দিন আসে, দিন যায়, তার ফাঁকেই ইতিহাসে ঢুকে পড়ে তার চলাচলের খবর। পুরনো দিনের শহুরে খবর দিয়ে চেনা যায় এখনকার
অতি পরিচিত শহরের অতীতটাকে, তার নাগরিক জীবনযাপন থেকে খেলাধুলো, সংস্কৃতি বা কূটকচালি থেকে রাজনীতির হাল।
পঞ্চাশ বছর আগের কলকাতা শহরের গতিবিধি চিনতে ২১ জুলাই ১৯৬৩ থেকে ২০ অগস্ট ১৯৬৩ এক মাসের কিছু বিশেষ খবর।

সোমবার, ৫ শ্রাবণ, ১৩৭০ (৩১ আষাঢ়, ১৮৮৫ শকাব্দ) MONDAY, JULY 22, 1963
• খাদ্যে ভেজাল দানের অপরাধে ১১টি প্রতিষ্ঠানের দণ্ড: গম, চা, ঘি, বার্লি, লজেন্স, ছোলা, শিশু খাদ্য, জমানো দুধ প্রভৃতি আহার্য দ্রব্যাদিতে ভেজাল দেওয়ার অভিযোগে গত দেড় মাসে এগারটি প্রতিষ্টানের মালিক বা পদস্থ কর্মচারীকে অভিযুক্ত করা হয়। অভিযুক্তদের ছয় মাস হইতে এক বত্সর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং পাঁচশত হইতে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হইয়াছে। দ্বিতীয় মিউনিসিপ্যাল ম্যাজিস্ট্রেট শ্রী এস সি ব্যানার্জির আদালতে ঐ সব মামলার শুনানি হয়। মিউনিসিপ্যাল আদলতে এখনও বিভিন্ন ধরনের আরও চারশতটি অভিযোগ বিচারাধীন আছে বলিয়া জানা যায়। অভিযোগের বিবরণে প্রকাশ, গত ১৯৫৯ সনের মে মাসে নারকেলডাঙ্গায় ক্যানেল ওয়েস্ট রোডের উক্ত ময়দাকলে হঠাত্ কর্পোরেশনের জনৈক ফুড ইন্সপেক্টর হানা দেন। এবং ঐ মিলের একটি গুদাম পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে তিনি ঐ গুদাম হইতে গম ও গমজাত দ্রব্যের কিছু নমুনা সংগ্রহ করেন। তাঁহার সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের খাদ্য দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টরও ছিলেন। নমুনা পরীক্ষা করিয়া দেখা যায় যে, উহা পোকায় খাওয়া এবং নিম্নমানের। ইহা ছাড়া ঐ মিলে প্রস্তুত কিছু পরিমাণ ভেজাল আটাও উদ্ধার করা হয়।

সোমবার, ৫ শ্রাবণ, ১৩৭০ (৩১ আষাঢ়, ১৮৮৫ শকাব্দ) MONDAY, JULY 22, 1963
• ...‘মত্স্য মারিব খাইব সুখে’ (অবশ্য যদি মেলে): ‘আরে মশাই, মাছ পাই আর না পাই, মাছের গন্ধ পেলেই হল! মাছের বাজারে তো যাবার উপায় নেই—তাই এই পুকুরপাড়ের হাওয়া খেয়ে গেলাম।’ রবিবার বিকাল তখন পাঁচটা। চৌরঙ্গীর মনোহরদাস তড়াগের ধারে ক্লান্তদেহ এক ভদ্রলোককে ছিপ গুটাইয়া গুটি গুটি ট্রামের দিকে যাইতে দেখিয়া প্রশ্ন করিলাম, ‘কি মাছ পেলেন?’ তার জবাবেই উপরোক্ত উপদেশ-বাণী। ঐ তড়াগের তারপাশে তখন অন্তত দেড়শ’ দর্শকের ভীড়। মাছ ধরা দেখিয়াই বোধ হয় তাঁহারা মাছের স্বাদ মিটাইতেছেন। আর পুকুরের জলে ছিপ ফেলিয়া বসিয়াছিলেন অন্তত ৩০-৩৫ জন।
রবিবার মনোহরদাস তড়াগে ছিপ ফেলিয়াছেন যতজন, তাহার অনেক বেশী ভীড়
জমাইয়াছেন দর্শকরা মাছ-ধরা দেখিয়া মাছের স্বাদ যদি মেটে। —আনন্দ চিত্র।
তাঁহাদের সঙ্গে মত্স্য দফতরের ‘পাস’ আর পাসের জন্য ৫ টাকা গণিয়া দিয়া সকাল ছয়টা হইতে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত সরকারী পুষ্কুরিণীতে মাছ ধরার অধিকার। এইবারের বর্ষায় কলিকাতার ময়দানে মনোহরদাস তড়াগ ছাড়া ‘জেনারেল’, ‘বিরজুতলা’ প্রভৃতি আরও তিনটি সরকারী পুকুরে মাছ ধরার সীজন শুরু হইয়াছে মাত্র গত শনিবার। গত বছর নাকি একদিনের ‘পাস’-এর দক্ষিণা ছিল দশ টাকা। এবার দৈনিক পাঁচ টাকা করায় ভীড় বাড়িয়াছে।

বুধবার, ৭ শ্রাবণ, ১৩৭০ (২ শ্রাবণ, ১৮৮৫ শকাব্দ) WEDNESDAY, JULY 24, 1963
• পরলোকে নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়: বাংলার খ্যাতিমান সাহিত্যিক নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায় আর ইহলোকে নাই। মঙ্গলবার সকাল ৪টা ২০মিনিটে শেঠ সুখলাল কারনানি হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃস্বাশ ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁহার বয়স হইয়াছিল মাত্র ৫৮। নৃপেন্দ্রকৃষ্ণের এই অকালবিযোগ বাংলা সাহিত্যেরই শুধু নয় বাংলা চলচ্চিত্রেরও অপূরনীয় ক্ষতি হইল। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনি সাহিত্য ও চলচ্চিত্রের সেবায় নিয়োজিত ছিলেন। বিশেষত শিশু সাহিত্যিক হিসাবে তাঁহার জনপ্রিয়তা ছিল প্রশ্নাতীত। আজীবন সাহিত্যসাধনায় তিনি পাঁচশতেরও বেশী গ্রন্থ রচনা করিয়াছেন। বাংলাদেশের বেতারের বর্তমান জনপ্রিয়তার পিছনেও নৃপেন্দ্রকৃষ্ণের অশেষ দান রহিয়াছে। কলিকাতায় বেতারের উন্মেষকাল হইতেই নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ তাহার সহিত সংশ্লিষ্ট ছিলেন। অনেক শ্রোতার নিকটই নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ আজও গল্পদাদু নামেই পরিচিত। নৃপেন্দ্রকৃষ্ণের বৃদ্ধা মাতা এখনও জীবিত আছেন। তাঁহার দুই পুত্র বর্তমান। তিনি বিপত্নীক ছিলেন।

