|
থানায় নিষ্ঠুর প্রহারের গুরুতর অভিযোগ
প্রেসিডেন্সী ম্যাজিস্ট্রেট শ্রী কে সি মুখার্জী কর্তৃক বিচারবিভাগীয় তদন্তের পর ও তাঁহার সুপারিশ অনুসারে মঙ্গলবার উত্তর বিভাগের অতিরিক্ত চীফ প্রেসিডেন্সী ম্যাজিস্ট্রেট শ্রী এইচ এন সেন বড়বাজার তানার ভিতরে জ্ঞানেশ্বর সিং (২২) নামে রতন সরকার গার্ডের লেনের এক কারখানার কর্মচারীকে নিষ্ঠুরভাবে প্রহারের অভিযোগে বড়বাজার থানার সাব-ইন্সপেক্টার গাঙ্গুলী ও দুইজন কনস্টেবলের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩২৫ ধারা মতে শমন জারী করিয়াছেন।
বৃটিশ আমলে পুলিস মহলে যে ভয়ঙ্কর নির্যাতন “কচুয়া ধোলাই” নামে পরিচিত ছিল, তাহাই আসামীর বিরুদ্ধে প্রয়োগ করার অভিযোগ করা হইয়াছে।
অভিযোগকারী জ্ঞানেশ্বর সিং-এর পক্ষে এডভোকেট শ্রীসত্যেন বসু অতিরিক্ত চীফ প্রেসিডেন্সী ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে মূল দরখাস্ত পেশ করিয়াছিলেন। ম্যাজিস্ট্রেট বিচারবিভাগীয় তদন্তের জন্য উহা প্রেসিডেন্সী ম্যাজিস্ট্রেট শ্রী কে সি মুখার্জির নিকট দেন।
দরখাস্তে বলা হয়, একটি চুরির সহিত জড়িত থাকার সন্দেহ করিয়া আসামীরা গত ৮ই অক্টোবর অভিযোগকারী জ্ঞানেশ্বর সিংকে থানায় ডাকিয়া লইয়া গিয়াছিল। তাহাকে বড়বাজার থানার একটি ঘরে লইয়া যাইয়া উপরোক্ত আসামী তিনজন এমন নিষ্ঠুরভাবে প্রহার করে যে, সে অজ্ঞান হইয়া পড়ে। অভিযোগকারীকে থানায় খুঁজিয়া পাওয়া যায় না অথবা তাহাকে আদালতেও হাজির করা হয় নাই। পরে তাহার আত্মীস্বজনরা মেয়ো হাসপাতালে তাহার সন্ধান পায়। অভিযোগ করা হয় যে, চুরির সহিত নিজেকে জড়িত করিয়া স্বীকারোক্তি করার জন্য অভিযোগকারীর উপর উপর্যুপরি দুই দিন নির্যাতন চালান হয়। তাহার অবস্থা সঙ্কটজনক দেখিয়া পুলিস তাহাকে মেয়ো হাসপাতালে ভর্তি করে। ১০ই অক্টোবর হইতে ২০শে অক্টোবর পর্যন্ত সে হাসপাতালে চিকিৎসিত হয়।
বিচার বিভাগীয় তদন্ত
বিচার বিভাগীয় তদন্তে জ্ঞানেশ্বর সিং তাহার করুণ কাহিনী বিবৃত করিয়া বলে যে সে একটি কারখানায় কাজ করে। গত ৭ই অক্টোবর কারখানা বন্ধ থাকায় সে বিকালে বড়বাজারে ফুটপাথে যখন ফিরি করিতেছিল, তখন পুলিশ তাহাকে থানায় লইয়া যায় এবং গালিগালাজ করিয়া লক-আপে পুরিয়া দেয়। সন্ধ্যায় তাহাকে লক-আপ হইতে বাহির করিয়া আনিয়া একটি চুরি সম্বন্ধে জিজ্ঞাসাবাদ করিতে থাকে। সে এ সম্বন্ধে কিছুই জানে না বলিলে সাব-ইন্সেপেক্টর গাঙ্গুলী ও দুইজন কনস্টেবল তাহাকে প্রহার করে। ইহার পর একটি দড়ি দ্বারা তাহার দুই-পা বাঁধিয়া মাথা নীচে ও পা উপরে করিয়া ঘরের ছাদের কড়ির সঙ্গে ঐ একই দড়ি বাঁধিয়া তাহাকে ঝুলাইয়া দেওয়া হয় এবং ঐ অবস্থায় পুলিসরা লাঠি দিয়া তাহাকে প্রহার করে। তাহার পর আবার তাহাকে লক-আপে পাঠাইয়া দেওয়া হয়।
পরদিন সকালে আবার তাহাকে লক-আপ হইতে আনিয়া পুলিসরা তাহাকে ঘুষি ও লাথি মারে ও লাঠি দ্বারা পিটায়। রাত্রে আবার তাহাকে জেরা করা হয় এবং এবারেও সে চুরু সম্বন্ধে কিছুই জানে না বলিয়া জানায়। তখন এমন নির্দয়ভাবে তাহাকে প্রহার করা হইতে থাকে যে সে অজ্ঞান হইয়া পড়ে। সে জ্ঞান ফিরিয়া পাইয়া নিজেকে মেয়ো হাসপাতালে দেখিতে পায়। জ্ঞানেশ্বর বলে যে ২০দিন হাসপাতালে থাকার পর ৩০শে অক্টোবর সে ছাড়া পায় এবং এখনও চিকিৎসাধীন রহিয়াছে।
