নদীতে নেই জল, তবু পারানি দিয়ে যান নতুনচরের বাসিন্দারা

রম পড়তে না পড়তেই জল শুকিয়ে যায় ভাগীরথীর। দু’পাড়ের দুরত্ব এসে দাঁড়ায় প্রায় ফুট চারেকে। বর্ষার টইটুম্বুর নদী গ্রীষ্মকালে প্রায় নালার আকার নেয়। অনায়াসে পায়ে হেঁটেই নদী পার হন গ্রামবাসীরা। তবে, জল শুকিয়ে গেলেও নদী পেরিয়ে যাতায়াতের জন্য বরাদ্দ করা টাকা দিতেই হয় তাঁদের। কালনা-১ ব্লকের কৃষ্ণদেবপুর পঞ্চায়েতের নতুনচর গ্রামে পারানি দেওয়ার এমনই রেওয়াজ চলে আসছে গত দু’বছর ধরে।
গ্রামবাসীরা জানান, প্রায় তিন দশক আগে গ্রামের এই নদীটি মূল ভাগীরথী থেকে আলাদা হয়ে যায়। এক সময়ে সারা বছরই জল থাকত নদীতে। এখন যদিও গরমের শুরুতেই জল শুকিয়ে যায়। অনায়াসে হেঁটেই নদী পার হওয়া যায়। গ্রামবাসীদের তরফে বছর সাতেক আগে নদী পারাপারের কাজে নিয়োগ করা হয় স্থানীয় বছর তিরিশের যুবক নাসিবুল শেখকে। নদীতে জল থাকলে নাসিবুলের নৌকাতেই নদী পারাপার করেন গ্রামবাসীরা। সেই মতো জন প্রতি এক টাকা করে পারানিও ধার্য করা হয়। এর বিনিময়ে বছরের শেষে গ্রামের মসজিদের উন্নয়নের কাজে নাসিবুলকে পাঁচ হাজার টাকা দিতে হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বাকি টাকা থাকবে তাঁর পারিশ্রমিক হিসাবে।

সেই থেকে নদীর পাড়ে বাঁশ ও খড়ের ছাউনি তৈরি করে দিন ভর নদী পারাপারের দায়িত্ব সামলান নাসিবুল। প্রথম দু’বছর গ্রীষ্মকালে নদীতে জল থাকায় কোনও সমস্যা হয়নি। তবে তার পর থেকে গ্রীষ্মের শুরুতেই নদীর জল শুকিয়ে যায়। ফলে সমস্যায় পড়েন নাসিবুল। জল শুকিয়ে যাওয়ায় গ্রামবাসীরা পায়ে হেঁটে আনায়াসেই নদী পার হতে শুরু করলে আয় কমতে থাকে তার। এক মরশুমের উপার্জনে লাভ তো দুরের কথা মসজিদ কমিটির টাকা মেটাতেই হিমশিম খেতে হতো তাকে। নাসিবুল বলেন, “বর্ষাকালে গ্রামের অনেক পরিবারই বিভিন্ন কাজে নদীতে নৌকা নামায়। তাঁরা নিজেরা সেই নৌকাতেই যাতায়াত করে। স্বাভাবিক ভাবেই সেই মরশুমে আমার আয় কমে যায়। তার উপরে গ্রীষ্মকালে নদীর জল শুকিয়ে গেলে আয় প্রায় বন্ধই হয়ে যায়।”
পার করে দে
দরিয়া। ভরা গরমে যদিও শুকিয়েছে জল। কালনার নতুনচর গ্রামে তোলা নিজস্ব চিত্র।

গ্রামের মানুষের সম্মতি নিয়ে মুশকিল আসান অবশ্য নাসিবুল নিজেই করেছে। ঠিক হয়, নদীর জল শুকিয়ে গেলে নদী পারাপারে নৌকা ব্যবহার না করলেও নাসিবুলকে বরাদ্দ করা পারানি দিতে হবে যাত্রীদের। এক মাত্র ছাড় পাবেন গ্রামের চাষিরা। ঠিক হয়, চাষের কাজে বারবার নদী পার হতে হয় চাষিদের। তাই বছরের শেষে গ্রামের চাষিরা তাঁদের ফসলের একাংশ দিয়ে দেবেন নাসিবুলকে।
নতুনচর গ্রামে ঢোকার মুখে অস্থায়ী ছাউনিতে সারা দিনই দেখা মিলবে নাসিবুলের। নদী পার হওয়ার সুবিধার জন্য ফুট দু’য়েকের একটি বাঁশের মাচাও তৈরি করেছে সে। নদীতে জল প্রায় নেই বললেই চলে। তবুও বাঁশের মাচার সঙ্গে বাঁধা থাকে নাসিবুলের নৌকা। তাঁর কথায়, “হোক না অল্প জল। কিন্তু একটা নৌকা বাঁধা না থাকলে লোকে ঘাট বলে মানবে কেন?” এই ঘাট দিয়ে কেবল নতুনচর গ্রামের বাসিন্দারাই নয়, যাতায়াত করেন নদিয়ার একাংশের মানুষও। তবে অনেকেই প্রথম প্রথম পায়ে হেঁটে নদী পার হওয়ার পরে পারানি দিতে রাজি হননি। পরে অবশ্য তাঁরা রাজি হয়ে যায় বলে জানান নাসিবুল। স্থানীয় বাসিন্দা রাজিবুল শেখ বলেন, “মানুষ যাতায়াত করলে এক টাকা, তবে শুকনো নদী দিয়ে মোটর সাইকেল বা সাইকেল নিয়ে যেতে হলে নাসিবুলকে বেশি পয়সা দিতে হয়। ওর সারা বছরের বেশির ভাগ আয়ই হয় নদীতে জল শুকিয়ে যাওয়ার মরশুমে।”
পায়ে হেঁটে নদী পার হলেও পারানি দেওয়ার বিষয়ে কোনও অভিযোগ নেই গ্রামবাসীদের। স্থানীয় আনোয়ার শেখ, জাহিদুল শেখরা জানান, “ওর আয় করা টাকার একটা বড় অংশই তো মসজিদের উন্নয়নের কাজে লাগে। না হলে মসজিদের জন্য টাকা জোগাড় করতে গরিব গ্রামবাসীদেরই সমস্যায় পড়তে হতো।”

First Page Bardhaman Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.