বুধবার, ৭ শ্রাবণ, ১৩৭০ (২ শ্রাবণ, ১৮৮৫ শকাব্দ) WEDNESDAY, JULY 24, 1963
• আইন অমান্য আন্দোলন দ্বিতীয় দিন ৭৬ জন গ্রেপ্তার: আইন অমান্য আন্দোলনের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার একজন এম এল এ সহ ৭৬ জন গ্রেপ্তার বরণ করেন। তাঁহাদের মধ্যে কৃষক, শ্রমিক, মধ্যবিত্ত ও কয়েকজন ছাত্রও আছেন। কর ও মূল্যবৃদ্ধি প্রতিরোধ কমিটির উদ্যোগে আইন অমান্য আন্দোলন পরিচালনা করা হয়। রাজ্য বিধান সভার ফরওয়ার্ড ব্লক সদস্য শ্রীসুনীল বসুনিয়া, হাওড়া মিউনিসিপ্যালিটির কমিশনার শ্রীরামপ্রসাদ মুখার্জি, শ্রীশশাঙ্ক মণ্ডল এবং শ্রীঅজিত সেন এই আন্দোলনের নেতৃত্ব করেন। তাঁহাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
কলিকাতার খাদ্য আন্দোলন-কয়েদী গাড়ীতে প্রবেশের সময়
একজন সত্যাগ্রহী চিত্কার করিতেছেন। — আনন্দ চিত্র।
বিকাল ৪-৫৮ মিনিটে আইন অমান্যকারীরা রাজভবনের দক্ষিণ ফটকের সামনে উপস্থিত হন। তখন মেঘলা আকাশ। মাঝে মাধে বৃষ্টি হইতেছিল। গ্রেপ্তারের কয়েক মিনিটের মধ্যে তাঁহাদের তিনটি সরকারী বাসে সরাসরি প্রেসিডেন্সী জেলে লইয়া যাওয়া হয়। এই বিক্ষোভ প্রত্যক্ষ করিবার জন্য ঐ স্থানে প্রচুর জনসমাগম হইয়াছিল। এই দিন যাঁহারা আইন অমান্য করেন তাঁহাদের পূর্ব দিনের ন্যায় গ্রেপ্তারের কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রসিডেন্সী জেলের অভ্যন্তরে একজন ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট হাজির করা হয়। তাঁহাদের সকলকেই ৫ই আগস্ট পর্যন্ত জেল হাজতে রাখিবার নির্দেশ দেওয়া হইয়াছে বলিয়া জানা যায়।

বুধবার, ৭ শ্রাবণ, ১৩৭০ (২ শ্রাবণ, ১৮৮৫ শকাব্দ) WEDNESDAY, JULY 24, 1963
• নেতাজীর ব্রোঞ্জ মূর্তি জানুয়ারী নাগাদ তৈয়ারী হইয়া যাইবে: বিখ্যাত ‘দিল্লি চলো’ ভঙ্গীতে নেতাজী সুভাষচন্দ্রের ব্রোঞ্জমূর্তিটি আগামী বত্সরের জানুয়ারী নাগাদ স্থাপনের জন্য তৈয়ারী হইয়া যাইবে বলিয়া নির্ভরযোগ্যসূত্রে জানা যায়। আধুনিক চিত্রকলা গ্যালারির কিউরেটর সুপরিচিত ভারতীয় ভাষ্কর শ্রীপ্রদোষ দাশগুপ্তের উপর এই কাজের ভার দেওয়া হইয়াছে। তিনি এখানে মূর্তিটির প্লাস্টার ঢালাইয়ের কাজ করিতেছেন। আগামী সেপ্টেম্বরে উহা তৈয়ারী হইয়া যাওয়ার কথা। উহা তখন এখনে অথবা কলিকাতায় ব্রোঞ্জ ঢালাই হইবে। কলিকাতার কর্তৃপক্ষ মহল নেতাজী সুভাষচন্দ্রের আগামী জন্মদিন ২৩শে জানুয়ারীতে এই মূর্তিটি স্থাপনের অনুষ্ঠানের কথা চিন্তা করিতেছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের পাঁচজন মন্ত্রী শ্রীহুমায়ুন কবির, শ্রী এ কে সেন, শ্রী শাহনাওয়াজ খান, শ্রী পি এস নস্কর ও ডঃ এম এম দাসের উপর মূর্তি মনোনয়নের বার দেওয়া হইয়াছিল। তাঁহারা উহার ক্ষুদ্র আকারের মৃত্তিকা মূর্তিটি বিশেষভাবে অনুমোদন করিয়াছেন।

শনিবার, ১০ শ্রাবণ, ১৩৭০ (৫ শ্রাবণ, ১৮৮৫ শকাব্দ) SATURDAY, JULY 27, 1963
• শ্রীমতী সুচিত্রা সেনকে অভিনন্দন পত্র দান: চিত্রভিনেত্রী সুচিত্রা সেনকে কর্পোরেশনের পক্ষে মেয়র শ্রীচিত্তরঞ্জন চ্যাটার্জি একখানি অভিনন্দনপত্র দিবেন। তবে সভা করিয়া তাঁহাকে কোন নাগরিক সম্বর্ধনা দেওয়া হইবে না। শুক্রবার কর্পোরেশনের সভায় এই মর্মে এক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভার প্রারম্ভে বিরোধী দলের কয়েকজন সদস্য বলেন, সুচিত্রা সেনকে নাগরিক সম্বর্ধনা জানানো উচিত।
রাশিয়ান দূতাবাসে সুচত্রা সেনের সম্বর্ধনা।
কারণ শ্রীমতী সেন মস্কো চলচ্চিত্র উত্সবে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীরূপে সম্মানিতা হইয়াছেন। কিন্তু অধিকাংশ সদস্য এইরূপ অভিমত প্রকাশ করেন যে, শ্রীমতী সেনকে নাগরিক সম্বর্ধনা দেওয়ার কোন প্রশ্ন ওঠে না। তবে মেয়র তাঁহাকে একখানি অভিনন্দনপত্র দিতে পারেন। এবং শেষ পর্যন্ত অভিনন্দনপত্র দেওয়ার সিন্দান্তই গৃহীত হয়।

সোমবার, ১২ শ্রাবণ, ১৩৭০ Monday, July 29, 1963
• মৎস্যাভাব, ব্যবসায়ীদের সাফাই: কলিকাতার সম্প্রতি যে মৎস্যাভাব ঘটিয়াছে, তাহার পিছনে ব্যবসায়ীদের কোন ‘ষড়যন্ত্র’ নাই। মাছের সরবরাহের মারাত্মক অবনতিই উহার কারন। তাঁহারা বলেন, মাছ পাওয়া গেলে, মাছের ব্যাবসায়ীরা কেন তাহা কিনিবেন না? পাকিস্তানে তাঁহারা কয়েক লাখ টাকা এই জন্য দিয়াও রাখিয়াছেন। শিয়ালদহ ও হাওড়ার আড়তদাররা রবিবার জানান, বর্ষার এই সময়টাতে মাছ সচরাচর কমই পাওয়া যায়। এবারে পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ বন্যা হওয়ায় পাকিস্তানী মাছের সরবরাহ আরও কমিয়া গিয়াছে। উত্তর ও দক্ষিণ ভারত হইতে যে পরিমাণ মাছ কলিকাতায় আসিত, এবার তাহাও কমিয়া গিয়াছে। শিয়ালদহের আড়তদারদের হিসাবে দেখা যায়, ১০ই জুলাই যেখানে পাকিস্তান হইতে ৬৬৩ বাক্স মাছ (প্রতি বাক্সে ৪ মণ মাছ থাকে) আসিয়াছে, সেখানে ২৭শে জুলাই আসিয়াছে মাত্র ৮১ বাক্স: এই ১৭ দিনে প্রত্যহ সরবরাহের পরিমাণ কমিয়া গিয়াছে। পাকিস্তান হইতে এই পরিমাণ ইলিশ মাছই আসিত।