মেয়ো হাসপাতালে ডাঃ সুধাময় মুখার্জি সাক্ষ্যে বলেন যে, ১০ই অক্টোবর শেষ রাত্রি সাড়ে ৪টার সময় বড়বাজার থানায় দুইজন কনস্টেবল জলেশ্বর সিং নামক এক ব্যক্তিকে হাসপাতালে ভর্তি করে। ডাক্তার জ্ঞানেশ্বর সিংকে সনাক্ত করিয়া বলেন যে, এই মেডিকেল সার্টিফিকেটে (সনাক্তকরণ) রোগীকে ‘জলেশ্বর সিং’ নামে অভিহিত করা হইয়াছে। ইহা তিনি বড়বাজার থানায় পাঠান। ডাক্তার সাক্ষ্যে বলেন যে, রোগী সর্বক্ষণ যন্ত্রণায় চিৎকার করিতেছিল। তিনি তাহাকে পরীক্ষা করিয়া তাহার দেহে চারটি আঘাতের চিহ্ন দেখিতে পান। তাবার বাঁ পায়ের গোড়ালির গ্রন্থি মচকান ও অস্থি স্থানচ্যুত ছিল। তাহার পশ্চাৎদেশে ও সর্বাঙ্গে চাবুকের চিহ্নস্বরূপ কাটা দাগ ছিল। তাহার মাথায়ও একটি স্থান ফুলিয়া উঠিয়াছিল। তাহার জ্বর হয়, দাঁড়াইবার ক্ষমতা ছিল না এবং পেটেও বেদনা ছিল।
বিচার বিভাগীয় তদন্তের রিপোর্ট পাইবার পর অতিরিক্ত চীফ প্রেসিডেন্সী ম্যাজিস্ট্রেট পুলিস কর্মচারী তিনজনের প্রতি সমন জারী করেন। সাব-ইন্সপেক্টর গাঙ্গুলীর প্রতি পুলিস আইনের ১৩/সি ধারা অনুসারেও সমন জারী করা হইয়াছে।
শুনানী ৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত মুলতুবী আছে।
পুলিসের অভিযোগ
পুলিস অভিযোগ করিয়াছে যে, যোগেশ্বর সিং (প্রহৃত ব্যক্তি) ও অপর ৯জনকে গত ৫ই-৬ই অক্টোবর রাত্রে বড়বাজার এলাকার একটি গুদাম হইতে প্রায় ১১ হাজার টাকা মূল্যের ৫ গাঁইট কাপড় চুরি সম্পর্কে গ্রেপ্তার করা হয়। যোগেশ্বর সিং ও অপর এক ব্যক্তি পুলিস পাহারায় মেয়ো হাসপাতালে থাকায় তাহাদিগকে অন্যান্য আসামীদের সহিত আদালতে হাজির করা যায় নাই। আরও তদন্ত সাপেক্ষে আদালত তাহাদের প্রত্যেককে ১৫০০টাকার জামিনে মুক্তি দানের আদেশ দেন। অতঃপর প্রহৃত যুবককে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়।
জাল সাবান তৈয়ারীর অভিযোগ
আলিপুরে অতিরিক্ত দায়রা জজ শ্রী এন সি গাঙ্গুলী কর্তৃক আসামী ফরিয়াদী শেখ মহম্মদ রসিদকে মুক্তিদানের আদেশের বিরুদ্ধে হিন্দুস্তান লেভার লিঃ-র বিভূতিভূষণ দাশগুপ্ত কলিকাতা হাইকোর্টে আপীল করেন। বিচারপতি শ্রী পি বি মুখার্জি ও বিচারপতি শ্রী এন কে সেন আপীল গ্রহণ করিয়াছেন। মামলার বিবরণে বলা হইয়াছে যে, জাল বলিয়া কথিত সানলাইটে সাবান বিক্রয়ের জন্য পুলিশ গৌরীপদ কুণ্ডু নামক এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করিয়াছিল এবং তাহার জবানবন্দী অনুসারে একটি বাড়ি তল্লাসী করে। ঐ বাড়িতে জাল সাবান ও অন্যান্য আপত্তিকর জিনিস তৈয়ারীর জন্য একটি কারখানায় সন্ধান পাওয়া যায়। রসিদ ঐ কারখানার মালিক ছিল বলিয়া অভিযোগ করা হয়। কারখানার বাড়িটির মালিক রসিদ এবং তাহার ও তাহার ভাই-এর নামে ট্রেড লাইসেন্স ও হেলথ লাইসেন্স ছিল। আসামী জাল সানলাইট সাবান ও লাইফবয় সাবান তৈয়ারী করিতেছেএই অভিযোগে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৮২, ৪৮৩, ৪৮৫ ও ৪৮৬ ধারা অনুসারে এবং ভারতীয় পণ্য আইনের ৬ ও ৭ দারা অনুসারে তাহাকে মামলা-সোপার্দ করা হয়। আসামী নিজেকে নির্দোষ বলে এবং আত্মপক্ষ সমর্থনে যুক্তি দেখায় যে সে কারখানার মালিক ছিল না। আসামী বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ডে এবং অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হয়। আসামী আপীল করিলে অতিরিক্ত দায়রা জজ তাহাকে মুক্তি দেন।
আসামী জাল লাইফবয় সাবান প্রস্তুত করিতেছে, এই অভিযোগেও বিচারপতিদ্বয় আর একটি আপীল গ্রহণ করেন।
|
|