ৭০১ কোম্পানি আধাসেনা পাঠানো হয়েছিল। তার মধ্যে ১৪৪ কোম্পানি রাজ্যে রেখে দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন পরবর্তী হিংসা নিয়ন্ত্রণের জন্যই ওই আধাসেনা রেখে দিয়েছে রাজ্য। আর ক’দিন বাহিনী থাকবে, সেটাও পরিস্থিতি অনুযায়ী রাজ্যই সিদ্ধান্ত নেবে। এর সঙ্গে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে চিদম্বরম এ-ও স্মরণ করিয়ে দিলেন, “প্রায় প্রতিদিনই বেআইনি অস্ত্র উদ্ধার হচ্ছে। তাই রাজ্য সরকার নতুন করে পর্যালোচনা করা পর্যন্ত আপাতত সেখানে বাহিনী থাকছে।”
ভোট-পর্ব শেষ হয়ে যাওয়ার পরে ২৩ মে আধাসেনা রাজ্য থেকে চলে যাওয়ার কথা ছিল (মাওবাদী দমনে যে আধাসেনা জঙ্গলমহলে রয়েছে, তার সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই)। পরিস্থিতি বুঝে রাজ্যই দফায় দফায় বাহিনী রেখে দেওয়ার মেয়াদ বাড়ানোর আর্জি জানিয়েছে বলে খবর। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর, ২৬ মে মন্ত্রকের তরফে রাজ্যকে জানানো হয়, ২ জুন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী রেখে দেওয়া হবে। তার পরে মুখ্যমন্ত্রী টেলিফোনে চিদম্বরমের সঙ্গে কথা বলেন। সেই অনুযায়ী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আপাতত জুলাই পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে আধাসেনা থাকবে। কত দিন, সেটা রাজ্যই ঠিক করবে, জানালেন চিদম্বরম।
রাজ্যে নিত্যদিন বেআইনি অস্ত্র উদ্ধার নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যে চিন্তিত, তা আজ আরও এক বার স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি। সিপিএম নেতৃত্ব বারবার অভিযোগ করছেন, তৃণমূলকর্মীদের হাতে আক্রান্ত হচ্ছেন তাঁদের কর্মী-সমর্থকেরা। চিদম্বরম কিন্তু স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, মমতা হিংসা রুখতেই কেন্দ্রীয় বাহিনী রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অর্থাৎ, বাম নেতারা যা-ই বলুন, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক কিন্তু মনে করছে, পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল হিংসা ছড়াতে নয়, সামাল দিতেই আগ্রহী।
পশ্চিমবঙ্গে বেআইনি অস্ত্র উদ্ধার নিয়ে চিদম্বরমের মন্তব্য অবশ্য নতুন নয়। পশ্চিম মেদিনীপুরের এনায়েতপুরে সিপিএম অফিসের অদূরে শিলদার ইএফআর ক্যাম্প থেকে লুঠ হওয়া ইনস্যাস রাইফেল উদ্ধার নিয়েও সরব হয়েছিলেন তিনি। গত কালও ওই জেলার শালবনিতে সিপিএমের কার্যালয় থেকে অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে স্থানীয় গ্রামবাসীরা পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনীকে সাহায্য করছে। কোথায় ভোটের আগে অস্ত্র লুকিয়ে রাখা হয়েছিল, তা গ্রামবাসীরাই দেখিয়ে দিচ্ছেন। কখনও নিজেরাই অস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশের হাতে তুলে দিচ্ছেন। আগে মানুষের মনে যে আতঙ্ক ছিল, তা এখন কেটে গিয়েছে।
সিপিএম নেতৃত্ব অবশ্য অস্ত্র উদ্ধার নিয়ে ষড়যন্ত্রের অভিযোগই তুলেছেন। গত কাল প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য নিজেই পুলিশকে হুঁশিয়ারি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, অস্ত্র উদ্ধারে পুলিশের সঙ্গে তৃণমূল কর্মীরাও সিপিএম অফিসে যাচ্ছেন। বলেছেন, এই সব অস্ত্র উদ্ধারের গল্প বন্ধ হোক!
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক কিন্তু সিপিএম নেতাদের এই অভিযোগ মানছে না। মন্ত্রকের শীর্ষকর্তাদের বক্তব্য, রাজ্যে যে বেআইনি অস্ত্র রয়েছে এবং বিভিন্ন জায়গায় সিপিএমের নিজস্ব সশস্ত্র বাহিনীও মোতায়েন করা হয়েছে, সে বিষয়ে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধবাবুকে চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন চিদম্বরম। পরে দিল্লিতে বুদ্ধবাবুর সঙ্গে বৈঠকেও এ নিয়ে আলোচনা হয়। ভোট ঘোষণার পর থেকে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনীর হাতে। তবু রাজ্য সরকারের সাংবিধানিক অধিকারের কথা মাথায় রেখে তারা স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে অস্ত্র উদ্ধার করেনি। এর পরে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে ভোটপ্রক্রিয়া চলাকালীন অস্ত্র |উদ্ধার শুরু হয়। রাজ্যে পালাবদলের ফলে এখন সেই কাজ আরও সহজ হয়েছে। কারণ, মানুষ নির্ভয়ে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে সাহায্য করছে। কিন্তু যে পরিমাণে অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে, তা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। আজ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সেই কথাই আরও এক বার স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। |