মঙ্গলবার, ১৩ শ্রাবণ, ১৩৭০ Tuesday, July 30, 1963
• স্বর্ণশিল্পীদের আইন অমান্য চতুর্থ দিনে: সোমবার স্বর্ণশিল্পীদের আইন অমান্য আন্দোলনের চতুর্থদিনে স্বর্ণশিল্পীদের পরিবারের তিনজন শিশু আগাইয়া আসিয়া প্রথম গ্রেপ্তার বরণ করে। তাঁহাদের বয়স চার, পাঁচ, ছয়। এই দিন মোট ৮২ জন আইন অমান্য করিয়া গ্রেপ্তার বরণ করেন। ধৃত ব্যক্তিদের মধ্যে একজন আশী বত্সরের বৃদ্ধাও ছিলেন। বৃদ্ধার নাম শ্রীমতী নীরদাসুন্দরী কর্মকার। তিনি একজন স্বর্ণকারের মাতা। সাকিন- কালীঘাট।
কলিকাতায় স্বর্ণশিল্পীদের বিক্ষোভ
পুলিশ বেষ্টনী ভেদ করার সময় কয়েকজন নারী পুলিশ হাত ধরিয়া তাঁহাক গাড়ীতে তোলেন। এইদিন গরাণহাটার একটি গোটা স্বর্ণকার পরিবার গ্রেপ্তার বরণ করেন। পরিবারের কর্তা কিশোরীমোহন কর্মকার, তাঁহার পত্নী লীলাবালা দেবী ও দুইজন শিশুকে লইয়া পুলিশ বেষ্টনী ভেদ করেন ও সোজা পুলিশের গাড়ীতে গিয়া ওঠেন। এই দিনকার শোভাযাত্রা দেখিয়া মনে হইল যে, স্বর্ণশিল্পীদের অন্দোলনর শক্তি ক্রমশ বৃদ্ধি পাইতেছে। ১২ই আগষ্ট পর্যন্ত এই আন্দোলন চলিবে।

মঙ্গলবার, ১৩ শ্রাবণ, ১৩৭০ Tuesday, July 30, 1963

অতি ভোরে উঠি,
তাড়াতাড়ি ছুটি...
• বাসযাত্রীদের ‘কিউ’ কলিকাতার প্রবর্তনের পরীক্ষা সুরু: দিল্লি ও বোম্বাইয়ের মত কলিকাতায়ও বাসযাত্রীদের “কিউ” বা সারি প্রবর্তনের পরীক্ষা সুরু হইয়াছে। এসপ্লানেড এলাকার রানী রাসমণি রোডের মোড়ের কাছে চৌড়ঙ্গী রোডের উপর যেসব বাস থামে সেইগুলিতে উঠিবার সময় যাত্রীদের ক্ষেত্রে গত শনিবার হইতে সারি দিয়া দাঁড়াইবার পদ্ধতি পরীক্ষামূলকভাবে চালু করার ব্যবস্থা হইয়াছে। এই স্থান দিয়া প্রতিদিন সাত হইতে নয়টি রুটের বাস চলাচল করে। এই স্থানে সকাল আটটা হইতে রাত্রী দশটা পর্যন্ত বাসযাত্রীদের সারি দিবার পদ্ধতি কার্যকজী করার চেষ্টা হইতেছে। কলিকাতা পুলিশ এবং কলিকাতা স্টেট ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশনের যৌথ উদ্যোগে এই প্রচেষ্টা শুরু হইয়াছে। তাঁহাদের আশা ইহার ফলে বাসযাত্রীরা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াইয়া একের পর এক বাসে উঠিবার ব্যাপারে অভ্যস্ত হইবেন। তিন দিনের অভিজ্ঞতার পর জনৈক পুলিশ অফিসার বলেন যে, এই পদ্ধতিতে যাত্রীদের বাসে উঠিতে কিছু বিলম্ব হইতেছে বটে, কিন্তু তাঁহাদের অনেকেই এই ব্যবস্থাকে অভিনন্দন জানান। বিশেষ করে মহিলারা।

বুধবার, ১৪ শ্রাবণ, ১৩৭০ Wednesday, July 31, 1963
• প্রতি পর্যায়ে তিন নয়া পয়সা বাস ভাড়া বৃদ্ধি: সৌজন্য সপ্তাহ ও পঞ্চাদশ প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষ জনসাধারণের নিকট কলিকাতা স্টেট ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশনের উপহার প্রতি পর্যায়ে (স্টেজে) তিন নয়া পয়সা করিয়া ভাড়া বৃদ্ধি। মঙ্গলবার এক সাংবাদিক সন্মেলসে কর্পোরেশনের মুখপাত্রদের সহিত আলোচনায় এই তথ্যি প্রকাশ পায়। আরও প্রকাশ পায় যে, ভাড়া বাড়ান হইলে বাসের সংখ্যা বৃদ্ধি করা বা যাত্রীদের স্বাচ্ছন্দ্য বৃদ্ধি করা বর্তমানে সম্ভব হইবে না।

বৃহস্পতিবার, ১৫ শ্রাবণ, ১৩৭০ (১০ শ্রাবণ, ১৮৮৫ শক)
• বাসের ভাড়া বাড়িবেই – (তবে বাসযাত্রীদের কথাটাও মনে থাকিবে): কলিকাতায় স্টেট বাসের ভাড়া বাড়িবেই- মুখ্যমন্ত্রী শ্রীপ্রফুল্লচন্দ্র সেন ও পরিবহণ দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত অর্থমন্ত্রী শ্রীশঙ্করদাস বন্ধ্যোপাধ্যায়ের বক্তৃতায় ইহাই প্রকাশ পায়। বুধবার বেলঘরিয়ার রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার পঞ্চদশ বার্ষিক উত্সবে তাঁহারা বক্তৃতা দিতেছিলেন। অবশ্য তাঁহারা বাসযাত্রীদের এইরূপ আশ্বাসও দিয়াছেন যে, ভাড়া বাড়ানোর ব্যাপারে তাঁহাদের কথা স্মরণে থাকিবে- ভাড়া খুব সামান্যই বাড়ানো হইবে। সভাপতির ভাষণে অর্থমন্ত্রীর শ্রীবন্ধ্যোপাধ্যায় বলেন, যে হারে বাসের সরঞ্জামের দাম বাড়িয়াছে ও রক্ষনা বেক্ষনের ব্যায় বৃদ্ধি পাইতেছে সেই দিক দিয়া বিবেচনা করিলে কতৃপক্ষের কাছে ভাড়া বাড়ানো ছাড়া আর কোন পথ নাই। তিনি বলেন, যাত্রীসাধারনের সকল অসুবিধা দূর করা এখনই সম্ভব নয়, সেজন্য চেষ্টার ত্রুটি নাই। অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী ভাষণে মুখ্যমন্ত্রী শ্রীসেন বলেন, বাসের ভাড়া বাড়ানোর অনভিপ্রেত, কিন্তু অপরিহার্য। ভাড়া এমন হারে বাড়ানো হইবে যাহাতে জনসাধারণের উপর খুব বেশী চাপ না হয়। সমস্ত দিক বিবেচনা করিয়াই এই ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্তে আমাদের পৌঁছিতে হইবে। মুখ্যমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার কাজকর্মে সন্তোষ প্রকাশ করিয়া বলেন, এই সংস্থার ভবিষ্যত্সম্পর্কে কেহ কেহ হতাশা প্রকাশ করিয়া থাকেন, কিন্তু তিনি ইহার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দৃঢ় প্রত্যয় প্রকাশ করেন।

