হিলটনের হোটেল-মানচিত্রে এ বার ঢুকে পড়ছে কলকাতাও।
ভিডিওকন গোষ্ঠীর হাত ধরে কলকাতায় পা রাখছে এই মার্কিন হোটেল বহুজাতিক। তবে বিলাসবহুল ব্র্যান্ড হিসেবে নয়। বাজেট হোটেলের মাধ্যমে।
সল্টলেক সেক্টর ফাইভে ১৫০ ঘরের এই হোটেল তৈরি করবে ভিডিওকন-এর নির্মাণ সংক্রান্ত শাখা সংস্থা ভিডিওকন রিয়্যালটি। সম্ভাব্য লগ্নির অঙ্ক ১০০ কোটি টাকারও বেশি। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, চলতি মাসেই এ নিয়ে চুক্তি সই করবে দু’পক্ষ। ভিডিওকনের পূর্বাঞ্চলীয় কর্তা গৌতম সেনগুপ্তের দাবি, এই হোটেল চালু হয়ে যাবে ২০১৩-এর মধ্যেই।
শুধু হোটেল নয়। তথ্যপ্রযুক্তি পার্ক এবং শপিং মলও তৈরি হবে এখানে। গৌতমবাবু জানান, মূলত সেক্টর ফাইভে ভিডিওকনের ১১ একর জমিতেই গড়ে উঠবে তথ্যপ্রযুক্তি পার্ক ও সংশ্লিষ্ট পরিকাঠামো। প্রথম দফায় ১০ লক্ষ বর্গ ফুট জায়গায় নির্মাণ শেষ হবে ২০১২ সালেই। এবং এ ভাবেই ধাপে ধাপে গড়ে উঠবে মোট ৮০০ কোটি টাকার এই প্রকল্প। সব মিলিয়ে ৩৫ লক্ষ বর্গ ফুটে নির্মাণ কাজ শেষ হলে, এটিই দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম তথ্যপ্রযুক্তি পার্ক হবে বলে তাঁর দাবি।
গৌতমবাবু জানান, প্রকল্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী, হোটেলের ঘরের দরজা খোলা থেকে শুরু করে রেস্তোরাঁয় খাওয়া বা শপিং মলে কেনাকাটা সব কিছুই করা যাবে একটি মাত্র ওয়াই-ফাই কার্ডের মাধ্যমে। তথ্যপ্রযুক্তি পার্কে গড়ে উঠবে ভিডিওকনের কেন্দ্রীয় পরিষেবা কেন্দ্র। অর্থাৎ, দেশের বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে থাকা পরিষেবা কেন্দ্রের মূল ভবনটি হবে এখানে। প্রায় ১০০ কোটি টাকা লগ্নিতে তৈরি এই ‘হাব’-এর দৌলতেই আবার বিভিন্ন জেলায় গড়ে উঠবে ছোট ছোট পরিষেবা কেন্দ্র। যা তৈরি করবে কর্মসংস্থানের সুযোগও। এবং এই সম্পূর্ণ প্রকল্পে হিলটন ব্র্যান্ডের ছাতার তলায় হোটেল নির্মাণ যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তা স্পষ্ট জানাচ্ছেন গৌতমবাবু। কারণ, ভারত-সহ ৭৭টি দেশে ছড়িয়ে থাকা ৫ হাজার ছুঁইছুঁই হোটেলের দৌলতে হিলটন গোষ্ঠী শুধু বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ও প্রথম সারির হোটেল সংস্থা নয়। এই গোষ্ঠীর দীর্ঘ ৯০ বছরের ইতিহাসের পরতে পরতে জড়িয়ে রয়েছে বিভিন্ন ঐতিহাসিক মুহূর্তের স্মৃতিও। তা-সে আমস্টারডাম হিলটন হোটেলই হোক, বা বহুল পরিচিত নিউ ইয়র্ক হিলটন। প্রথমটির ৯০২ নম্বর ঘরেই তো মধুচন্দ্রিমা যাপনে এসে ভিয়েতনাম যুদ্ধের প্রতিবাদে রোজ সাংবাদিক বৈঠক করতেন জন লেনন আর ইওকো ওনো। যে কারণে ১৯৬৯-এর পর থেকেই তা পর্যটকদের প্রিয় গন্তব্য। আর দ্বিতীয় হোটেলটিতেই অতিথি জোয়েল এস এঙ্গেল-এর কাছে বিশ্বের প্রথম মোবাইল ফোন থেকে ‘কল’ এসে পৌঁছয় ১৯৭৩-এ।
হিলটন গোষ্ঠীর ছাতের তলায় রয়েছে হিলটন, ডাবলট্রি, হিলটন গার্ডেন-সহ বিভিন্ন ব্র্যান্ড। এর মধ্যে কলকাতার হোটেলটি কোন ব্র্যান্ডের আওতায় আসবে, তা অবশ্য ঠিক হয়নি এখনও। তবে ভিডিওকন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, শহরে প্রথমে ‘বাজেট’ হোটেল হিসেবেই আত্মপ্রকাশ করবে হিলটন। কারণ হিসেবে গৌতমবাবুর যুক্তি, সেক্টর ফাইভ এবং রাজারহাটের বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় বাইরে থেকে কয়েক দিনের জন্য কাজ করতে আসেন বহু কর্মী। অথচ রাজারহাটে সুইসোটেল (২০০৯ সালে কলকাতায় পা রেখেছে যারা) ও সল্টলেকে হায়াত ছাড়া নামী ব্র্যান্ডের কোনও হোটেল কাছাকাছি নেই। তাই একই সঙ্গে ব্র্যান্ডের ভরসা জুগিয়ে এবং কম খরচের চাহিদা পূরণ করে হিলটনের বাজেট হোটেল সেই বাজার ধরতে পারবে বলেই তাঁর দাবি। প্রসঙ্গত, মাস দুয়েক আগেই হিলটন গোষ্ঠী জানিয়েছে, আগামী ৫ বছরে ভারতে ১৯টি হোটেল গড়তে চায় তারা। তাদের দাবি, এর মধ্যে ৬টি এ বছরেই চালু হবে। |