বিয়ের যাবতীয় আয়োজন সারা। হয়ে গিয়েছে গায়ে হলুদ। হাতে মেহেন্দি লাগিয়ে লাল ছাপা কারড়ে সেজেছে কনে। একটু পরেই এসে যাবে বর তারপরেই শুরু হবে বিয়ে। একে একে আসতে শুরু নিমন্ত্রিত অতিথিরা। হঠাৎ গাড়ির আওয়াজ শুনে সকলেই ছুট লাগালেন বর এসে গিয়েছে ভেবে। কিন্তু এ কি? বর কোথায়? এতো পুলিশের গাড়ি। নাবালক ও নাবালিকার বিয়ে বন্ধ করতে বলে বর ও কনে দু’পক্ষের লোকজনকেই থানায় যাওয়ার নির্দেশ দিল পুলিশ। সোমবার রাতে এমনই ঘটনা ঘটেছে উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটের ইটিন্ডার পানিতর গ্রামের দক্ষিণ পাড়ায়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নুর ইসলাম মণ্ডল এবং প্রতিবেশী মাননান মোল্লার বন্ধুত্ব দীর্ঘদিনের। দুই বন্ধু ঠিক করেছিলেন বন্ধুত্ব অক্ষয় করে রাখতে পারিবারিক সম্পর্কের বাঁধনে নিজেদের বাঁধবেন। ভিক্ষা করে দিন চলে মান্নানের। অন্যদিকে প্রতিবন্ধী নুর ইসলাম ভ্যান রিকশা চালিয়ে সাংসার চালান। অভাবের তাড়নায় মান্নানের স্ত্রী অনেক আগেই তাঁকে ছেড়ে চলে গিয়েছেন। তিন মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে থাকেন মান্নান। নুর ইসলামের চোট চেলে হবিবুরের বয়স ১৬ বছর ৮ মাস। আর মান্নানের ছোট মেয়ে সালমা সবে ১৪য় পা রেখেছে। দুই বন্ধুর বন্ধুত্বের অটুট বন্ধন আরও দৃঢ় করতে ঠিক হয় নুর ইসলামের ছোট ছেলের সঙ্গে মান্নানের মেয়ে সালমার সাদি দেওয়া হবে। কিন্তু এত কম বয়সে বিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে দুই পরিবারের তরফে কোনও বাধা না থাকলেও কয়েকজন প্রতিবেশী এতে আপত্তি জানান। কিন্তু অভাবের কারণেই দু’টি পরিবারের কেউই সেই আপত্তিতে কান দেননি। শেষ পর্যন্ত গ্রামবাসীদের কাছ থেকে এই নাবালক-নাবালিকার বিয়ের খবর পায় স্থানীয় একটি স্বেচ্চাসেবী সংস্থা। তাঁরাই বিষয়টি পুলিশকে জানান।
ওই স্বেচ্চাসেবী সংগঠনের তরফে বলা হয়, অল্প বয়সে বিয়ে দিলে ছেলেমেয়েদের কি কি সমস্যা হতে পারে সে ব্যাপারে তাঁরা দু’টি পরিবারের লোকজনকেই বুঝিয়েছিলেন। কিন্তু কোনও পরকিবারই তাঁদের কথা শোনেননি। বাধ্য হয়েই তাঁরা পুলিশকে জানান। এর পরে পুলিশ গিয়ে দুই পরিবারেকেই বর-কনের বয়সের প্রমাণপত্র সহ থানায় দেখা করতে বলে।
মঙ্গলবার বসিরহাট থানা চত্বরে দাঁড়িয়ে সালমার বাবা মান্নান মোল্লা বলেন, “এই বয়সে মেয়ের বিয়ে দেওয়া যে অন্যায় তা জানি। কিন্তু কী করব?” ভিক্ষা করে দিন চলে। অর্ধেক দিন ছেলেমেয়েদের মুখে অন্ন দিতে পারি না। অভাবে যাতে ওদের কোনও ক্ষতি না হয়, সে জন্য ঠিক করি বন্ধুর ছেলের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেব। অন্তত খেয়ে-পরে বাঁচবে মেয়েটা।” অন্যদিকে বরের বাবা নুর ইসলামের বক্তব্য, “বন্ধুকে কথা দিয়েছিলাম ওঁর মেয়েকে ছেলের বউ করে আনব। কিন্তু এখন বিয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বন্ধুর খুব অসুবিধা হয়ে গেলে। তবে বিয়ের বয়সে পৌঁছলে সালমাকেই আমার ছেলের বউ করে আনব।” |