শুক্রবার, ১৬ শ্রাবণ, ১৩৭০ FRIDAY, AUGUST 2, 1963
• রেশন কার্ডে চিনি: আগামী ২রা সেপ্টেম্বর হইতে কলিকাতা ও শিল্পাঞ্চলের অধিবাসীরা কেবলমাত্র নির্ধারিত ন্যায্যমূল্যের চোকান হইতে চিনি কিনিতে পারিবেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঐ দোকানগুলি হইতে পরিবার পরিচয় জ্ঞাপক কার্ডে চিনি দেওয়া হইবে। প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য সপ্তাহে ৪০০ গ্রাম এবং ছোটদের জন্য ২০০ গ্রাম। তাহার আগেই ১২ই আগষ্ট হইতে কলিকাতা শিল্পাঞ্চল ও সম্প্রসারিত এলাকায় ন্যায্যমূল্যের দোকান হইতেও সপ্তাহে মাথাপিছু ঐ পরিমান চিনি দেওয়া হইবে; অবশ্য তখন খোলা বাজারে চিনি বিক্রীত হইবে না। বৃহস্পতিবার এক সরকারী প্রেস নোটে এই এলাকার সকল অধিবাসীকে আঞ্চলিক রেশনিং অফিস হইতে ২রা সেপ্টেম্বরের পূর্বেই পারিবারিক কার্ড করাইয়া লইবার পরামর্শ দেওয়া হয়।

শনিবার, ১৭ শ্রাবণ, ১৩৭০ SATURDAY, AUGUST 3, 1963
• উচ্ছেদ ও পুনর্বাসন: টালীগঞ্জ রেল কলোনীর উদ্বাস্তু ও জবরদখলকারী বাসিন্দাদের উচ্ছেদ এবং সুষ্ঠু পুনর্বাসনের শুভ কাজ শুক্রবার হইতে শুরু হইয়াছে। প্রথমদিন ৪০ টি পরিবার কে টালীগঞ্জ হইতে ঠাকুরপুকুর নির্দিষ্ট স্থানে পাঠান হয়। প্রথম পর্যায়ে আগামী ৭ দিনে ২৩১ টি পরিবারকে পাঠান হইবে। শুক্রবার সকালে আমরা রেল কলোনীতে যাইয়া দেখি প্রতিটি অধিবাসী খুশি মনে এই পুরাতন আবাস ছাড়িয়া যাইবার জন্য প্রস্তুত হইয়াছেন। কলিকাতা পুলিশের পক্ষ হইতে অধিবাসীদের নূতন আবাসে সমুদয় মালপত্রসহ যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পরিবহণের ব্যবস্থা অনুযায়ী প্রতিটি পরিবারকে ঘর তুলিবার খরচ হিসাবে নগদ ৩০ টাকা করিয়া দিতেছেন।

শনিবার, ১৭ শ্রাবণ, ১৩৭০ SATURDAY, AUGUST 3, 1963
• কলিকাতার ভিখারী: কলিকাতার যেকোন ভিখারীকে সামনে দাঁড় করিয়ে বিনে দক্ষিণায় কোন কথা জানতে চাইলে সাধারণত যে উত্তর মেলে তার মাথা মুন্ডু নেই। অথচ বলা নিষ্প্রয়োজন, সর্বাঙ্গে ব্যান্ডেজ বাঁধা থাকলেও, অধিকাংশ ভিখারীরই অন্তত মাথাটি আছে। অন্তত কোন কথায় কোন উত্তর হওয়া দরকার তারা তা জানে। জানে বলেই আমরা গলে যাই, পয়সা দিই,- জেরা থামিয়ে পালাবার পথ খুঁজি। কিন্তু সম্ভবত সেটা মুক্তির পথ নয়। বছরকয় আগে সরকারীসূত্রে একবার জানা গিয়াছিল সমগ্র ভারতে ভিখারীর সংখ্যা দশ লক্ষ। তারা সব সাক্ষাত ভিখারী,- নানা বেশে মেকীদের হিসেব স্বতন্ত্র। ৫৭ সনে বোম্বাই জানিয়েছিল সে ‘জাতীয়-তহবিলে’ তার অবদান- ১০ হাজার। এবং বছরে রোজগার তাদের কমপক্ষে ৩৬ লক্ষ টাকা। ৫৯ সনে দিল্লির হিসেব রাজধানীতে সে বছর ভিখারী ছিল ৬ থেকে ৭ হাজার। দু’বছর পরে কলকাতার পুলিশ সগর্বে জানিয়েছিল এ ব্যাপারে অন্তত কলকাতা সেকেন্ড সিটি নয়, - ভিখারী এখানে কমপক্ষে ২০ হাজার এবং তাদের দৈনিক রোজগার কম করে হলেও ৫০ হাজার টাকা।


-চিনি নেই, তাই লজেন্স গুঁড়িয়ে...

— মিষ্টি হয়েছে?
রবিবার, ১৮ শ্রাবণ, ১৩৭০ Friday, August 4, 1963
• কলিকাতার জলনিকাশ ব্যবস্থার সংস্কার সাধনে চারি লক্ষ টাকা মঞ্জুর: কলিকাতা শহরের জলনিকাশ ব্যবস্থা ঢালিয়া সাজাইবার জন্য ৪ লক্ষ টাকা মঞ্জুর হইয়াছে। এ ছাড়া, বর্ষার সমস্ত শহরের কোন রাস্তায় কত জল জমা এবং সেই জল নিষ্কাষনের ব্যবস্থা সম্পর্কে একটি বিশেষ রিপোর্ট পেশ করিবার জন্যও পৌরসভার কমিশনার কে নির্দেশ দেওয়া হইয়াছে। শুক্রবার পৌরসভার সাপ্তাহিক অধিবেশনে উপরোক্ত মর্মে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। সামান্য বৃষ্টিতেই কলিকাতার রাজপথে যে প্লাবন বহিয়া যায় ঐ সভায় একাধিক কাউন্সিলার এ সম্পর্কে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। কলিকাতার বিভিন্ন বাজারে কর্পোরেশনের মার্কাহীন দামে বিক্রয়, ময়দানে স্টেডিয়ামের প্রয়োজনীয়তা এবং ট্রাম বাসের ভাড়া বৃদ্ধি সংক্রান্ত প্রস্তাব সম্পর্কে ও ঐদিন কাউন্সিলার উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

