|
|
|
|
হদিস প্রাচীন স্থাপত্যের |
অনুপরতন মোহান্ত ² গঙ্গারামপুর |
বাণগড় দুর্গনগরীর ঢিবি খুঁড়ে তাম্র-প্রস্তর যুগের নিদর্শনের পাশাপাশি বিশাল এক পঞ্চরথ আবিষ্কৃত হয়েছে। যা ওড়িশার লিঙ্গরাজ মন্দিরের চেয়ে বড় বলে প্রত্নতাত্ত্বিকেরা মনে করছেন। দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুরের ঐতিহাসিক বাণগড়ে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগ বিভাগের কলকাতা শাখার নেতৃত্বে তৃতীয় দফায় খননকার্যের পরে তাম্র-প্রস্তর যুগের ওই নিদর্শন ও স্থাপত্য উত্তরবঙ্গের মধ্যে প্রথম বলে মনে করছেন পুরাতত্ত্ব বিভাগের ডেপুটি সুপারিন্টেডেন্ট শান্তনু মাইতি। সামনেই বর্ষা। তাই তৃতীয় পর্বের খনন কাজ আপাতত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে গত ৭ মাসে আবিষ্কৃত প্রত্নসামগ্রী বাণগড়কে পর্যটন ক্ষেত্র হিসাবে গড়ে তোলার দাবি আরও জোরালো করবে বলে মনে করা হচ্ছে। গত অক্টোবরে বাণগড়ে খনন শুরু হয়। তার আগে দ্বিতীয় দফায় নজর মিনার-সহ মৌর্য যুগের স্থাপত্য ও একাধিক পুরাতত্ত্বের নমুনা আবিষ্কৃত হয়েছে। চার দিকে পরিখা দিয়ে ঘেরা বাণগড় দুর্গনগরীর ধ্বংসাবশেষ ও ছোট ইটের তৈরি প্রসাদ আগেই উঠে এসেছিল। |
|
ছবি: অমিত মোহান্ত। |
এ বার দুর্গ প্রাকার ও স্থাপত্যকীর্তি খুঁজতে গিয়ে মাটির ৬ মিটার নীচে মেলে ওই বিশাল পঞ্চায়তন বা পঞ্চরথ মন্দিরের একাংশ। যা অন্তত ৯০ কোটি ইট ও পাথর দিয়ে তৈরি। ডেপুটি সুপার শান্তনুবাবুর কথায়, “কারিগরি দিক থেকে এ এক উন্নত নিদর্শন।” ওই মন্দির প্রদক্ষিণের জন্য চার দিকে সরু রাস্তা রয়েছে। রয়েছে বড় হোমকুণ্ড। ৩০ মিটার উঁচু পাঁচিল। ৮-১০ মিটার অন্তর একটি করে নজরমিনারের হদিস মিলেছে। প্রত্নতাত্ত্বিকেরা জানাচ্ছেন, মন্দিরের সাড়ে ১১ মিটার নীচে খনন করে মিলেছে শালকাঠের স্থাপত্য। সম্ভবত পাল যুগের ওই স্থাপত্যের পাশাপাশি একটি চমকপ্রদ নির্মাণ মিলেছে যার সঙ্গে বৌদ্ধ স্থাপত্যের মিল পাওয়া যায়। মিলেছে তাম্র ও প্রস্তর যুগের মূল্যবান পাথর খণ্ড, সোনার মুদ্রা, পোড়ামাটির সিলমোহর, ধাতুখণ্ড, তামার সরঞ্জাম সমেত অন্তত পাঁচশো নিদর্শন। ওই সময় খননে মিলেছে চাল, বড় মাছের কাঁটা, সরষে, তামা ও ব্রোঞ্জের বাসনপত্র। যা দেখে প্রত্নবিদদের অনুমান, মৌর্য যুগেও মাছ-ভাত খাওয়ার প্রচলন ছিল। খাবারে ব্যবহার করা হত সরষে। মন্দিরের দক্ষিণের ঢালে ইটের সুড়কি ও টুকরো দিয়ে তৈরি বিরাট একটি চাতালের সন্ধান মিলেছে যা প্রার্থনাস্থল বলে অনুমান করা হচ্ছে। ঢিবি থেকে ৯ মিটার নীচে খননের সময়ে এটির একাংশের সন্ধান মেলে। বাণগড় আর্কিওলজি সোসাইটির সম্পাদক পার্থ মৈত্র বলেন, “ইতিমধ্যে পুরাতত্ত্বের ওই সমস্ত নিদর্শন বাণগড়ের অস্থায়ী সংগ্রহশালায় রাখা হয়েছে। ওই মন্দিরের খননের কাজ শেষ করা হলে রাজ্যে এক চমকপ্রদ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের অন্যতম একটি দ্রষ্টব্যস্থান হয়ে উঠবে বাণগড়। পর্যটন মানটিত্রে বাণগড়কে অন্তর্ভুক্ত করা হলে জেলার গুরুত্ব বাড়বে। পুরাতত্ত্ব বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, সামনের বছর ফের খনন শুরু হবে। সকলের জন্য খুলে দেওয়া হবে বাণগড় দুর্গনগরীও। |
|
|
|
|
|