বিচার বিভাগীয় তদন্তের আর্জি মুখ্যমন্ত্রীকে
ছক কষেই মোস্তাফা খুন, স্ত্রী ও ছেলের অভিযোগ
ত্মহত্যা নয়। বসিরহাট উত্তর কেন্দ্রের সিপিএম বিধায়ক মোস্তাফা বিন কাশেমকে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলল তাঁর পরিবার। মৃত্যুর তিন দিন বাদে। এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে বিচার বিভাগীয় তদন্তের আর্জিও জানিয়েছেন মোস্তাফার স্ত্রী নুর-এ-জাহাঁ মোস্তাফা।
তবে কে বা কারা কেন ওই প্রবীণ বিধায়ককে খুন করল, মৃতের পরিবার তার কোনও ব্যাখ্যা দেয়নি। এখনও এ ব্যাপারে পুলিশের কাছে কোনও লিখিত অভিযোগও দায়ের করেনি তারা। মোস্তাফাকে খুন করা হয়েছে বলে এখনও কোনও প্রমাণ পায়নি কলকাতা পুলিশ। ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট কিংবা পারিপার্শ্বিক তথ্যও খুনের অভিযোগ প্রমাণ করছে না বলে জানাচ্ছেন তদন্তকারী অফিসারেরা।
রবিবার কিড স্ট্রিটের এমএলএ হস্টেলের নতুন সাততলা আবাসনে পাঁচতলার বারান্দা থেকে পড়ে মারা যান মোস্তাফা। তাঁর ঘরে পাওয়া নোট ও পরিবারের লোকেদের তখনকার বক্তব্যের ভিত্তিতে পুলিশেরও মনে হয়েছিল, ওই বিধায়ক ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। কিন্তু বুধবার বসিরহাটের নেহালপুরে বিধায়কের বাড়িতে বসে তাঁর ছেলে মাসুম বিন মোস্তাফা অভিযোগ করেন, “আমরা ১০০ শতাংশ নিশ্চিত, বাবাকে চক্রান্ত করে খুন করা হয়েছে।”
রবিবার ঘটনার কিছু আগেই এমএলএ হস্টেল থেকে স্ত্রীকে নিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন মাসুম। স্ত্রীকে বাসে তুলে দিয়ে কিছু ক্ষণের মধ্যেই তিনি ফিরে এসে বাবাকে নীচে পড়ে থাকতে দেখেন। সেই সময় মোস্তাফার ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীও সেখানে ছিলেন না। সে-দিন মাসুম কিন্তু পুলিশ, সিপিএমের নেতা কিংবা ঘটনাস্থলে যাওয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কাউকেই খুনের সন্দেহের কথা বলেননি।
সাংবাদিক বৈঠকে মোস্তাফা বিন কাশেমের ছেলে মাসুম। রয়েছেন মোস্তাফার স্ত্রীও (ডান দিক থেকে দ্বিতীয়)। নির্মল বসু

তা হলে এখন বলছেন কেন?
মাসুম বলেন, “সে-দিন (রবিবার) বিকেলে রাস্তা থেকে বাবাকে তিন বার ফোন করি। বাবা ধরেননি। তাঁর ব্যক্তিগত দেহরক্ষীকেও ফোনে পাইনি। ফিরে এসে দেখি, ওই কাণ্ড। শরীরের জন্য বাবার অবসাদগ্রস্ত হওয়ার কোনও কারণ ছিল না। বাবার হাঁটুতে ব্যথা ছিল। সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় ধরতে হত। সেই মানুষটা বারান্দার চার ফুটের রেলিং টপকে ঝাঁপ দেবেন, এটা আমরা মানতে পারছি না।”
বিধায়কের জামাই, নৌবাহিনীর প্রাক্তন অফিসার নুর ইসলাম বলেন, “অত উঁচু থেকে কেউ নীচে পড়লে তাঁর চেহারার যে-পরিণতি হওয়ার কথা, এ ক্ষেত্রে তেমনটা হয়নি। এটা আত্মহত্যা বলে মানি না আমরা।” মোস্তাফার স্ত্রী নুর-এ-জাহাঁ মোস্তাফা বলেন, “১৯৬৯ সালে আমাদের বিয়ে হয়। ওঁর মতো দৃঢ়চেতা, ঠান্ডা মাথার মানুষ কোনও অবস্থাতেই আত্মহত্যা করতে পারেন না। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন, উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের ব্যবস্থা করে প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটনে সাহায্য করুন।” পরিবারের সকলেই চান, রাজ্য সরকার এবং সিপিএম তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে সত্য উদ্ঘাটনে সাহায্য করুক।