মঙ্গলবার, ২০ শ্রাবণ, ১৩৭০ TUESDAY, AGUST 6, 1863
• বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে মহানগরীর আবর্জনা অপসারণ: বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে মহানগরীর পথ ও পয়ঃপ্রণালীতে জমা আর্জনা অপসারণের ব্যাপারে জনৈক বিশেষজ্ঞ সি এম পি ও’য়ের নিকট এক রিপোর্ট পেশ করিয়াছেন। রাজ্য সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী উক্ত বিশেষজ্ঞ এই রিপোর্ট প্রণয়ন করেন। প্রধানমন্ত্রী শ্রীনেহরুর অভিমত অনুযায়ীই রাজ্য সরকার ঐ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। উল্লিখিত রিপোর্টের একটি অনুলিপি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষের নিকটও প্রেরণ করা হইয়াছে। কিন্তু কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ ঐ রিপোর্টের সুপারিশগুলি হুবহু গ্রহণ করিতে পারিবেন না বলিয়া জানা যায়। আধুনিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে ময়লা অপসারণ করিবার জন্য উক্ত রিপোর্টে সুপারিশ করা হইয়াছে। কিন্তু কর্পোরেশনের জনৈক মুখপাত্র এইরূপ অভিমত প্রকাশ করেন, বর্তমান অবস্থায় যন্ত্রের সাহায্যে আবর্জনা পরিষ্কার করা সম্ভবপর নয়। কারণ আবর্জনার ঘনত্ব না কমা পর্যন্ত নূতন ব্যবস্থা কর্যকরী করা সম্ভবপর হইবে না বলিয়া উক্ত মুখপাত্র মন্তব্য করেন। রিপোর্টে আরও বলা হইয়াছে যে, শ্রমিকদের বিনামূল্যে নির্দিষ্ট পোষাক দিতে হইবে। ইহা ছাড়া লরীর সংখ্যা আরও বৃদ্ধি করিবার জন্যও করা হইয়াছে। উক্ত বিশেষজ্ঞ শ্রী জিন এল ভিনসেনজ তাঁহার রিপোর্টে আরও সুপারিশ করিয়াছেন যে, মহানগরীকে আবর্জনা মুক্ত রাখিতে হইলে ময়লা ফেলিবার জন্য আরও ১২৬খানি লরী ক্রয় করা প্রয়োজন।

শুক্রবার, ২৩ শ্রাবণ, ১৩৭০ FRIDAY, AUGUST 9, 1963
• বাজারে ঔষুধের নিদারুণ অভাব: কলিকাতায় সুস্থ লোকের জন্য যেমন খাদ্যের অনটন, তেমনই অসুস্থ লোকের জন্য ঔষুধের নিদারুণ অভাব দেখা দিয়াছে। সব ঔষুধই দূর্মূল্য; অনেক ঔষুধ আবার দুষ্প্রাপ্য। মঙ্গলবার কলিকাতা ও শহরতলীর বিভিন্ন এলাকায় খোলা বাজারে কতকগুলি ঔষুধের দোকানে খোঁজ লইয়া জানা গেল যে, প্রায় প্রতিটি ঔষুধের দাম গড়ে শতকরা পনের হইতে কুড়ি ভাগ বৃদ্ধি পাইয়াছে। ইহা ছাড়া কিছু কিছু অত্যাবশকীয় ঔষুধ হঠাত্ বাজার হইতে উধাও হইয়া গিয়াছে। হৃদরোগের জন্য প্রয়োজনীয় ট্যাবলেট বহু ঔষুধের দোকানেই মিলিতেছে না। ফলে সংশ্লিষ্ট রোগীদের যথোপযুক্তভাবে চিকিত্সা করা সম্ভবপর হইতেছে না। যদিও বা কোন দোকানে মেলে তাহার দাও অস্বাভাবিক; সাধারণ লোকের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। অথচ বর্তমানে বহু লোককেই হৃদরোগে আক্রান্ত হইতে দেখা যাইতেছে। শিশু খাদ্য এবং আরও কয়েকটি পেটেন্ট ঔষুধের দামও কিছুটা বাড়িয়াছে। অবশ্য পাইকারদের পক্ষ হইতে জনৈক মুখপাত্র বলেন যে, আবগারী শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি হওয়ার দরুন গত মে মাস হইতে প্রতিটি ঔষুধের দাম গড়ে শতকরা পাঁচ ভাগ বৃদ্ধি পাইয়াছে।

শুক্রবার, ২৩ শ্রাবণ, ১৩৭০ (১৮ শ্রাবণ, ১৮৮৫ শক) FRIDAY, AUGUST 9, 1963
• চাউলের দর গড়ে দশ টাকা বৃদ্ধি: গত দুই বত্সরের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে চাউলের পাইকারী গড়পড়তা দর মণপ্রতি অন্ততপক্ষে দশ টাকা বৃদ্ধি পাইয়াছে। কোন কোন ক্ষেত্রে মণপ্রতি প্রায় বার টাকা বাড়িয়াছে। ১৯৬১ সালের জন্য মাসে কলিকাতার যেখানে চাউলের পাইকারী দর ছিল মণপ্রতি আঠার টাকা ৮১ নয়া পয়সা তাহা ১৯৬২ সালের জুন মাসে দাঁড়ায় ২২.৫০ নয়া পয়সা। এই বত্সর অর্থাত্ ১৯৬৩ সালের জুন মাসে ঐ দর ছিল ২৮.৪৭ নয়া পয়সা। এই বত্সর জুন মাসে জেলা ভিত্তিতে পাইকারী বাজারে চাউলের সবোর্চ্চ দর উঠে বীরভূমে ঐখানে দর ছিল ৩০.৪৪ নয়া পয়সা। ১৯৬৯ সালে জুন মাসে ছিল ২০.৫৪ নয়া পয়সা। বৃহস্পতিবার পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় এক প্রশ্নের লিখিত উত্তরে খাদ্যদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মুখ্যমন্ত্রী শ্রী সেন এই তথ্য পেশ করেন।

মত্স্যপুরাণ

-মাছ পেলেই ছবি তুলে রাখিস

-মাছ! শিগগির কলকাতায় যা
শুক্রবার, ২৩ শ্রাবণ, ১৩৭০ (১৮ শ্রাবণ, ১৮৮৫ শক) FRIDAY, AUGUST 9, 1963
• মাছের বাজারে নববিধান: সূচনা শুভ: উদ্যোগ-আয়োজনের বালাই ছিল না, তবুও বৃহস্পতিবার মাছের কারবারীদের লাইসেন্স প্রথার শুভমহরত্ হইয়া গেল। লোকের মনে শঙ্কা ছিল বাজারে একটা হুলুস্থুল কাণ্ড ঘটিবে। অর্থাত্ এইদিন কলিকাতা ও হাওড়ার মাছের বাজারের চেহারায় হঠাত্ পরিবর্তন ঘটে নাই। তবে গড়পড়তা দরটা একটু কমের দিকে ছিল। অন্যদিনের তুলনায় সরবরাহও ছিল ভাল। কেবল ছিল না সরকারের মত্স্য নিয়ন্ত্রণ আদেশ কার্যকর ব্যাপারে সরকারী তত্পরতা। হিন্দুমতে দিনটা ভালই ছিল— লক্ষ্মীবার। সুতরাং সূচনা শুভ হওয়ার কথা। মাছের কারবারীদের মত এইদিন খুব ভোরে পাইকারী বাজারগুলিতে ছুটিয়াছি, চোখের ঘুম তখনও কাটে নাই। মনে ছিল নানা জিজ্ঞাসা। প্রবল বৃষ্টির মধ্যেই গাড়ী ছুটাইয়া সর্বপ্রথম হাজির হইলাম, পাতিপুকুরের মেছোহাটায়। বাজারের মুখ হইতে ভিতর পর্যন্ত ভিড়, ব্যস্ত ব্যবসায়ীদের ছোটাছুটি। স্তূপীকৃত মাছ— নানা রকমের, নানা সাইজের।

