বেশি যাত্রী তোলার হিড়িকে দেরি হচ্ছিল বিস্তর। ফলে কোনও বাসই সময় মতো গন্তব্যে পৌঁছতে পারছিল না। এই সমস্যা এড়াতে মালিক সংগঠনের পক্ষ থেকে ‘লেট ফাইন’-এর ব্যবস্থা করা হয়। তা যে বিষ ফোঁড়া হয়ে দাঁড়াবে, তা তাঁরা ভাবেননি। বাড়তি যাত্রী তোলা বন্ধ হয়নি, উল্টে জরিমানা বাঁচাতে চলছে ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়। পাল্লা দিয়ে চলছে রেষারেষিও। ফলে দুর্ঘটনা বেড়েই চলছে দুর্গাপুরের রাস্তায়।
দুর্গাপুরে সারা দিনে প্রায় ৫০টি বড় বাস এবং প্রায় ২৫০টি মিনিবাস চলাচল করে। নিত্যযাত্রীরা জানান, বড় বাসগুলির জিটি রোডে চলাফেরা রেসের ঘোড়াকেও হার মানাবে। কোথাও যানজটে আটকে দেরি হয়ে গেলেই শুরু হয়ে যায় দৌড়। অনেক সময় যাত্রীরা বাস থেকে নামারই সময় পান না। রাস্তা খারাপ বা যাত্রীদের সতর্কীকরণ, কোনও কিছুই তখন আর চালকের কানে পৌঁছয় না। প্রাণ হাতে করে যাতায়াত করেন যাত্রীরা।
রেষিরেষির ব্যাপারে অবশ্য বেশ কয়েক ধাপ এগিয়ে মিনিবাসগুলি। মহকুমায় যাত্রী পরিবহণে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এই বাসগুলি। কিন্তু তাদের দাপাদাপিতে নাজেহাল যাত্রী থেকে পথচারী, সকলেই। বাসিন্দাদের অভিযোগ, একেই অনেক রাস্তায় ফুটপাথ নেই। সাইকেল, মোটরবাইক, অটো রিকশায় প্রাণ ওষ্ঠাগত। তার উপরে মিনিবাসের দৌরাত্ম্যে হাঁটাচলা করা দায়। স্কুল, কলেজ ও অফিসের সময়ে যাত্রীদের বাদুড়ঝোলা হয়ে যাওয়া নিত্য নৈমিত্তিক দৃশ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটে হামেশাই। |
সময়ে গন্তব্যে পৌঁছনোর পরোয়া না করে বাসগুলির এ ভাবে অতিরিক্ত যাত্রী তোলা আটকাতে মালিক সংগঠনের পক্ষ থেকে বেশ কয়েক বছর আগে বাসের কর্মীদের থেকে ‘লেট ফাইন’ আদায়ের ব্যবস্থা করা হয়। প্রতি মিনিট দেরিতে ২০ টাকা জরিমানা ধার্য হয়। এই জরিমানার টাকা পায় তার ঠিক পিছনে আসা বাস। সেই বাস আবার দেরি করলে তার জরিমানার টাকা পায় পরের বাস। এই জরিমানা চালুতে তৈরি হয় অন্য সমস্যা। জরিমানা এড়াতে অতিরিক্ত যাত্রী তুলেই দ্রুত গতিতে দৌড় শুরু করতে থাকে বাসগুলি। এমনকী, যাত্রী তোলায় দেরি এড়াতে অনেক সময়ে দরজা খোলা অবস্থাতেও বাস চলতে দেখা যায়। শহরের এইট-বি, এ-জোন, বি-জোন রুট, বেনাচিতি বাজার এলাকায় এমন দৃশ্য চোখে পড়ে মাঝে-মধ্যেই। যাত্রীদের অভিযোগ, প্রতিবাদ করে কোনও লাভ হয় না। নিশ্চুপ প্রশাসনও। ভিড়িঙ্গি, প্রান্তিকা বাসস্টপে অপেক্ষারত যাত্রী সমা ঘটক, শৈলেন সরকার, কাঞ্চন বসুদের অভিযোগ, “বাসে উঠতেই এখন ভয় লাগে। কিন্তু আর কোনও উপায়ও নেই। বাধ্য হয়েই বাসে যাতায়াত করি।” কলেজ ছাত্রী সুকন্যা রায়, পুজা ভৌমিকরা বলেন, “এত দ্রুত বাস চালানোর প্রতিবাদ করলে ওঁরা রেগে যান। বলেন, দেরি হলে জরিমানার টাকা আপনি দেবেন?”
দুর্গাপুর বাস ওয়ার্কমেন্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় স্বীকার করেন, “রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট অথরিটির বেঁধে দেওয়া নিয়ম কেউ মানছে না।” দুর্গাপুর প্যাসেঞ্জার ক্যারিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কাজল দে বলেন, “মিনিবাস পরিষেবা সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনার জন্য আমরা এই নিয়ম করি। তবে যাত্রীরা নিয়মভঙ্গের অভিযোগ জানিয়েছেন। আমরা এ নিয়ে আলোচনা করেছি। কোনও বাসকে নিয়ম ভাঙতে দেখলে সেটিকে তিন দিন বসিয়ে দেওয়া হবে।” মহকুমা আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিক অনিমেষ সিংহ রায় বলেন, “বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রশাসনিক স্তরে আলোচনা করে শীঘ্রই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সে ব্যবস্থা কবে হবে, জানা নেই। তত দিন প্রাণ হাতে চলাফেরাই ভবিতব্য যাত্রীদের। |