গোটা ঘটনার পিছনে চক্রান্তের গন্ধ পাচ্ছে মোস্তাফার পরিবার। মাসুমের অভিযোগ, “গত ১৬ মে থেকে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে বসিরহাট মহকুমা জুড়ে মোস্তাফা মারা গিয়েছেন বলে গুজব রটেছিল। তাই গোটা বিষয়টা চক্রান্ত বলেই আমাদের সন্দেহ।”
সংবাদমাধ্যমকে বাড়িতে ডেকে মৌখিক ভাবে এই অভিযোগ জানালেও মোস্তাফার পরিবার পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করল না কেন?
মোস্তাফার ছেলে বলেন, “বৃহস্পতিবার বাবার পারলৌকিক কাজ। তার পরেই নির্দিষ্ট অভিযোগ দায়ের করা হবে।” এ দিন মোস্তাফার নেহালপুরের বাড়িতে গিয়ে কলকাতা পুলিশের একটি তদন্তকারী দল মাসুমের সঙ্গে কথা বলে। লিখিত অভিযোগপত্র জমা দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তাঁকে আশ্বস্ত করে তারা। পুলিশি সূত্রের খবর, আইনজীবীর সঙ্গে আলোচনা করে দু’-এক দিনের মধ্যে তাঁরা লিখিত অভিযোগপত্র জমা দেবেন বলে মাসুম তাদের জানিয়েছেন।
মোস্তাফার মৃত্যু নিয়ে তাঁর পরিবার অভিযোগ করায় এখনই মুখ খুলতে চাইছে না সিপিএম। দলের নেতৃত্ব জানাচ্ছেন, এই ব্যাপারে যা করণীয়, পুলিশ-প্রশাসনই তা করবে। দলের তরফে প্রয়াত বিধায়কের পরিবারের পাশে থাকার চেষ্টা হবে। মোস্তাফার পরিবার খুনের অভিযোগ করলেও সিপিএমের রাজ্য বা উত্তর ২৪ পরগনা জেলা নেতৃত্ব কোনও সন্দেহের কথা বলেননি। সিপিএমের রাজ্য কমিটির এক সদস্যের কথায়, “ঘটনার দিন এবং তার পরের দিন শেষকৃত্য পর্যন্ত আমরা তাঁর পরিবারের সঙ্গেই ছিলাম। তখন এই ধরনের কোনও আলোচনা হয়নি। সেই পরিবেশও ছিল না।
এখন তাঁর ছেলের অভিযোগের কথা শুনছি।”


মোস্তাফা বিন কাশেম
একই সঙ্গে সিপিএমের রাজ্য ও জেলা নেতৃত্বের একাংশের প্রশ্ন, মোস্তাফাকে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠলে তাঁর লিখে যাওয়া নোট দু’টিকে কতটা গুরুত্ব দেওয়া হবে? এমএলএ হস্টেলে মোস্তাফার ঘরে পাওয়া দু’টি নোটের একটিতে সিপিএমের চার নেতা গৌতম দেব, অমিতাভ বসু, অমিতাভ নন্দী ও তড়িৎ তোপদারের নাম ছিল। পুলিশি সূত্রে বলা হয়, ওই চার নেতাই অসুস্থ মোস্তাফাকে ভোটে দাঁড়াতে ‘চাপ’ দিয়েছিলেন বলে নোটে লেখা ছিল। ওই নোট এবং তাঁর পরিবারের নতুন অভিযোগ বিভ্রান্তি তৈরি করেছে সিপিএমের অন্দরেও।

মোস্তাফা ছিলেন রাজ্য কমিটির কন্ট্রোল কমিশনের চেয়ারম্যান। ওই কমিশন দলে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ এবং সেই সংক্রান্ত ব্যবস্থা খতিয়ে দেখে। তাই অস্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে সতর্ক হয়ে পা ফেলতে চাইছে সিপিএম। তবে মাসুম কিংবা মোস্তাফার স্ত্রী এ দিন সিপিএমের কোনও নেতার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেননি। খুনের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে, এমন কোনও সন্দেহভাজন ব্যক্তির নামও উল্লেখ করেননি তাঁরা। তবে মোস্তাফার ঘরে পাওয়া নোট নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মাসুম। তিনি বলেন, “প্রথম কাগজের টুকরো আমিই টেবিল থেকে কুড়িয়ে দেহরক্ষী মারফত পুলিশের হাতে দিই। তাতে কী লেখা আছে, সেটা পড়ার মতো মনের অবস্থা তখন ছিল না। মনে হয়, ওটা বাবার হাতের লেখা নয়। আর হলেও যারা খুন করেছে, তারাই লিখিয়ে নিয়েছে। ঘরের জিনিসপত্রের কোনও ‘সিজার লিস্ট’-ও আমাদের দেয়নি পুলিশ।”
তদন্তকারীদের বক্তব্য, মঙ্গলবার বিধানসভার মহাফেজখানা থেকে মোস্তাফার সই করা কিছু কাগজ সংগ্রহ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাঁর বাড়ি থেকে সংগৃহীত হয়েছে একাধিক ডায়েরি। ডায়েরিগুলিতে তাঁর যে-হাতের লেখা রয়েছে, তার সঙ্গে নোট দু’টির হস্তাক্ষর মিলিয়ে দেখা হবে। বুধবার সমস্ত কাগজ ফরেন্সিক বিভাগের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

First Page South Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.