শনিবার, ২৪ শ্রাবণ, ১৩৭০ SATURDAY, AUGUST 10, 1963
• ঘি ভেজাল করার জন্য মহিলার কারাদণ্ড: ঘি’য়ে ভেজাল দেওয়ার অভিযোগে গত মঙ্গলবার শ্রীমতী কলাবতী দেবী (৩০) নামে জনৈকা অবাঙ্গালী মহিলাকে এক হাজার টাকা জরিমানা ও নয় মাস কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। কলিকাতা মিউনিসিপ্যাল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে বোধহয় এই প্রথম একজন মহিলাকে ঘি’য়ে ভেজাল দেওয়ার দায়ে অভিযুক্ত করা হইল। এইদিন কলিকাতায় দ্বিতীয় মিউনিসিপ্যাল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে এই মামলাটির রায় শুনিবার জন্য উত্সুক জনতার ভীড় জমিয়া যায়। বিকালের দিকে আদালতে গিয়া দেখা যায়, শ্রীমতী কলাবতী আদালতকক্ষে একখানি বেঞ্চের উপর বিষন্নমনে বসিয়া আছেন। তাঁহার পাশে কয়েকজন লোক ঘোরাফেরা করিতেছেন। অভিযুক্ত শ্রীমতী কলাবতী দেবী হাইকোর্টে আপিল করার পনেরদিনের জন্য তাঁহাকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিনে মুক্তি দেওয়া হইয়াছে।

সোমবার. ২৬ শ্রাবণ, ১৩৭০ MONDAY, AUGUST 12, 1963
• ট্যাক্সির ভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাব: বাসভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাবের সঙ্গে সঙ্গে কলিকাতার ট্যাক্সির ভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাবটি আবার উঠিয়াছে। ট্যাক্সির ভাড়া বৃদ্ধি করিয়া প্রথম দেড় কিলোমিটারের জন্য ৬০ নঃ পঃ ও পরবর্তী ০.২৫ কিলোমিটারের জন্য ১০ নঃ পঃ করা হউক। কিছুকাল ধরিয়াই ট্যক্সি মালিকেরা ভাড়া বাড়াইবার কথা বলিয়া আসিতেছেন। তবে কি হারে বাড়ান হইবে, তাহা লইয়া ট্যাক্সি মালিকদের দুইটি ইউনিয়নের মধ্যে মতভেদ ছিল। সরকারও এতদিন ভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাবে গররাজী ছিলেন। কিন্তু অধুনা নাকি সরকার নীতিগতভাবে এই প্রস্তাব মানিয়া লইয়াছেন। ট্যাক্সি মালিকদের বক্তব্য একই— পেট্রোলের দাম বাড়িয়াছে, সরঞ্জামের দাম বাড়িয়াছে, ট্যাক্সি বাড়িয়াছে অতএব ভাড়া না বাড়াইলে তাঁহাদের লোকসান হইতেছে। ভাড়া বৃদ্ধি লইয়া ট্যাক্সি মালিকেরা এখন আন্দোলনে নামার কথা চিন্তা করিতেছেন। তাঁহাদের একটি যুক্ত কর্মপরিষদ গঠিত হইয়াছে।

মঙ্গলবার, ২৭ শ্রাবণ, ১৩৭০ (২২ শ্রাবণ, ১৮৮৫ শক) TUESDAY, AUGUST 13, 1963
• বাংলা টাইপ মেশিনের ‘সুরেশ’ নামকরণের প্রস্তাব: সোমবার আনন্দবাজার পত্রিকা ভবনে আনন্দবাজার পত্রিকা, হিন্দুস্থান স্ট্যান্ডার্ড এবং দেশ পত্রিকার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সুরেশচন্দ্র মজুমদারের নবম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে অনুষ্ঠিত স্মৃতিসভায় বাংলা টাইপরাইটিং মেশিনের “সুরেশ” নামকরণের অনুরোধ জানাইয়া এক প্রস্তাব গৃহীত হয়। প্রস্তাবে বলা হয়, সুরেশচন্দ্রই প্রথমে টাইপরাইটিং মেসিন প্রস্তুতের কাজ হাতে লন এবং উহা সাফল্যমণ্ডিত করেন। বিভিন্ন বক্তা দেশের স্বাধীনতা আন্দোলন, বাংলা সংবাদপত্রের মান উন্নয়ন ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা, বাংলা লাইনোটাইপ সৃষ্টি প্রভৃতি ক্ষেত্রে সুরেশচন্দ্রের অতুলনীয় কর্মপ্রতিষ্ঠা ও বৈপ্লবিক অবদানের উল্লেখ করিয়া তাঁহার পুণ্যস্মৃতির উদ্দেশে অকুন্ঠ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। প্রায় সকল বক্তাই বিশেষভাবে উল্লেখ করেন যে, সুরেশচন্দ্রের অন্যতম কীর্তি আনন্দবাজার পত্রিকা আজ জাতীয় সংস্থায় পরিণত হইয়াছে। পশ্চিমবঙ্গের সেচমন্ত্রী শ্রীঅজয়কুমার মুখোপাধ্যায় অনুষ্ঠানে পৌর্রহিত্য করেন। উল্লিখিত প্রস্তাব উত্থাপন করেন শ্রীবীরেন্দ্রচন্দ্র বসু, এবং ডাঃ জে এন মৈত্র উহা সমর্থন করেন। সভার সূচনায় সভাপতি সুরেশচন্দ্রের প্রতিকৃতি মাল্যভূষিত করেন। ইন্ডিয়া টুমরো, বেঙ্গল প্রিন্টার্স অ্যাসোসিয়েশন, ইম্পিরিয়াল আর্ট কটেজ, সুলেখা ওয়ার্কস, দে’জ মেডিক্যাল স্টোর্স, ডি এন বসুর হোসিয়ারী, গ্লোব নার্সারী, রানী ঝাঁসী বাহিনী প্রভৃতি সংস্থার পক্ষ হইতে মাল্যার্পণ করা হয়।

মঙ্গলবার, ২৭ শ্রাবণ, ১৩৭০ (২২ শ্রাবণ, ১৮৮৫ শক) TUESDAY, AUGUST 13, 1963
• কলিকাতা সন্দর্শনে জোড়া ভি-আই-পি: সোমবার গোধূলি লগ্নে কলিকাতায় দুইটি ‘ভি-আই-পি’-র শুভাগমন হইয়াছে। মধ্যপ্রদেশের গোবিন্দগড় দুর্গ হইতে আগত এই অতিথিদের জন্য ছায়াসুনিবিড় আলিপুরে আরামপদ ব্যবস্থা হইয়াছে। আপাতত ইহারা কলিকাতায় বসবাস করিবেন। অতিথিদের নাম? এখনও জানা যায় নাই। ধাম— ইতিপূর্বে রেওয়া; ভবিষ্যতে সাগরকূলে ফ্রেজারগঞ্জে। বংশ— রেওয়ার প্রখ্যাত শ্বেত ব্যাঘ্র কুল। দুইটিই পুরুষ, চলিত ভাষার ‘মন্দা’। বয়স— মাত্র তিন বছর। রূপ— সাদাটে গায়ে পাঁশুটে ডোরা; চক্ষুতারকা নীল; দৈর্ঘ ৯ ফুট ৬ ইঞ্চি। মেজাজ— খোশ। খাদ্য— শুধু ভোড়ার মাংস, দৈনিক ১০ কিলো।
রেওয়া থেকে আগত সাদা বাঘ।
আগামী বুধবার সকালে রাজ্যপাল শ্রীমতী পদ্মজা নাইডু এই নাম-না-জানা অতিথিদের নামকরণ করিবেন। পরদিন বৃহস্পতিবার ১৫ই আগস্ট হইতে জনসাধারণ চিড়িয়াখানায় উহাদের ‘দর্শন’ পাইবে; দক্ষিণা মাত্র এক সিকি অথবা ২৫ নয়া পয়সা। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পর্যটন বিভাগ ৯৬ হাজার টাকা দিয়া এই দুইটি সাদা বাঘ কিনিয়াছেন। পর্যটকদের মনোরঞ্জনের জন্য উহাদের ফ্রেজারগঞ্জে রাখার এক পরিকল্পনা হইয়াছে। ঐ দুইজনের এক ‘সঙ্গিনীও’ শীঘ্র আসিতেছে; বাঘিনী সম্পর্কে উহাদের ভগিনীও বটে। তবে শ্বেতাঙ্গিণী নয়, পীতবর্ণা।

Wednesday, August 14, 1963, বুধবার, ২৮ শ্রাবণ, ১৩৭৩
• নগরপিতাদের দাবি, তনখা চাই দুইশত: একশত নয়, দেড়শতও নয়, বিধানমণ্ডলীর সদস্যদের সমান ভাতা অর্থাত্ মাসে দুইশত টাকা চাই। মঙ্গলবার কলিকাতা কর্পোরেশনের সভায় মিউনিসিপ্যাল দ্বিতীয় সংশোধন বিল আলোচনাকালে খাস কংগ্রেসী সদস্যদের পক্ষ হইতে পৌরসভার কাউন্সিলারপক্ষের জন্য ঐরূপ ভাতায় দাবি উঠে। রাজ্য সরকার প্রস্তাবিত মূল বিলে পৌরসভার সদস্যদের জন্য মাসিক একশত টাকা ভাতা এবং প্রতি সভায় উপস্থিতির জন্য পৃথক ভাতা সহ মোট অনূর্ধ্ব একশত পঞ্চাশ টাকা ভাতা দিবার বিধান করা হয়। পৌরসভায় ইতিপূর্বে আলোচনাকালে বিরোধী পক্ষ মাসিক ভাতার অঙ্ক বাড়াইয়া দেড়শত টাকা করিবার প্রস্তাব করেন। মঙ্গলবার ঐ বিল সম্পর্কে দ্বিতীয় দফায় শেষ দিনের আলোচনার সময় কংগ্রেস দল হইতে উহার উপর আরও পঞ্চাশ টাকা চাপাইয়া বলা হয় যে, কাউন্সিলারদের ভাতা দিতে হইলে বিধানমণ্ডলীর সদস্যদের সমান ভাতা মঞ্জুর করিতে হইবে। বর্তমান বিধানমণ্ডলীর সদস্যগণ মাসিক দুইশত টাকা ভাতা এবং অধিবেশন চলাকালে খাওয়া থাকা ও রাহা খরচ মিলাইয়া সাড়ে সতের টাকা ভাতা পাইয়া থাকেন। কংগ্রেস পক্ষের শ্রীবঙ্কিম দত্ত ঐ প্রস্তাবটি করেন। বলাবাহুল্য প্রস্তাবটি সভায় গৃহীতও হয়।

Thursday, August 15, 1963, বৃহস্পতিবার, ২৯ শ্রাবণ, ১৩৭৩
• মোহনবাগান ১১ বার লীগ জয়ী: বুধবার দর্শক-সমাকীর্ণ নিজেদের মাঠে মোহনবাগান ক্লাব লীগের শেষ খেলায় মহমেডান স্পোর্টিং ক্লাবকে ৩-১ গোলে সহজেই পরাজিত করিয়া পুনরায় লীগ বিজয়ীর সন্মান অর্জন করিয়াছে। গতবারের লীগ চ্যাম্পিয়ন মোহনবাগানের ইহা উপর্যুপরি দ্বিতীয় এবং মোট একাদশ লীগ বিজয়। বিশাল জনতা বিপুল উত্সাহ-উদ্দীপনা এবং দর্শকদের চাপা উদ্বেগের মধ্যে খেলা আরম্ভ হইবার পর ৬ মিনিটের সময় মোহনবাগান প্রথম গোল করিবার সঙ্গে সঙ্গে গগনভেদী আনন্দরোলে আকাশ বাতাস মুখরিত হইয়া উঠে। কিন্তু বিশ্রামের ৬ মিনিট পূর্বে মহমেডান দল গোলটি পরিশোধ করিতেই মাঠ একেবারে ঝিমাইয়া পড়ে। দ্বিতীয়ার্ধের ৬ মিনিট ও ১১ মিনিটের সময় মোহনবাগান উপর্যুপরি আরও দুইটি গোল করিলে বাজির আওয়াজ, রং-বেরংয়ের বেলুনের বাহার, পতাকার শোভা ও বাদ্যের সম্ভারে মাঠে স্বতঃস্ফুর্ত আনন্দের বন্যা বহিয়া যায়। খেলা শেষ হইবার সঙ্গে সঙ্গে চারিদিক হইতে ঝাঁকে ঝাঁকে দর্শক মাঠের মধ্যে ছুটিয়া আসিয়া মোহনবাগানের শ্রান্ত-ক্লান্ত বিজয়ী খেলোয়াড়দের জড়াইয়া ধরে, ফুলের মালায় মালায় মাঠ ভরিয়া যায়। খেলোয়াড়দের নাগালের মধ্যে না পাইয়া দূর হইতেই অনেকে ফুলের মালা খেলোয়াড়দের উদ্দেশে ছুঁড়িয়া মারিতে থাকে। ক্যামেরাম্যানদের ফটো-বাল্বের আলোয় মাঝে মাঝে বিজলী খেলিয়া যায়। এখানে ওখানে বুড়ো-খোকাদের নৃত্য চলিতে থাকে। ভালবাসার অত্যাচারে খেলোয়াড়রা অতিষ্ঠ হইয়া ওঠেন। পুলিশের সাহায়্যে অতিকষ্টে দর্শকদের মধ্য দিয়া কোনভাবে একটু পথ করিয়া খেলোয়াড়দের ক্লাব-তাঁবুতে লইয়া আসা হয।

Thursday, August 15, 1963, বৃহস্পতিবার, ২৯ শ্রাবণ, ১৩৭৩
• পৌরসভার প্রশাসনিক পদে মহিলা নিয়োগ: কলিকাতার পৌরসভাও সম্ভবত এইবার বিংশ শতকে আসিয়া পৌঁছিল। পৌরসভার প্রশাসনিক পদে অতঃপর মহিলাদেরও সমান অধিকার থাকিবে। এতদিন পর্যন্ত এই সব পদে পুরুষদেরই একচেটিয়া অধিকার ছিল। মহিলাদের পক্ষে এই সব প্রশাসনিক পদ গ্রহণে কোন বিধিগত নিষেধ ছিল না, তবে একটা অলিখিত কিন্তু অলঙ্ঘনীয় রীতি ছিল। রীতি অনুযায়ী শিক্ষিকা, ধাত্রী, টিকা দান, এবং দূরভাষিণী এই কয়টি ছাড়া অন্য কোন পদে মহিলাদের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ ছিল। পৌরসভার অফিসারদের কেউ কেউ নাকি এই নিরঙ্কুশ রাজত্বেরই পক্ষপাতী ছিলেন এবং তাহাদের বিরোধিতার কারণেই এতদিন — ঘটান সম্ভব হয় নাই। ময়লা কাগজের ঝুড়িতেই মেয়েদের আর্জিগুলির সঙ্গতি হইত। বর্তমান বছরে পৌরসভার এক শত শূন্য পদের জন্য তিন হাজার আর্জি পড়িয়াছে। তদ্মধ্যে এক শতটি চাকুরি-প্রার্থিনীদের নিকট হইতে। বুধবার পৌরসভার কমিশনার শ্রীসুনীলবরণ রায় জানান, একমাত্র যোগ্যতার মানদণ্ডেই এইবার কর্মী নির্বাচিত হইবে।

Saturday, August 17, 1963, শনিবার, ৩১ শ্রাবণ, ১৩৭৩ (২৬ শ্রাবণ, ১৮৮৫ শক)
• কলিকাতা ও শহরতলীতে স্বাধীনতা উত্সব পালন: বৃহস্পতিবার, ১৫ই অগস্ট সারা ভারতের সঙ্গে কলিকাতা, হাওড়া ও শহরতলী এলাকায় স্বাধীনতার ষোড়শ বার্ষিকী উদ্যাপিত হয়। ভারত ভূখণ্ডে চীনা আক্রমণের পর এই প্রথম স্বাধীনতা বার্ষিকী অনুষ্ঠিত হইল। পনেরোই আগস্টের পূণ্য দিবস উদ্যাপনকল্পে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন সভা সমিতি ও সমাবেশ জনতার কন্ঠে এই মহান সঙ্কল্পই ধ্বনিত হয় যে শেষ রক্তবিন্দু দিয়া ভারতের স্বাধীনতা রক্ষা করিব, এজন্য যে কোনও ত্যাগ বরণে কুন্ঠিত হইব না। এইদিন প্রভাত ফেরী, জাতীয় পতাকা উত্তোলন শহীদ বেদীতে মালাদান, সভা ও শোভাযাত্রা ও পার্কে জনসমাবেশ, নগরীর অগণিত গৃহ শীর্ষে জাতীয় পতাকার সমারোহ প্রভৃতি স্বাধীনতা উত্সবের কার্যসূচীর অন্তর্ভুক্ত ছিল। তবে চীনা আক্রমণজনিত দেশের জরূরী অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সকল প্রকার আড়ম্বর ও জাঁকজমক বর্জন করা হয়। সরকারী ভবনগুলিতে কোন আলোকসজ্জার ব্যবস্থা হয় নাই। প্রাতে বারাকপুর গান্ধীঘাটে জ্ঞাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতি বেদীমূলে প্রার্থনানুষ্ঠানের মাধ্যমে স্বাধীনতা দিবসের সূচনা হয়। বিকালে মনুমেন্ট ময়দানে পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস আয়োজিত এরক জনসভায় ভাষণ প্রসঙ্গে মূখ্যমন্ত্রী শ্রীপ্রফুল্লচন্দ্র সেন এবং ত্রিশক্তি চুক্তি এবং উহার সমর্থনে ভারত সহ অন্যান্য রাষ্ট্রের সহযোগীতার কথা উল্লেখ করিয়া বলেন দূর্ভিক্ষপীড়িত এবং কৃষি ও শিল্পে অনগ্রসর চীন দেশের কল্যাণকে উপেক্ষা করিয়া সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করিয়া চলিয়াছে। চীনা আক্রমণ হটাইয়া দিবার জন্য ভারত সামরিক ব্যয় দ্বিগুণ বাড়াইয়াছে। এজন্য করের বোঝাও বাড়িয়াছে। তিনি আশা করেন, ভারতের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য দেশবাসী সর্বস্ব দিবার জন্য প্রস্তুত থাকিবেন।

Tuesday, August 20, 1963, মঙ্গলবার, ৩ ভাদ্র ১৩৭০( ২৯ শ্রাবণ, ১৮৮৫ শক)
• আলিপুর পশুশালায় মর্মান্তিক ঘটনা: আলিপুর চিড়িয়াখানার শান্ত ও ‘বাধ্য’ হাতী ফুলমালা সোমবার সন্ধ্যায় হঠাত্ ক্ষেপিয়া গিয়া বৃদ্ধ মাহুত ফরমান মিঞাকে পিষিয়া মারিয়া ফেলে। চিড়িয়াখানার ইতিহাসে এ ধরনের শোচনীয় মৃত্যু এই প্রথম। দর্শকদের হাওয়ায় চড়াইয়া ঘুরাইবার পর ফুলমালা নামে ঐ মাদী হাতীটিকে যখন সন্ধ্যার দিকে ছাড়িয়া দেওয়া হয়, তখন সে হঠাত নিজের বহুদিনের পরিচিত মাহুত ফরমান মিঞাকে আক্রমণ করে এবং শেষ পর্যন্ত শুঁড় ও পায়ের চাপে পিষিয়া দেয়। চিড়িয়াখানার ডাক্তার আসিয়া দেখেন, ফরমান মিঞার দেহ ক্ষতবিক্ষত বুকের পাঁজর চূর্ণবিচূর্ণ। ঘটনাস্থলেই তাহার মৃত্যু ঘটে। ঘটনার পর ফুলমালা আর কাহাকেও আক্রমণ করে নাই বটে: কিন্তু মধ্যরাত্র পর্যন্ত চিড়িয়াখানার কেহই কাছে গিয়া উহাকে বাঁধিতে সাহস করে নাই। আজ সকাল হইতে আবার সেই চেষ্টা সুরু হইবে। তাই সাবধানতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে কর্তৃপক্ষ আজ(মঙ্গলবার) সারাদিন চিড়িয়াখানা দর্শকদের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত লইয়াছেন বলিয়া জানা যায়।

আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত এই সকল সংবাদের বানান ও ভাষা অপরিবর্তিত।
 
 


 

Content on this page requires a newer version of Adobe Flash Player.

Get Adobe Flash player

 
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.